Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দুপুরের পর চাপ বেড়েছে পাটুরিয়ায়, ছোট গাড়ির ভোগান্তি বেশি

রিপন আনসারী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৯ এপ্রিল ২০২২ ১৬:৫৭

মানিকগঞ্জ: পাটুরিয়া ফেরি ঘাট। ৫ নম্বর ফেরি ঘাট ছাড়া বাকি চারটি ফেরি ঘাট দুপুর ১২টা পর্যন্ত ছিল কার্যত ফাঁকা। সারি সারি ফেরির কোলাহলে পদ্মা মুখরিত থাকলেও যাত্রীবাহী বাস ও কোচের চাপ ছিল না ঘাটে। তবে দৃশ্যপট পাল্টে যায় দুপুর সাড়ে ১২টার পর থেকে। বড় যানবাহনের বিশাল লম্বা লাইন নিমিষের মধ্যে দখল করে নেয় পাটুরিয়া ফেরি ঘাটটি। তবে মাত্র একটি ঘাট বরাদ্দ থাকায় সকাল থেকেই ছোট গাড়ি, অর্থাৎ প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসগুলোকে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। এদিকে, ট্রাক পারাপার বন্ধ ঘোষণা করা হলেও শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত কয়েকশ পণ্যবাহী ট্রাকের জটলা দেখা গেছে টার্মিনালে।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পাটুরিয়া ঘাট সরজিমনে ঘুরে দেখা গেছে দুই ধরনের চিত্র। সকাল ১০টার দিকে পাটুরিয়া ৩ নম্বর ফেরি ঘাটটি ছিল একেবারেই ফাঁকা। অথচ এই ঘাট দিয়ে বড় বড় যাত্রীবাহী বাসগুলো ফেরি পারাপার হয়ে থাকে। দুই-তিনটি করে যাত্রীবাহী বড় বাসের দেখা মিললেও গাড়ির অপেক্ষায় রো রো অর্থাৎ বড় ফেরিগুলোকে অলস সময় পার করতে দেখা যায় এই সময়। ২ নম্বর ও ৪ নম্বর ফেরি ঘাটেরও অবস্থা ছিল প্রায় একই। কেবল ৫ নম্বর ফেরি ঘাটটি গত রাত থেকেই ব্যস্ত ছিল ব্যক্তিগত ছোট গাড়ি অর্থাৎ প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসের চাপে।

বিজ্ঞাপন

সরজমিনে দেখা যায়, ৫ নম্বর ফেরি ঘাট থেকে নালী বাজার হয়ে প্রায় ছয় কিলোমিটার সড়কে ছোট গাড়ির লম্বা লাইন ছিল সারাদিন। ফলে বাসগুলোকে নির্বিঘ্নে ঘাট পার হতে দেখা গেলেও প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসের যাত্রীদের সকাল থেকেই ঘাট পার হতে অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে দীর্ঘ সময় ধরে।

আরও পড়ুন-

দুপুর ১২টার দিকে ৫ নম্বর ফেরি ঘাটে গিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে কথা হলে তারা দুর্ভোগের বর্ণনা দেন। প্রাইভেট কারে করে পরিবার নিয়ে খুলনা যাচ্ছিলেন বিল্লাস হোসেন। তিনি বলেন, ভোর সাড়ে ৬টায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বাইপাস সড়ক দিয়ে পুলিশ আমাদের সব ছোট গাড়ি পাটুরিয়া ফেরি ঘাটে পাঠাচ্ছে। গ্রামের ভেতর দিয়ে সরু রাস্তায় নানা দুর্ভোগ পেরিয়ে প্রায় ৫ ঘণ্টা পর পাটুরিয়া ৫ নম্বর ফেরি ঘাট থেকে হাফ কিলোমিটার পেছনে আসতে পেরেছি। ছোট ছোট দুই শিশু বাচ্চা নিয়ে ভ্যাপসা গরমে নাভিশ্বাস উঠছে। শুনেছি অন্যসব ঘাট ফাঁকা। কিন্ত আমাদের ছোট গাড়িগুলো এভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখার মানে খুঁজে পেলাম না।

