Wednesday 11 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মাকে হত্যার অভিযোগে কারাবন্দি বাবার মুক্তি চান মেডিকেলপড়ুয়া মেয়ে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৬ এপ্রিল ২০২২ ১৩:৪৯

রাজবাড়ী: ‘আমার পুরো পৃথিবী ছিল আমার আম্মু। আম্মুর সঙ্গে আমি প্রতিদিন ফোনে কয়েকবার করে কথা বলতাম। আমার আব্বু ও আম্মুর মধ্যে অনেক সুসম্পর্ক ছিল। রান্না থেকে শুরু করে বাড়ির বিভিন্ন কাজে আব্বু আমার আম্মুকে সাহায্য করত বরং আমার মামা-খালারা লোভী বলে তাদের সঙ্গে আম্মুর সম্পর্ক ভালো ছিল না। আমার আব্বুকে যে অভিযোগে মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে, সে অভিযোগের কিঞ্চিৎও যদি সত্যি হতো, তা হলে আমি নিজেই আমার আব্বুর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতাম।’

স্ত্রীকে আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলায় কারাগারে বন্দি রাজবাড়ী সদর উপজেলার কোলা সদর উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরহাদ বিশ্বাসের মেডিকেল কলেজপড়ুয়া মেয়ে মাইশা ফারজানা অবনী এভাবেই সাংবাদিকদের কাছে কথাগুলো বলেন।

ফরিদপুর ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজের ছাত্রী মাইশা ফারজানা অবনী বলেন, ‘পারিবারিক কিছু বিষয় নিয়ে গত ৮ এপ্রিল দিবাগত রাত ১০টার দিকে আমার আম্মু অভিমান করে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেন। তখন আব্বু বাড়িতে ছিল না। আমার মামা ও খালারা আমার আব্বুর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে তাকে জেলে পাঠিয়েছে।’

মাইশা বলেন, ‘আমি নিজে মেডিকেলের শিক্ষার্থী। পুলিশের উপস্থিতিতে আমি আমার আম্মুর সুরতহাল করেছি। আমার আম্মু আত্মহত্যা করেছে। আমার আম্মু পৃথিবী থেকে চলে যাওয়াতে আমার পৃথিবী অন্ধকার হয়ে গেছে। তার ওপর আমার মামা ও খালারা আমার আব্বুকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়ে আমাকে ও আমার ছোটভাইকে আরও হয়রানি করছে। আমরা মিথ্যা মামলা থেকে আমাদের আব্বুর নিঃশর্ত মুক্তি চাই।’

ফরহাদ বিশ্বাসের ছেলে অর্ণব বলেন, ‘আমি ও বাবা বাড়িতে ইফতার করে বাইরে চলে যাই। রাতে আমার বোন আমাকে ফোন করে বলে যে আম্মু ওর ফোন ধরছে না। তখন আমি বাইরে থেকে বাড়ি এসে আম্মুর ঘরের দরজা বন্ধ দেখে আম্মুকে ডাকাডাকি করি। অনেক ডাকাডাকির পরও আম্মু দরজা না খোলায় আমি জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখি আম্মু ফ্যানের সাথে ঝুলছে। সেই সময় আমাদের বাড়ির পাশের মসজিদে তারাবিহ নামাজ পড়ে মুসল্লিরা বাড়ি ফিরছিলেন। আমার চিৎকারে মুসল্লিরা ছুটে আসেন। তাদের সহায়তায় ফ্যান থেকে আম্মুর লাশ নিচে নামানো হয়। তার পর আব্বুকে ফোন করা হলে তিনি দ্রুত বাড়িতে আসেন।’

অর্ণব আরও বলেন, ‘রাতে যখন আমাদের বাড়িতে পুলিশ আসে, তখন আমার খালা লিমা আমাকে ডাক দিয়ে ফাঁকে নিয়ে যায়। সেই সময় সে আমাকে বলে আমি যেন পুলিশের কাছে বলি যে, আমার আব্বু আমার আম্মুকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেছে। তখন আমি আম্মুর জন্য অনেক কান্না করছিলাম। আমি খালাকে বলি যে ঠিক আছে আপনি যা বলেন আমি তাই বলব। পরে পুলিশ আমাকে জিজ্ঞাসা করলে আমি আমার খালার শিখিয়ে দেওয়া মিথ্যা কথা না বলে আমি যেভাবে আম্মুর লাশ ঝুলতে দেখেছি সেসব সত্যি কথা বলি। এর পর থেকেই আমার তিন খালা ও মামারা আমার ওপর ক্ষুব্ধ হয়। শুধু তাই নয়, তারা আমার আব্বুর সঙ্গে আমাকেও মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করে।’

কোলা সদর উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক আব্দুল করিম সরদার বলেন, ‘এ স্কুলটি ফরহাদ বিশ্বাসের বাবার প্রতিষ্ঠিত। ১৯৯৫ সালে এই স্কুলে ফরহাদ বিশ্বাসের চাকরি হয়। ২০১২ সালে তিনি প্রধান শিক্ষক হন। একজন আদর্শ শিক্ষককে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং তার নিঃশর্ত মুক্তি চাই।’

ফরহাদ বিশ্বাসের প্রতিবেশী মূলঘর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওহিদুজ্জামান বলেন, ‘ফরহাদ বিশ্বাসের স্ত্রী পূরবী ইসলাম খুব জেদি প্রকৃতির মানুষ ছিল। কারণে-অকারণে সে তার স্বামীকে সন্দেহ করত। ফরহাদ বিশ্বাস সব কিছু আমার কাছে খুলে বলত। এ নিয়ে আমি কয়েকবার তাদের মধ্যে সমঝোতা করে দিয়েছি। তবে সেগুলো কোনো পরকীয়ার বিষয় ছিল না। তার স্ত্রীর মৃত্যুর পর পূরবীর বোনেরা ফরহাদ বিশ্বাসের সঙ্গে অন্য শিক্ষিকার যে পরকীয়ার অভিযোগ উঠিয়েছেন সেটা অসম্ভব, মিথ্যা।’

রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘পূরবী ইসলামের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এখনও আমরা হাতে পাইনি। রিপোর্ট হাতে পেলে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, গত ৯ এপ্রিল ভোরে রাজবাড়ী সদর উপজেলার কোলা গ্রামে স্বামীর বাড়ি থেকে কোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পূরবী ইসলামের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার মৃত্যু নিয়ে উভয় পরিবারে ভিন্নমত দেখা দেয়। পূরবীর ছেলে ও মেয়েসহ স্বামীর পরিবারের লোকজন বলছেন, তিনি অভিমান করে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন।

কিন্তু পূরবীর তিন বোনের দাবি— পরকীয়ায় বাধা দেওয়ায় তাদের বোনকে নির্যাতনের পর গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করেছে বোনের স্বামী ফরহাদ বিশ্বাস ও ছেলে অর্ণব।

অন্যদিকে, পূরবীর ভাই মেহেদী হাসান আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে বোনের স্বামী কোলা সদর উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরহাদ বিশ্বাসকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন। মামলায় ফরহাদ বিশ্বাস পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে জেলা কারাগারে রয়েছেন।

সারাবাংলা/এমও

ইউনিয়ন পরিষদ কারাবন্দি মাকে হত্যা মেডিকেলপড়ুয়া


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর