‘তেঁতুলতলায় বরাদ্দ বিধি মেনে, শিশুদের জন্য কলাবাগান মাঠ আছে’
২৬ এপ্রিল ২০২২ ১৭:৫৯
ঢাকা: রাজধানীর কলাবাগান লেকসার্কেস এলাকার তেঁতুলতলা মাঠটি সব ধরনের বিধি মেনেই থানা ভবন নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। স্থানীয়রাসহ বিভিন্ন মহল থেকে এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে জায়গাটিকে শিশুদের খেলা এবং সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য ছেড়ে দেওয়ার দাবি উঠলেও ডিএমপি বলছে, পাশেই কলাবাগান মাঠ রয়েছে। সেখানে শিশুদের খেলাধুলাসহ সামাজিক অনুষ্ঠানের সুযোগ রয়েছে। শিশুদের জন্য খেলার মাঠের ব্যবস্থা করার কোনো দায়িত্বও তাদের নয়।
মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার ফারুক হোসেন এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ডিএমপি কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার জমিতে বেআইনিভাবে থানা ভবন নির্মাণ করছে না। পরে ডিএমপির গণমাধ্যম শাখা থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিও গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে।
ডিএমপি বলছে, তেঁতুলতলা মাঠে জনস্বার্থে এবং দেশের প্রচলিত আইন মেনে বরাদ্দ দেওয়া জমিতেই নির্মাণ হচ্ছে কলাবাগান থানা। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন ধানমন্ডি মৌজার ০.২০ একর এই জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন, ২০১৭-এর সব বিধি-বিধান অনুসরণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন-
- পুলিশ কেন আন্দোলনের অধিকার কেড়ে নেবে?
- তেঁতুলতলা মাঠ উন্মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে
- খেলার জন্য মাঠ চাই— তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষায় মানববন্ধন
- শিশুদের খেলার মাঠেই হবে থানার ভবন, ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী
- তেঁতুলতলা মাঠ দখলের প্রতিবাদে কলাবাগানবাসীর সমাবেশ
- তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলন: মা-ছেলেকে ছেড়ে দিল পুলিশ
- তেঁতুলতলা মাঠে থানা ভবন নির্মাণের প্রতিবাদ করায় মা-ছেলে আটক
বরাদ্দ ও জমি অধিগ্রহণের ধাপগুলো তুলে ধরে উপকমিশনার ফারুক হোসেন বলেন, কলাবাগান থানার জন্য জমিটি অধিগ্রহণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রশাসনিক অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সরকারি প্রয়োজন ও জনস্বার্থ বিবেচনায় রাজউকের কাছ থেকে আপত্তি নেই মর্মে ছাড়পত্র পাওয়া গেছে। জায়গাটির প্রস্তাবিত ভূমি ব্যবহার আরবান রেসিডেন্সিয়াল জোন হিসেবে চিহ্নিত হিসেবে নগর উন্নয়নের ছাড়পত্র এবং পরিবেশ অধিদফতরের অনাপত্তিপত্রও পাওয়া গেছে। সেখানে স্থায়ীভাবে কলাবাগান থানা স্থাপনের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর ডিও লেটারও দিয়েছেন। ঢাকা জেলা প্রশাসকও সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে জমি অধিগ্রহণের জন্য সুপারিশসহ ভূমি মন্ত্রণালয়ের মতামত পাঠিয়েছেন।
ডিএমপি বলছে, সরকারের কেন্দ্রীয় ভূমি বরাদ্দ কমিটিতে কলাবাগান থানার জন্য এই ০.২০ একর জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে। জমির ক্ষতিপূরণ মূল্য বাবদ ডিএমপি কমিশনার বরাবর ২৭ কোটি ৫৪ লাখ ৪১ হাজার ৭১০/৯২ টাকার প্রাক্কলন পাঠান ঢাকার জেলা প্রশাসক। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সে টাকার ব্যয় মঞ্জুরি পাওয়া যায়। ঢাকা জেলা প্রশাসককে সেই প্রাক্কলিত টাকা চেকের মাধ্যমে পরিশোধও করা হয়েছে।
যাবতীয় বিধি অনুসরণের পর ডিএমপিকে ওই জমি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ৩১ জানুয়ারি ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা সরেজমিনে ডিএমপিকে জমির দখলভার হস্তান্তর করেন। জমি অধিগ্রহণ ও দখল হস্তান্তর নিয়ে গেজেটও প্রকাশিত হয়েছে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি। সবশেষ গত ২৭ মার্চ জমির নামজারি ও জমাভাগকরণ কার্যক্রম শেষ হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ বলছে, জনস্বার্থে সরকার কলাবাগান থানা নির্মাণের জন্য প্রচলিত আইন মেনে জমি বরাদ্দ দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ডিএমপি কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার জমিতে বেআইনিভাবে থানা ভবন নির্মাণ করছে না। বিকল্প খেলার মাঠের ব্যবস্থা করার বিষয়টিও ডিএমপি’র এখতিয়ারভুক্ত নয়।
শিশুদের খেলার সুযোগ এবং বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমের জন্য তেঁতুলতলা মাঠে থানা ভবন নির্মাণের প্রতিবাদ জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এ প্রসঙ্গে ডিএমপি’র বক্তব্য— প্রস্তাবিত থানার জায়গা তেঁতুলতলা মাঠ থেকে কিছু দূরেই কলাবাগান মাঠ রয়েছে। সেখানে বাচ্চাদের খেলাধুলাসহ সামাজিক অনুষ্ঠানের সুযোগ রয়েছে।
তেঁতুলতলা মাঠে থানা ভবন নির্মাণের প্রতিবাদ অবশ্য চলছে দীর্ঘ দিন ধরেই। মানববন্ধন থেকে শুরু করে বিভিন্ন দফতরে স্মারকলিপি দিয়েছেন স্থানীয়রা। সম্প্রতি ওই মাঠে ভবন স্থাপনের জন্য নির্মাণকাজ শুরুর উদ্যোগ নিলে বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদ জোরালো হয়। নির্মাণকাজ শুরুর সময় বিষয়টি নিয়ে ফেসবুক লাইভ করায় সৈয়দা রত্না ও তার ছেলে প্রিয়াংশুকে পুলিশ আটকও করে। এ নিয়ে অনলাইন-অফলাইনে তীব্র সমালোচনা হলে মধ্যরাতে তাদের ছেড়ে দেয় পুলিশ।
এর মধ্যে সোমবার এএলআরডি, বাপা, বেলা, আসক, ব্লাস্ট, গ্রীন ভয়েস, নিজেরা করি, নাগরিক উদ্যোগ, নারী পক্ষ, বাংলাদেশ উদীচি শিল্প গোষ্ঠী, হিউম্যান রাইট্স সাপোর্ট সোসাইটি ও টিআইবি যৌথভাবে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে জানিয়েছে, থানা স্থাপনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আগ পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। পরে বিকেলে তেঁতুলতলায় এক সমাবেশে অংশ নেন মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি বেলা’র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, স্থপতি ইকবাল হাবীবসহ বিভিন্ন পরিবেশ, মানবাধিকার ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা।
এদিকে, গত ক’দিন ধরে বহুল আলোচিত এই বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গণমাধ্যমকে বলেন, কলাবাগান থানা ভবন স্থাপনের বিকল্প একটি স্থান খুঁজতে বলেছেন সবাইকে। তবে থানা ভবন স্থাপনও জরুরি। পরবর্তী সময়ে আলোচনা করে তেঁতুলতলা মাঠে থানা স্থাপন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর