ইদে অনেক নেতাই এলাকায়, বৈঠকে যোগ দিতে দ্রুতই ফিরবেন ঢাকায়
২ মে ২০২২ ২০:২৭
ঢাকা: বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে দুই বছর ইদ ছিল ঘরবন্দি। এবার সেই শঙ্কা কাটিয়ে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ইদুল ফিতর উদযাপনের জন্য প্রস্তুত পুরো দেশ। রাত পোহালেই মঙ্গলবার (৩ মে) ইদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হবে। এবার দেশবাসীর সঙ্গে উৎসব পালনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও প্রস্তুত। কারণ, বিগত দুই বছর করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রাণখুলে ইদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে পারেননি দলটির শীর্ষ নেতারা। তাই এবার শীর্ষ নেতাদের অধিকাংশই ইদের আগে নিজ নিজ এলাকা থেকে ঘুরে এসেছেন। আবার কেউ কেউ এলাকায় অবস্থান করলেও আগামী ৭ মে অনুষ্ঠেয় কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক যোগ দিতে কারণে ইদের পর পরই ঢাকায় ফিরে আসবেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা এবং অনেকের ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অধিকাংশ রাজনীতিবিদ এবারের ইদে ঢাকায় অবস্থান করবেন। তবে নামাজ শেষে অনেকে নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় যাবেন। আবার ইদের তিন দিন পর ৭ মে বিকেল সাড়ে চারটায় গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে অংশ নিতে হলে করোনা টেস্টে নেগেটিভ হতে হবে। আগামী ৫ ও ৬ মে করোনা টেস্ট নিশ্চিত করতে হবে। তাই অনেক নেতা এবার ইদের দিন এলাকায় অবস্থান করেই কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় অংশ নিতে ঢাকার পথে রওনা হবেন। কারণ, এর আগের সভাগুলো সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠিত হলেও এবার কেন্দ্রীয় কমিটির সকল সদস্যকে সভায় উপস্থিত থাকার চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, পর পর দুবছর করোনা মহামারির কারণে ইদে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎতের সুযোগ কম হলেও এবার অনেক নেতা তা পুষিয়ে নিতে আগেভাগেই এলাকায় গেছেন। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে যারা সংসদ সদস্য এবং যারা আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী- তাদের অনেকে আগেভাগেই এলাকায় গিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সাধারণ মানুষকে সহায়তাও দিয়েছেন।
করোনার সংক্রমণ কমলেও এবারও আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠিত হবে না। এবারও তিনি পারিবারিক আবহে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ইদ উদযাপন করবেন। প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানাসহ অন্যান্য সদস্যরা সেখানে রয়েছেন। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির আগে প্রতিবছর ইদের দিন দলের নেতাকর্মী, বিদেশি কূটনীতিক, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে ইদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন তিনি। করোনার কারণে গত দুই বছর ইদুল ফিতরের দিন প্রধানমন্ত্রীর কোনো আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি রাখা হয়নি। ৭ মে গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু হবে। তবে ভার্চুয়ালি প্রধানমন্ত্রী দলীয় নেতাকর্মীসহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে পারেন। যদিও তিনি ইতোমধ্যেই ভিডিও-অডিও বার্তায় দেশবাসীকে ইদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। শারীরিক অসুস্থাজনিত কারণে এবারও ঢাকায় ইদ করবেন। দলটির উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য এবং ১৪ দলের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু রাজধানীর ইস্কাটনের বাসায় ইদুল ফিতর উদযাপন করবেন। তবে গত ২২ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত এলাকার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কাটিয়ে এসেছেন তিনি। উপদেষ্টা পরিষদের আরেক সদস্য তোফায়েল আহমেদও ইদ করবেন রাজধানীতে। ঈদের দিন বনানীর বাসায় কাটাবেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ইদ করবেন ঢাকায়। তবে তিনি ৫ মে নোয়াখালীতে নিজের নির্বাচনি এলাকার নেতাকর্মীদের খোঁজখবর নিতে যাবেন। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ঢাকায় বনানীর বাসায় ইদ করবেন। সভাপতিণ্ডলীর আরেক সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকও ইদ করবেন ঢাকায়। তবে ইদের পরে নিজ এলাকা টাঙ্গাইল যাবেন। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্ল্যাহ ও লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান ইদ করবেন ঢাকায়। কারণ আগেই তারা নিজ এলাকা থেকে ঘুরে এসেছেন। সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ইতোমধ্যেই বরিশাল থেকে ঘুরে এসেছেন। তবে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান ফরিদপুরে নিজ বাড়িতে ইদ করে ঢাকায় ফিরবেন। এছাড়া সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ইদ করবেন রাজশাহীতে এবং শাজাহান খান ইদ মাদারীপুরে। আর মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী বীরবিক্রম ও কামরুল ইসলাম ইদ করবেন ঢাকায়।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে মাহবুবউল আলম হানিফ নিজ জেলা কুষ্টিয়ায় ইদ করবেন। ইতোমধ্যে তিনি এলাকায় চলে গেছেন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি ইদ করবেন ঢাকায়। আওয়ামী লীগের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ইদ করবেন নিজ নির্বাচনি এলাকা চট্টগ্রামে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ইদ করবেন গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরে।
দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ইদ করবেন নেত্রকোনায়। বিএম মোজাম্মেল হক এবং এসএম কামাল হোসেন ইদ করবেন ঢাকায়। সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন জয়পুরহাটে, মির্জা আজম জামালপুরে, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ইদ করবেন গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায়।
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহাব গোলাপ ইদ করবেন মাদারীপুরে। আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল ও তার পত্নী যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল ইদে নির্বাচনি এলাকায় থাকবেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের সঙ্গে ইদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে মুন্সিগঞ্জে অবস্থান করবেন। ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী ইদের সকালে ঢাকায় থাকলেও বিকেলে চাঁদপুরে নিজ এলাকায় থাকবেন। তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ ইদ করবেন ঢাকায়।
আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া রোববার ইংল্যান্ড থেকে ঢাকায় ফিরেছেন। বিপ্লব বড়ুয়া এবং উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান ইদ করবেন ঢাকায়। আর অর্থবিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খান এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন ইদ করবেন নিজ এলাকা চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায়। স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেলা সুলতানা ইদ করবেন ঢাকায়। আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ ইদ করবেন বরিশালে।
কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যদের মধ্যে আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ বরিশালে, আমিরুল আলম মিলন বাগেরহাটে, ইকবাল হোসেন অপু শরীয়তপুরে, সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম ঢাকায় ইদ করবেন।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম