Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইদের ২য় দিনেও লোকারণ্য চিড়িয়াখানা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৪ মে ২০২২ ১৯:২০

ঢাকা: মানুষে ঠাসা রাজধানী ঢাকায় চিত্তবিনোদনের সুযোগ কম। যে ব্যবস্থা রয়েছে, তা পর্যাপ্ত নয়। তার ওপরে ইদের সময়ে অধিকাংশ বিনোদনকেন্দ্রই বন্ধ। তাই ইদের দুই দিন লোকে লোকারণ্যে পরিণত হয়েছে জাতীয় চিড়িয়াখানা। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন চিড়িয়াখানায়। এসেছেন ঢাকার আশপাশ থেকেও। দর্শনার্থীরা জানিয়েছেন, ইদে রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকায় কম সময়েই চিড়িয়াখানায় পৌঁছানো গেছে। ফলে যানজটের দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি। বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থীদের সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞাপন

মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে টানা দুই বছর উৎসবমুখর পরিবেশে ইদ উদযাপন করতে পারেননি কেউ। এবার সংক্রমণ কমার পাশাপাশি বিধিনিষেধ না থাকায় বাড়তি আনন্দ যোগ হয়েছে ইদে। কিন্তু শাহবাগে অবস্থিত শিশুপার্ক, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, স্বাধীনতা জাদুঘর, লালবাগ কেল্লার মতো দর্শনীয় কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় মানুষ ছুটছে চিড়িয়াখানার দিকে। বুধবার (৪ মে) মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানা গিয়ে দেখা গেল, এক রকম গাদাগাদি করে প্রবেশ করছে মানুষ।

বিজ্ঞাপন

টিকিট কাউন্টার পেরিয়ে চিড়িয়াখানার মূল প্রবেশদ্বার পার হতেই ডান দিকে হরিণের খাঁচা। হরিণ দেখার জন্য দর্শনার্থীদের জায়গা ছিল ছোট-বড় মানুষে পরিপূর্ণ। তার আরেকটু সামনে বানরের খাঁচার সামনে বড়দের চেয়ে ছোট দর্শনার্থীর সংখ্যাই চোখে পড়েছে বেশি।

ক্ষুদে দর্শনার্থী রাইয়ান (৭) এসেছে বাবার সঙ্গে। সারাবাংলাকে রাইয়ান জানায়, এতদিন সে বইয়ের পাতায় এসব প্রাণী দেখেছে। এবার বাস্তবে এগুলোতে দেখতে পেরে সে ভীষণ খুশি। রাইয়ানের বাবা ইমরান আহমেদ (৪২) বলেন, মোহাম্মদপুর থেকে ছেলেকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় এসেছি। ছেলে তো খুব খুশি। ওকে নিয়ে আসতে পেরে খুব আনন্দ লাগছে।

ইদ ঘিরে একসঙ্গে এত মানুষ একসঙ্গে দেখতে পেয়েই বোধহয় কিছুটা বিব্রত দেখা গেল রয়েল বেঙ্গল টাইগার আর বনের রাজা সিংহকে। দর্শনার্থীরা তাদের মনোযোগ আকর্ষণে সম্ভাব্য সবকিছু করলেও তাতে যেন তেমন একটা উৎসাহ নেই তাদের। ঘুরতে আসা মানুষরা জানালেন, বাঘ-সিংহগুলোর বেশিরভাগ সময় কাটছে দর্শনার্থীদের থেকে একটু দূরে বসে বসে।

প্রাণীদের প্রতিটি খাঁচার সামনেই ছিল দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। ভিড় ছিল ইমু পাখি, উট পাখি, সুন্দরী ময়ূর, কোকিল, বকদের খাঁচার সামনেও। তবে সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে জিরাফ, জেব্রা, ঘোড়া, বুনো মহিশ, সাদা ঘোড়া, গণ্ডারদের খাঁচার সামনে। তিল ধারণের ঠাঁই নেই— এমন অবস্থা।

১৮৬ একর জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় চিড়িয়াখানায় রয়েছে ১৩৭টি খাঁচা। সবগুলো ঘুরে দেখতে দেখতে অনেকেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। তাদের বিশ্রাম নিতে দেখা গেল চিড়িয়াখানার ঘাসের মাঠে বসে। কেউ মুখে পানি ছিটিয়ে ক্লান্তি দূর করার চেষ্টা করছেন।