মাইক্রোবাসে পরিবারের ১০ সদস্য নিয়ে যশোর যাচ্ছিলেন সাইফুল মিয়া। টেপড়া থেকে পাটুরিয়া ২০ মিনিটের পথ আসতে সময় লেগেছে সাড়ে তিন ঘণ্টা। তারপর ঘাটে পৌঁছেও অপেক্ষা করতে হয়েছে তাকে। সাইফুল বলেন, এই গরমে এক গাড়িতে এরকম ১০ জন মিলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকা কতটা ভোগান্তির, বলে বোঝাতে পারব না। এখন কোনোমতে ফেরিতে উঠতে পারলেই হয়।

ফরিদপুরের তাহমিনা আহমেদ বলেন, দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে ইদ করতে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি। করোনার কারণে দুই বছর বাড়িতে মা-বাবা ও পরিবারের সঙ্গে ইদ করতে পারিনি। কষ্ট হচ্ছে। তারপরও মা-বাবার কাছে যেতে পারছি, ভোগান্তি হলেও এটুকুই সান্ত্বনা।

এদিকে, দুপুর সাড়ে ১২টার পর থেকে যাত্রীবাহী বাসের চাপ বাড়তে থাকে পাটুরিয়ার ৩, ৪ ও ২ নম্বর ফেরি ঘাটে। বিকেল ৩টা পর্যন্ত ঘাট ছাড়িয়ে বাসের লাইন প্রায় তিন কিলোমিটার ছাড়িয়েছে। প্রতিটি বড় বাসই ঘাটে এসে ফেরি পর্যন্ত পৌঁছাতে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা সময় নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন যাত্রী ও চালকরা।

সোহাগ পরিবহনের নন-এসি গাড়িতে উঠে দেখা গেল, সবাই গরমে বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছেন। বিশেষ করে শিশুদের দুর্ভোগ বেশি। আইরিন আক্তার নামে এক যাত্রীকে দেখা গেল, সন্তানকে পত্রিকার কাগজ দিয়ে বাতাস করছেন। আইরিন বলেন, প্রায় দুই ঘণ্টা গাড়ির ভেতরে বসে আছি। গাড়ি আগে-পিছে নড়ছে না। গরমে বাচ্চা কান্নাকাটি করছে। শুধু আমিই না, গাড়ির প্রতিটি মানুষকেই কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে।

পেছনের সিটে ছিলেন শফিকুল ইসলাম। স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে খুলনা যাচ্ছেন। বলেন, কয়েকদিন হলোই তো অনেক গরম। তাই বাসা থেকে হাত পাখা নিয়ে এসেছি। বাতাস করতে করতে হাত ব্যথা হয়ে যাচ্ছে। নিজের কষ্ট মানা যায়। কিন্তু ছোট বাচ্চাটা গরমে ছটফট করছে, সেটা মানা যায় না।

আইরিন ও শফিকুলের মতো এমন হাজারও যাত্রী পাটুরিয়া ঘাটে বাসে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ঘাটে পৌঁছেও ফেরিতে উঠতে ঠিক কতক্ষণ তাদের অপেক্ষা করতে হবে, সেই অনিশ্চয়তাই ঘিরে ধরেছে তাদের।

বিআইডাব্লিউটিসির আরিচা অঞ্চলের ডিজিএম শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ বলেন, যাত্রী ও যানবাহন পারাপারের জন্য সকাল থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয় নৌরুটে ২০টি ফেরি চলাচল করছে। সকালের দিকে ঘাটে যানবাহনের সংখ্য ছিল খুবই কম। ফেরিগুলো যানবাহনের জন্য বসে থেকেছে। দুপুর সাড়ে ১২টার পর থেকে যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। তবে যে ফেরি আছে, তা দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে যানবাহন পারাপার করতে সমস্যা হবে না।

খালেদ নেওয়াজ আরও বলেন, ৫ নম্বর ফেরি ঘাট রাত থেকেই ব্যস্ত হয়ে ওঠে। কারণ সেই ঘাটটি প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রচুর ছোট গাড়ি আসার কারণে কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়ছেন যাত্রীরা। এছাড়া ঘাটে শতাধিক ট্রাক রয়েছে। সেগুলো পারাপার আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। সকালের দিকে যাত্রীবাহী বাস কম থাকায় কিছু ট্রাক পারাপার করা হয়। আশা করছি, এবারের ঈদে নির্বিঘ্নে যানবাহন ও যাত্রী পারাপার করতে কোনো বেগ পেতে হবে না।

সারাবাংলা/টিআর

ইদযাত্রা পাটুরিয়া ঘাট প্রাইভেট কার মাইক্রোবাস যাত্রীবাহী বাস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর