জ্যাম নেই সড়কে, যাত্রীদের চাপ রেলস্টেশনে, ঢিলেঢালা বাস টার্মিনাল
৩০ এপ্রিল ২০২২ ১৫:৪৬
ঢাকা: টানা এক মাসেরও বেশি সময় ধরে যানজটে নাকাল থাকা রাজধানীবাসীর স্বস্তি মিলেছে। কমেছে রাজধানীর যানজট। তবে ইদযাত্রার চতুর্থ দিনেও কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীদের প্রচুর চাপ ছিল। অন্যদিকে যাত্রাবাড়ি, সায়েদাবাদ, মহাখালি এবং গাবতলী থেকে ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার বাস কাউন্টারগুলোতে যাত্রীদের উপস্থিতি ছিল অনেকটা ঢিলেঢালা। তবে স্বল্প দূরত্বে চলাচল করা লঞ্চগুলোও সদরঘাট থেকে যাত্রী বোঝাই করে ছেড়ে গেছে।
শনিবার (৩০ এপ্রিল) রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে, দিন কিংবা রাতে যেসকল সড়ক গাড়িতে ঠেঁসে থাকত, সেসব সড়ক দুপুর পর্যন্ত ফাঁকা। বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল, শাহবাগ, ফার্মগেট, নিউমার্কেট, মিরপুর রোড, গুলশান, বনানী, কুড়িল, বাড্ডা, এয়ারপোর্ট রোড থেকে শুরু করে প্রধান সড়ক কিংবা অলিগলি কোথাও জ্যাম দেখা যায়নি। কিন্তু ঢাকার প্রবেশ পথগুলোতে গাড়ির চাপ কম থাকলেও ঘরমুখো যাত্রীদের ভিড় ছিল।
আসছে ইদুল ফিতর উপলক্ষে প্রিয়জনের সঙ্গে ইদ উদযাপন করতে গত কয়েক দিন ধরে রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছে নগরবাসী। ইদযাত্রার চতুর্থ দিনেও শনিবার কমলাপুর রেলস্টেশনে সকাল থেকেই যাত্রীদের চাপ ছিল। তবে আজ ট্রেন শিডিউল বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেনি। দুয়েকটি ট্রেন ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট দেরি করে ছাড়লেও যাত্রীরা আনন্দেই ইদযাত্রা করেছেন।
ধূমকেতু এক্সপ্রেসের যাত্রী মনিরুল ইসলাম বলেন, একরকম যুদ্ধ করে যখন টিকিট সংগ্রহ করতে পেরেছি, এখন ট্রেন একটু দেরি করে এলেও অসুবিধা নেই। সময় আছে হাতে, বাড়িই তো যাবো।
এগারোসিন্ধুর যাত্রী সুষ্মিতা আহমেদ বলেন, অল্প কিছু সময় দেরি করেছে ট্রেন, তবে সেটাতে খারাপ লাগছে না। বাড়িতে যাচ্ছি পরিবার, আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা হচ্ছে এটা ভাবতেই অনেক আনন্দ লাগে।
এর আগে বুধবার থেকে ইদ যাত্রার জন্য ট্রেন চলাচল শুরু করে রেলওয়ে। তবে প্রথম দুই দিন (বুধ ও বৃহস্পতিবার) যাত্রীর চাপ স্বাভাবিক হলেও শুক্রবার থেকে তা বেড়েছে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটা প্লাটফর্মেই ছিল যাত্রীদের ভিড়।
রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. মাসুদ সারওয়ার জানিয়েছেন, প্রতিবছর প্রচলিত একটা অভিযোগ ওঠে যে ট্রেনের শিডিউল ঠিক থাকে না। এবার আমরা যেসব পদক্ষেপ নিয়েছি তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ট্রেনের শিডিউল যেন ঠিক থাকে । কারণ মানুষ বাড়ি যাবে, এসময় যদি তাকে ট্রেনের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্টেশনে কাটাতে হয় তাহলে সেটা সহ্য করার মতো অবস্থায় থাকে না।
উল্লেখ্য, আগামীকাল রোববার (১ মে) থেকে ট্রেনের ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরু হচ্ছে।
এদিকে গাবতলী বাস টার্মিনালে যাত্রীদের তেমন চাপ দেখা যায়নি। যাদের আনাগোনা দেখা গেছে, তাদের অধিকাংশ যানজট এড়াতে ভেঙে ভেঙে যাওয়ার উদ্দেশ্যে স্বল্প দূরত্বের টিকিট সংগ্রহ করছেন। আবার বিভিন্ন দূরপাল্লার বাসের টিকিটও সহজেই মিলছে। যাত্রীরা জানিয়েছেন, কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই এসি, নন এসি বাসের টিকিট কিনতে পারছেন। টিকিট কাউন্টারের বিক্রেতারা বলছেন, সকালে ভিড় কম থাকলেও দুপুরের দিকে কিছুটা বেড়েছে।
মহাখালি বাস টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষের চাপ কম দেখা গেছে। যাত্রী কম থাকায় নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ। ময়মনসিংহ গামী বাসের যাত্রী মাঈনুল ইসলাম বলেন, ময়মনসিংহের ভাড়া ২৫০ টাকা হলেও আজ (শনিবার) নেওয়া হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। আবার অনন্যা ক্লাসিক, জলসিঁড়ি বাসের যাত্রীদেরও এমন অভিযোগ যে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অন্তত দেড়শ দুইশ করে জনপ্রতি যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া বেশি নিচ্ছে।
এনা পরিবহনের টিকিট বিক্রেতা মসিউর রহমান জানিয়েছেন, বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ সত্য নয়। তবে যাত্রীর চাপ কম এটা সত্য। কারণ অনেকেই পরিবার পরিজন আগে পাঠিয়ে দিয়েছেন। নিজে একা যাচ্ছেন।
এদিকে অন্য পরিবহনের টিকিট বিক্রেতারা এই অতিরিক্ত ভাড়াকে ইদ সালামী হিসবে উল্লেখ করেছেন।
তবে সায়েদাবাদ- যাত্রাবাড়ি থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসের চাপ যেমন বেশি ছিল, তেমনি যাত্রীদেরও চাপ ছিল। কাউন্টারগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সকালে তেমন ভিড় না থাকলেও দুপুরের দিকে এই পথে ভিড় বাড়তে থাকে।
এদিকে সদরঘাট থেকে স্বল্প দূরত্বে যেমন চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জের মতো রুটগুলোতে দিনের বেলাতেই ছোট ছোট লঞ্চকে যাত্রীবোঝাই করে ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। বড় এবং দূরপাল্লার লঞ্চ ছেড়ে যাবে সন্ধ্যায়।
এবার ইদের ছুটির আগে দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে মে দিবসের ছুটি যোগ হওয়ায় একটু আগে ভাগেই ঢাকা ছেড়েছে মানুষ। এজন্য শুক্রবার পর্যন্ত যাত্রীদের প্রচুর চাপ ছিল স্টেশনগুলোতে। শনিবার সে তুলনায় কিছুটা কম।
সারাবাংলা/জেআর/এসএসএ