আশুলিয়া থেকে হুমায়ুন কবির (৪৫) জাতীয় চিড়িয়াখানায় এসেছেন তার একমাত্র ছেলে সুজনকে (৯) নিয়ে। তিনি বলেন, একদিকে চাকরি, অন্যদিকে রাস্তায় জ্যাম— কোথাও ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ হয় না বললেই চলে। এবার ইদের ছুটিতে রাস্তা ফাঁকা থাকায় ছেলেকে নিয়ে এখানে এসেছি। এতদিন ছেলে বইয়ে আর টিভিতে এসব প্রাণী দেখেছে। এখন বাস্তবে দেখিয়ে পরিচিত করিয়ে দিচ্ছি। খুব আনন্দ পাচ্ছে, অবাকও হচ্ছে প্রাণীগুলোকে সামনাসামনি দেখে।

জাতীয় চিড়িয়াখানায় খাঁচাবন্দি পশুপাখি ছাড়াও রয়েছে শিশুদের জন্য একটি ছোট পার্ক। সেখানে রয়েছে স্লিপার, নাগরদোলা, রেলগাড়ি। টিকিট কেটে বাচ্চাদের এসব রাইডে তুলে দেওয়ার ভিড় লেগেছিল প্রায় সারাদিন।

অন্যদিকে ভিড় ছিল চিড়িখানার ভেতরে থাকা প্রাণী জাদুঘরে। লাইন ধরে ১০ টাকার টিকিট কেটে ভেতরে ঘুরে দেখছেন জাদুঘর। রাজধানীর বনানী থেকে আসা সোহেল (২৫) জানান, নতুন বিয়ে করে বউকে নিয়ে এসেছেন চিড়িয়াখানা ঘুরতে। এখানে আগে এলেও এই জাদুঘর ঘুরে দেখা হয়নি কখনো। তিনি বলেন, এটা এবারের চিড়িয়াখানা ঘোরার বাড়তি বিষয় ছিল।

এদিকে, অতিরিক্ত দর্শনার্থীদের চাপে অনেকে আবার পরিবারের সদস্যদের হারিয়েও ফেলছেন। কিছুক্ষণ পর পর মাইকে ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে— ১০ বছরের বাচ্চা হারানো গিয়েছে কিংবা কারও মাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। প্রসঙ্গে জাতীয় চিড়িয়াখানার তথ্য কর্মকর্তা ডা. ওয়ালিউর রহমান সারাবাংলাকে জানান, প্রতিবারই এমন ঘটনা ঘটে। তবে একবারে যে হারিয়ে যাচ্ছে, তা না। হয়তো কোনো খাঁচার সামনে প্রাণী দেখছে কিংবা বাগানে হেঁটে বেড়াচ্ছে। ইদে মানুষ বেশি থাকার কারণে এ ঘটনা ঘটার আশঙ্কায় এবার ১৬টি মাইক চিড়িয়াখানার বিভিন্ন স্থানে লাগানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার ইদে রাজধানীর অন্যান্য বিনোদনকেন্দ্র যেমন— শিশুদের জন্য অন্যতম আকর্ষণ শাহবাগে শিশুপার্কটি বন্ধ থাকায় বাড়তি চাপ পড়েছে চিড়িয়াখানায়। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ চিড়িয়াখানার খাঁচাবন্দি প্রাণীদের দেখতে এসেছেন। বাড়তি মানুষের ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।

জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর কিউরেটর মো. মুজিবুর রহমান সারাবাংলাকে জানান, অন্যান্য ইদের মতো এবারও দর্শনার্থীদের চাপ সামাল দিতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আনসার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চিড়িয়াখানার ভেতরে আনসার মোতায়েন রয়েছে। চিড়িয়াখানা এলাকা হকারমুক্ত করা হয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও দুর্গন্ধমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে।

ছবি: হাবিবুর রহমান

সারাবাংলা/জেআর/টিআর

ইদ আনন্দ ইদুল ফিতর জাতীয় চিড়িয়াখানা মিরপুর চিড়িয়াখানা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর