জাতীয় চিড়িয়াখানা: ধারণক্ষমতার বেশি প্রাণী, নেই পর্যাপ্ত জনবল
৪ মে ২০২২ ০৯:৫৭
ঢাকা: মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে গত বছর একটা দীর্ঘ সময় দেশের সকল বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়। সেই সঙ্গে বন্ধ থাকে জাতীয় চিড়িয়াখানাও। দর্শনার্থীদের আনাগোনা না থাকায় নিরিবিলি পরিবেশ পেয়ে রয়েল বেঙ্গল টাইগার থেকে শুরু করে খাঁচাবন্দি অনেক প্রাণীই প্রজনন ঘটিয়েছে। নতুন-পুরনো মিলিয়ে এখন জাতীয় চিড়িয়াখানায় প্রাণীর সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে। তবে পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় এই বিপুল সংখ্যক প্রাণীদের রক্ষণাবেক্ষণ চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানটির মোট জনবলের প্রায় অর্ধেক পদই দীর্ঘদিন ধরে খালি। শূন্য রয়েছে খোদ পরিচালকের পদও। এছাড়া এতো সংখ্যক প্রাণীদের জন্য স্থান সংকুলানও কঠিন হয়ে পড়েছে।
রাজধানীর বিনোদনকেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম এই জাতীয় চিড়িয়াখানা। খাঁচাবন্দি পশু-পাখি ছোটদের জন্য বিশেষ আকর্ষণের বিষয় হলেও এখানে সব বয়সী মানুষেরই সমাগম ঘটে। সরকারি ছুটির দিনগুলোতে অন্য সময়ের চেয়ে দর্শনার্থীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী সামাল দেওয়ার মতো সক্ষমতা জাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের নেই। ফলে ইদ উৎসবের মতো দিনগুলোতে চিড়িয়ানায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা দিতে আনসার সদস্যদের রিক্রুট করতে হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে জাতীয় চিড়িয়াখানায় আট প্রজাতির ৩৮টি মাংসাশী প্রাণী, ১৯ প্রজাতির বড় প্রাণী (তৃণভোজী) ২৭১টি, ১৮ প্রজাতির ক্ষুদ্র স্তন্যপায়ী ১৯৮টি প্রাণী রয়েছে। আরও আছে, ১০ প্রজাতির সরীসৃপ ৭২টি, ৫৬ প্রজাতির ১ হাজার ১৬২টি পাখি, একুরিয়ামে রক্ষিত মাছ প্রজাতির মধ্যে ১৩৬ প্রজাতির ২ হাজার ৬২৭টি প্রাণী। চিড়িয়াখানায় ১৩৭টি খাঁচায় এসব প্রাণীদের রাখা হয়েছে।
এই প্রাণীদের রক্ষণাবেক্ষণের কাজের জন্য জাতীয় চিড়িয়াখানায় পদ রয়েছে ২৩৬টি। বিভিন্ন সময়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবসরে যেতে যেতে ইতোমধ্যে শূন্য পদের সংখ্যা ৯৭টিতে ঠেকেছে। বছর খানেক ধরে সর্বোচ্চ পরিচালকের পদটিও খালি পড়ে রয়েছে। যদিও সম মর্যাদার একটি পদ ‘কিউরেটর’ সৃষ্টি করে একজনকে দায়িত্ব দেওয়া আছে বর্তমানে। চিড়িয়াখানার তত্ত্বাবধায়নে থাকা মৎস ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়কে জনবল নিয়োগে বেশ কয়েকবার তাগিদ দেওয়া হলেও এখনও পর্যন্ত কোনো সাড়া মেলেনি। এদিকে বছরে যে পরিমাণ বাজেট চিড়িয়াখানার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় তা দিয়ে সঠিকভাবে পরিচালনা করা কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় চিড়িয়াখানার তথ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ ওয়ালিউর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, সরকারি সিস্টেমই এমন হয়েছে যে চাকরির বয়স শেষ হবে, অবসরে যাবে, কিন্তু নতুন করে কেঊ আসবে না। এখানে নিয়োগ প্রক্রিয়া জটিল। দীর্ঘদিন ধরেই পদ শূন্য। দিন যতো যাচ্ছে এই শূন্য পদের সংখ্যা বাড়ছে।
তিনি বলেন, ১৮৬ একর জায়গা নিয়ে জাতীয় চিড়িয়ানা। এখানে কমপক্ষে ত্রিশ জন পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতাকর্মী থাকার কথা। কিন্তু আমাদের আছেন মাত্র তিন জন। পশুপাখির নোংড়া, মানুষের ফেলে যাওয়া ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার করে সুন্দর রাখা এই তিন জনের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, করোনার সময় লোকজন না আসায় প্রজনন বেড়েছে। জিরাফ, হরিণ, জেব্রা, গাধা, ঘোড়া, ইম্পালা, বাঘ, ময়ুর, বক, কবুতরের বাচ্চা পেয়েছে চিড়িয়াখানা। কিছু কিছু পশুপাখির সংখ্যা অনুযায়ী পর্যাপ্ত জায়গা নেই। সেখানে আরেক সমস্যা। অন্যদিকে পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকে না। ফলে দর্শনার্থীদের থেকে যে আয় হয় তা দিয়ে বরাদ্দ মিলিয়ে এক রকম জোড়াতালি দিয়েই চলছে পঞ্চাশ বছরের জাতীয় চিড়িয়াখানা।
উল্লেখ্য, স্বাধীনতার ২০ বছর আগে প্রতিষ্ঠা করা হয় এই চিড়িয়াখানা। ১৯৫০ সালে হাইকোর্ট চত্বরে জীবজন্তুর প্রদর্শনশালা হিসেবে চিড়িয়াখানাটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর বাংলাদেশের জন্মের পর ১৯৭৪ সালে রাজধানীর মিরপুরে চিড়িয়াখানাটি স্থানান্তর করা হয়। নাম দেওয়া হয় ঢাকা চিড়িয়াখানা। ওই বছরেরই ২৩ জুন সর্বসাধারণের জন্য এই চিড়িয়াখানা খুলে দেওয়া হয়। এরপর ২০১৫ সালে ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে জাতীয় চিড়িয়াখানা নামকরণ করা হয়। মোট ১৮৬ একর জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চিড়িয়াখানা। এখানে কয়েকশ প্রজাতির পশুপাখির পাশাপাশি রয়েছে তাদের চিকিৎসার জন্য একটি হাসপাতাল। আরো আছে একটি প্রাণী জাদুঘর। চিড়িয়াখানাটি ঘিরে রয়েছে একটি লেক। ছায়া শীতল, অসংখ্য ফুল ও ফলের গাছ ঘেরা মনোরম পরিবেশে জাতীয় চিড়িয়াখানা ছোট-বড় সকলের কাছেই ঘুড়ে বেড়ানোর জন্য পছন্দের একটি জায়গা। রোববার সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়া সবদিনই খোলা থাকে, প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা। আর চিড়িয়াখানার ভেতরে জাদুঘর ঘুরে দেখতে চাইলে দিতে হবে আরও দশ টাকা। রাজধানীর যেকোনো প্রান্ত থেকে বাস, সিএনজি বা অন্য যেকোনো রাইডে চেপে যাওয়া যাবে মিরপুর এক ও দুই নম্বরের মাঝামাঝি অবস্থিত জাতীয় চিড়িয়াখানায়। তথ্য মতে, বছরে ত্রিশ লাখ দর্শনার্থী এই চিড়িয়াখানা ঘুরতে আসেন।
সারাবাংলা/জেআর/এসএসএ