Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস: পণ্যবাজারে অস্থির সময় সামনে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৮ এপ্রিল ২০২২ ০৩:১৮

ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব সরাসরি পড়েছে পণ্যবাজারে। সামনের দিনগুলোতে এ প্রভাব আরও প্রকট হয়ে উঠবে বলে সতর্ক করে দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির নতুন এক পূর্বাভাসে বলা হয়, ১৯৭০ সালের পর এবার সবচেয়ে বড় সংকটে পড়তে যাচ্ছে বৈশ্বিক পণ্যবাজার।

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে সংঘাতের কারণে বিশ্ববাজারে গ্যাস থেকে শুরু করে গম, তুলার মতো প্রধান প্রধান ভোগ্যপণ্যের দর লাগামহীনভাবে বাড়বে। বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদ পিটার নাগেল বিবিসিকে বলেছেন, ‘বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি বিশাল অর্থনৈতিক ও মানবিক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। সারা বিশ্বে পরিবারগুলোর জীবনযাত্রার মানে প্রভাব পড়ছে। তারা সংকট অনুভব করছেন।’

বিজ্ঞাপন

বিশ্বব্যাংকের এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আমরা বিশেষভাবে দরিদ্র পরিবারগুলো নিয়ে উদ্বিগ্ন, কারণ তারা আয়ের একটি বড় অংশ খাদ্য এবং জ্বালানির জন্য  ব্যয় করে থাকে। তারা মূল্যবৃদ্ধির জন্য বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।’

বিশ্বব্যাংকের মতে, শিগগির জ্বালানির দর ৫০ শতাংশের বেশি বাড়তে পারে। এর প্রভাবে পরিবার এবং ব্যবসায় ব্যয় বাড়বে। সবচেয়ে বেশি বাড়বে ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম। ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে অবশ্য দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু তারপরও ওই সময় ২০২১ সালের তুলনায় জ্বালানির দর ১৫ শতাংশ বেশি থাকবে। এর অর্থ হলো, ২০২০ সালের এপ্রিলের সর্বনিম্ন থেকে এই বছরের মার্চের সর্বোচ্চ পর্যন্ত, অর্থাৎ এই ২৩ মাসে ১৯৭৩ সালের পর তেলের দাম সর্বোচ্চ থাকবে।

রাশিয়া বিশ্বের ১১ শতাংশ জ্বালানি তেল উৎপাদন করে থাকে। দেশটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম জ্বালানি তেল উৎপাদক। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক হামলা চালায় রাশিয়া। এর পর থেকেই রাশিয়ার উপর একের পর এক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করতে থাকে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্ব। রাশিয়ার তেল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়ছে। দুই মাস ধরে রাশিয়া যুদ্ধে লিপ্ত। এই সংঘাতের শুরু থেকেই তেলের বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়। রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞার ফলে অস্থিরতা স্থায়ী রূপ নিচ্ছে। রুশ কোম্পানিগুলোর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় বিভিন্ন দেশে তাদের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এসব কোম্পানি বৈশ্বিক প্রযুক্তিগত যোগাযোগ পরিষেবা থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

বিজ্ঞাপন

রাশিয়া বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের গ্যাসের চাহিদার ৪০ শতাংশ এবং তেলের চাহিদার ২৭ শতাংশ সরবরাহ করে থাকে। তবে ইউরোপের দেশগুলো রাশিয়া থেকে জ্বালানি ক্রয়ের বিকল্প খুঁজতে মরিয়া। জ্বালানির বিকল্প খোঁজার এ প্রচেষ্টার কারণে অন্যান্য সরবরহাকারীদের উপর চাপ বাড়ছে। ইউরোপের দেশগুলোর এমন উদ্যোগ বিশ্ববাজারে জ্বালানির দর বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে।

খাদ্যপণ্যের দর লাগাম ছাড়া
বিশ্বব্যাংকের কমোডিটি আউটলুক সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, বহু খাদ্যপণ্যের ব্যয় অত্যধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পেতে পারে। জাতিসংঘের খাদ্যমূল্য সূচকে ইতিমধ্যে দেখা গেছে, এবার খাদ্যপণ্যের দর গত ৬০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আশঙ্কার ব্যাপার হলো, নিকট ভবিষ্যতে দর আরও বাড়তে পারে।

কমোডিটি আউটলুক অনুযায়ী, গমের দর শিগগিরই ডলারের হিসেবে ৪২.২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য খাদ্যপণ্যের মধ্যে জবের দর বাড়বে ৩৩.৩ শতাংশ, সয়াবিনের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ, অন্যান্য ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে ২৯.৮ শতাংশ, মুরগির দর বাড়বে ৪১.৮ শতাংশ। ইউক্রেন ও রাশিয়া দুটি দেশই বিশ্বে প্রধান খাদ্য রফতানিকারক। এই দুই দেশ যুদ্ধে জড়ানোর ফলে বিশ্বে খাদ্য রফতানিতে সরাসরি প্রভাব পড়েছে।

এসএন্ডপি গ্লোবালের মতে, যুদ্ধের আগে দুই দেশ মিলে সারাবিশ্বে গমের ২৮.৯ শতাংশ যোগান দিত। এছাড়া জেপি মর্গানের মতে, বিশ্বব্যাপী সূর্যমুখীর চাহিদার ৬০ শতাংশ আসত এই দুই দেশ থেকে। উল্লেখ্য যে, বহু প্রক্রিয়াজাত খাবারের মূল উপাদান সূর্যমুখী।

জ্বালানি ও খাদ্যপণ্য ছাড়াও সার, ধাতু এবং খনিজসহ অন্যান্য কাঁচামালের দামও বাড়বে বলে বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে। তবে বিশ্ববাজারে কাঠ, চা ও চালের দাম কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। ব্যাংক অব আমেরিকার ওই সমীক্ষা বলছে, যুদ্ধের কারণে ইউক্রেন থেকে শস্য ও তৈলবীজের চালান ৮০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসের সঙ্গে একমত বাজার বিশ্লেষকরাও। বিশ্বখ্যাত খাদ্য প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠান আর্চার ড্যানিয়েল মিডল্যান্ডের প্রধান নির্বাহী হুয়ান লুসিয়ানো এ ব্যাপারে বলেছেন, সহসাই খাদ্যের দর কমবে এমনটা তিনি বিশ্বাস করেন না।

তবে বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদ নাগেলের মতে, ইউক্রেন ও রাশিয়ার বিকল্প হিসেবে জ্বালানি, খাদ্য ও কাঁচামাল সরবরাহ বাড়াতে পারে বিশ্বের অন্যান্য উৎপাদক দেশগুলো। এতে করে স্বল্পমেয়াদী সংকট মোকাবিলা করা যাবে। তবে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, এ বছর সারের দর ৬৯ শতাংশ বেড়েছে। যার ফলে বিশ্বজুড়ে কৃষকরা সারের ব্যবহার কমাবেন, সঙ্গত কারণেই এর প্রভাব পড়বে খাদ্য উৎপাদনে।

সারাবাংলা/আইই

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

চট্টগ্রামে খালে ভাসছিল অর্ধগলিত লাশ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪:৩৩

বিএসইসি‘র চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:৫১

সম্পর্কিত খবর