ইদযাত্রায় মহাসড়কে স্বস্তি, যাত্রী খরায় গাবতলী
১ মে ২০২২ ২৩:৪৩
ঢাকা: বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণের সংকট কাটিয়ে আসন্ন ইদুল ফিতর মুক্ত পরিবেশে উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে পুরো দেশ। একদিকে লম্বা ছুটির আমেজ, অন্যদিকে মহাসড়কে এখন পর্যন্ত যানজট ভোগান্তির অস্বস্তি নেই বললেই চলে। তাই মানুষ নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরছে। তবে ইদের এক দিন আগেও ঘরমুখী মানুষের তেমন চাপ নেই গাবতলী বাস টার্মিনালে। সারাদেশে চলাচলকারী বিভিন্ন রুটে বাস থাকলেও যাত্রী খরায় ভুগছে কাউন্টারগুলো।
রোববার (১ মে) ইফতারের পর ইদুল ফিতরকে সামনে রেখে গাবতলীমুখী মানুষের চাপ দেখা যায়নি। বাসের আন্তঃজেলা কাউন্টারগুলোতে অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে সেখানকার স্টাফদের। কারণ, ইদের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে মানুষের কোলাহল বাড়ার কথা থাকলেও এবার যেন উল্টো চিত্র। আন্তঃজেলা বাস কাউন্টারের সামনে টিকিটের প্রয়োজনে অল্প সংখ্যক মানুষের জটলা আছে। তবে রাতের দিকে অথবা কাল ঢাকা ছেড়ে যাওয়া এলাকামুখী মানুষের চাপ বাড়ার আশায় অনেক কাউন্টার এখন প্রহর গুনছে।
এদিকে, আসন্ন ইদ উপলক্ষে শুক্রবার থেকে সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে। তাই বৃহস্পতিবার থেকেই ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে মানুষ। শুক্র, শনি দু’দিন বাস টার্মিনালে মানুষের চাপ লক্ষ্য করা গেলেও রোববার সেই চিত্র উল্টো। এমনকি গাবতলী বাস টার্মিনালের সামনের সড়কেও বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী বাসের সারিও কম লক্ষ্য করা গেছে। রোববার সরেজমিনে রাজধানীর টেকনিক্যাল, কল্যাণপুর ও গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
টানা দুই বছর বৈশ্বিক মহামারি করোনার সংকট কাটিয়ে এবার ইদের ছুটিতে গ্রামমুখী মানুষের যাতায়াত বেড়েছে। তবে লম্বা ছুটি থাকায় অনেকে আগেই ঢাকা ছেড়েছে। সেজন্য ইদযাত্রায় মহাসড়কে যানজট ও ভোগান্তি কম। মহাসড়কের কোথাও কোথাও থেমে থেমে যানবাহন চলাচল করলেও যানজটের ভোগান্তি বলতে যা বোঝায় তা নেই বললেই খবর শোনা যাচ্ছে।
মহাসড়কে যানজটের দীর্ঘ সারি বা ভোগান্তি না থাকায় গাবতলী থেকে ছেড়ে যাওয়া পরিবহনগুলো নির্বিঘ্নে যাত্রী নামিয়ে পুনরায় ঢাকায় ফিরে আসছে। আবার যাত্রী সেবা পরিবহনে নিয়োজিত গাড়িগুলোও সময়মতো চলাচল করতে পারছে। তাই গাবতলী বলতে গেলে ফাঁকা।
শ্যামলী কাউন্টারের স্টাফ মোহাম্মদ মনির হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘যাত্রী খরা চলছে। ইদের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই যাত্রী খরা বাড়ছে। অনেক রুটে এখন স্লিপিং কোচ আর এসি ভলবো সার্ভিস চালু হয়েছে। এসব কোচে অনেকে আগেই পরিবার-পরিজন নিয়ে বাড়ি চলে গেছে। তাই এবার রাস্তায় যানজট তেমন নেই বললেই চলে। মহাসড়ক এখন অনেক উন্নত হয়েছে। রাস্তায় গাড়ির চাপ থাকলেও যানজটের কোনো ভোগান্তি নেই।’
বাসের কোন সিডিউল বিপর্যয় হচ্ছে কি না?- জানতে চাইলে কয়েকটি পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার ও স্টাফরা জানান, বাসে এখনো কোনো সিডিউল বিপর্যয় হচ্ছে না। মহাসড়কে তেমন জ্যাম নেই। ঠিক সময়েই বাস আসছে। মহাসড়কে গাড়ির গতি স্বাভাবিক থাকায় শিডিউল বিপর্যয় হচ্ছে না। বরং যাত্রী খরার কারণে শিডিউলের সব বাস চালানো যাচ্ছে না।
সোহাগ পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার ইসমাইলও যাত্রী খরার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি সারাবাংলাকে, ‘আমি এই কাউন্টারে নতুন যোগ দিয়েছি। তারপরও আমি যা দেখছি তাতে যাত্রী কম মনে হচ্ছে। আজকেও আরও কম দেখছি।’
এদিকে গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ‘পুলিশ, র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক রয়েছেন। অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোতে তাদের মোবাইল নিয়ে অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে।’
গত শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল পরিদর্শনে আসেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ওই দিন তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এবার সড়ক ভালো আছে। গাজীপুরের যে সমস্যা ছিল, আমার মনে হয় এবার আর সেই সংকট হবে না। আমরা তিনটা ফ্লাইওভার খুলে দিয়েছি গাজীপুরে। সেখান দিয়ে এখন নিয়মিত গাড়ি চলছে।’
তিনি বলেন, ‘আর উত্তরবঙ্গের দিকে সবসময় যে সমস্যা হয়, সেটা ওভারকাম করেছি। সেখানে নলকা ছিল দীর্ঘদিনের একটা সমস্যা। আমরা নলকা সেতু করে ফেলেছি। কাজেই সেখানে কোনো সংকট হবে বলে আমার মনে হয় না।’
আওয়ামী লীগের এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিনিয়ত খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। এবার কোনো রাস্তায় যেন কোনো অবস্থায় দুর্ভোগ না হয়, সে ব্যাপারে তিনি খেয়াল রাখছেন।’
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম