Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রামে ঘণ্টা দুয়েকের বৃষ্টিতে ‘নালার পানি ঘরে’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৫ মে ২০২২ ১৪:১৯

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীর আলকরণ ওয়ার্ডের নুর আহমদ স্কুলের সামনের বাড়ির বাসিন্দা সানিয়া এলিনা হক। দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টির মধ্যে বজ্রপাতের তীব্র শব্দে ঘুম ভেঙে দেখেন, তার বাসা পানিতে তলিয়ে গেছে। সোফা সেট-টেবিলসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র পানির নিচে, রান্নার পাত্র-বাসন পানিতে ভাসছে।

বৃহস্পতিবার (৫ মে) ভোরে বৃষ্টিতে নগরীর আলকরণ-ফিরিঙ্গিবাজারসহ বেশ কয়েকটি এলাকা এভাবেই পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। সাত সকালেই এসব এলাকার বিভিন্ন ভবন ও কলোনির নিচতলার বাসিন্দাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় ইদের ছুটি শেষে অফিস খোলার প্রথমদিনে কর্মজীবী মানুষকে রাস্তায় নেমে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ভোরের দিকে প্রায় দুই ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে নগরীর দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর, বাকলিয়া, ডিসি রোড, চকবাজার, চান্দগাঁও, ফিরিঙ্গিবাজার, আলকরণ এলাকায় জলাবদ্ধতা কোথাও গোড়ালি সমান, কোথাও হাঁটু পর্যন্ত পানি ওঠে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা এই পানি জমে ছিল। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মেঘ কেটে রোদ ওঠে। এসময় অনেক এলাকায় পানি নেমে গেলেও ফিরিঙ্গিবাজার-আলকরণে জমেই ছিল। বৃষ্টিতে নালা থেকে ময়লা-আবর্জনা রাস্তায় এসে পড়ে। এতে রাস্তা দিয়ে হাঁটতেও বিপাকে পড়তে হয়েছে।

ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ডের তিন নম্বর গলির বাসিন্দা ইমপেরিয়াল হাসপাতালের কর্মচারি মোহাম্মদ মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এলাকায় আগে কখনো পানি ওঠেনি। ২০১৯ সাল থেকে আমরা এই সমস্যায় পড়েছি। এখন কর্ণফুলী নদীতে জোয়ার এলে আমাদের এলাকার রাস্তাঘাট ডুবে যায়। শুকনো মৌসুম, বর্ষা মৌসুম— সবসময় রাস্তায় পানি ওঠে, বৃষ্টি বেশি হলে বাসায় পানি ঢুকে যায়।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজের জন্য নালার মুখ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। নালার সব ময়লা পানি বাসায় ঢুকে গেছে। দুর্গন্ধে বাসায় থাকার কোনো উপায় নেই।’

একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা আকতার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ফিরিঙ্গিবাজারের এক, দুই, তিন নম্বর গলি, দোভাষ কলোনি, এয়াকুবনগর, গঙ্গাবাড়ি এলাকা, আলকরণ ওয়ার্ডে এক ও দুই নম্বর গলিতে বৃহস্পতিবার ভোরের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এখানে খালে বাঁধ দিয়ে ঢালাই কাজ চলছে। সব বড় বড় নালার মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ময়লা-আবর্জনা জমে সেগুলো ভরাট হয়ে গেছে। এখন বৃষ্টি হলেই নালা উপচে পানি রাস্তায় এসে পড়ে, বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়ে।’

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এ প্রকল্পের আওতায় নগরীর বিভিন্ন খালের ভেতরের অংশে অস্থায়ী বাঁধ দিয়ে জলকপাট ও প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণের কাজ চলছে। খালে দেওয়া বাঁধের কারণে ব্যাপক জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছিলেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বাঁধ অপসারণের জন্য সময়ও বেঁধে দিয়েছিলেন। তবে বাঁধ সরেনি।

সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের নিজের এলাকা ফিরিঙ্গিবাজার। তিনি এই ওয়ার্ড থেকে কয়েকবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তিন বছর ধরে চলা ভোগান্তি নিরসনে এলাকার লোকজন কয়েকবার সিডিএ চেয়ারম্যানের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু তার কাছ থেকে কোনো প্রতিকার পাননি।

সানিয়া এলিনা হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘সিডিএ চেয়ারম্যানের কাছে গেলে কাউন্সিলরের কাছে যেতে বলেন। কাউন্সিলরের কাছে গেলে সিডিএ চেয়ারম্যানের কাছে যেতে বলেন। কিন্তু তিন বছর ধরে আমরা নরক যন্ত্রণা ভোগ করছি। ভাড়াটিয়ারা সবাই বাসা ছেড়ে চলে যাচ্ছে।’

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার ওয়ার্ড ঘিরে দু’টি খাল আছে— টেকপাড়া খাল ও ফিরিঙ্গিবাজার খাল। দুই খালে বাঁধ দিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ চলছে। সব নালার মুখ বন্ধ। বৃষ্টি হলে ওভারফ্লো হয়ে রাস্তা ডুবে যাচ্ছে। রাস্তা থেকে পানি বাসাবাড়িতে ঢুকছে। গত সমন্বয় সভায় আমি বিষয়টি উত্থাপন করেছিলাম। তখন প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছিলেন, টেকপাড়া খালের কাজ এপ্রিলের মধ্যে শেষ হবে। কিন্তু শেষ হয়নি। তারা মাত্র ১০০ মিটার করে ঢালাই দেয়। কাজে খুবই ধীরগতি। ফিরিঙ্গিবাজার খালের কাজ কখন শেষ হবে জানি না। এলাকার মানুষ যে কষ্ট পাচ্ছে সেটা অকল্পনীয়।’

নগরীর পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসে দায়িত্বরত পূর্বাভাস কর্মকর্তা মাহমুদুল ইসলাম সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, দুপুর ১২টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ২৫ দশমিক দুই মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে আর ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। গরমও কিছুটা বাড়বে।

ছবি: শ্যামল নন্দী

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

জলাবদ্ধতা টপ নিউজ ভারী বৃষ্টিপাত

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর