বড়পুকুরিয়ায় কয়লা তোলা বন্ধ, বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখা নিয়ে সংশয়
১০ মে ২০২২ ১০:৫৩
ঢাকা: দেশের উত্তরাঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। যদিও কয়লা সংকটের কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পূর্ণমাত্রায় চালু রাখা যায় না। চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমেও এখন দু’টি ইউনিট চালু রাখা হয়েছে। এদিকে কূপে কয়লার মজুত শেষ হয়ে যাওয়ায় খনি থেকে আপাতত কয়লা উত্তোলন বন্ধ রাখা হয়েছে। নতুন কূপ থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু করতে সময় লাগতে পারে তিন থেকে সাড়ে তিন মাস। এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি কতদিন চালু রাখা যাবে এ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, গত ১ মে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির পুরাতন ১৩১০ কূপের কয়লা উত্তোলন শেষ হয়েছে। এখন নতুন ১৩০৬ কূপে স্থানান্তর করতে তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের মতো সময় লাগতে পারে। এদিকে এই খনিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালনার জন্য যে পরিমান কয়লা রয়েছে তা দিয়ে তিন মাস পর্যন্ত চালিয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
খনি কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে সেখানে দুই লাখ টন কয়লা মজুত রয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দু’টি ইউনিট চালু রাখতে প্রতিদিন ২ হাজার টন কয়লা ব্যবহার করলে মোট ১০০ দিন যাওয়ার কথা। কিন্তু যদি খনির কূপ পরিবর্তন করতে সাড়ে তিনমাস সময় লেগে যায়, তাহলে বাড়তি ৫ দিন বিদ্যুৎকেন্দ্র চলবে কীভাবে। যদি সময় তার চেয়েও বেশি প্রয়োজন হয়, তাহলে উত্তরাঞ্চলের বিদ্যুতের যোগান দেওয়া সম্ভব হবে না। এসব বিষয় মাথায় নিয়ে কয়লা খনি কর্তৃপক্ষ হিসাব করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনা করার জন্য পিডিবিকে পরামর্শ দিয়েছে।
বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘খনির যে কূপ থেকে কয়লা উত্তোলন করা হয়েছিলো তা শেষ হয়ে গেছে। ফলে স্বাভাবিক নিয়মেই উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। নতুন কূপ থেকে উত্তোলন শুরু না হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ প্রায় চার মাস সময় লাগবে দ্বিতীয় কূপ থেকে উত্তোলন শুরু করতে। আশা করছি এই সময়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রে কোনো প্রভাব পড়বে না। তবে আমরা বলেছি যেহেতু গ্রীষ্মকাল সেহেতু এ অঞ্চলের বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখা জরুরি। সেজন্য সাশ্রয়ীভাবে কয়লা ব্যবহারের।’
দিনাজপুর জেলার পাবর্তীপুর উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নে বড়পুকুরিয়া এলাকায় কয়লা খনিকে কেন্দ্র করে নির্মাণ করা হয় এই তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। ২০০৬ সালে নির্মাণ করা বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ৫২৫ মেগাওয়াট। কেন্দ্রটিতে ১২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন ২টি ইউনিট এবং ২৭৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন আরেকটি মোট তিনটি ইউনিট রয়েছে। ২০১৭ সালে যোগ করা হয় ২৭৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন তৃতীয় ইউনিট।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড পরিচালিত এই বিদ্যুৎকেন্দ্র বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি দিয়েই উৎপাদন করে থাকে। কিন্তু কয়লা সংকটের কারণে সবগুলো ইউনিট একসঙ্গে পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। জানা গেছে, বর্তমানে ১ ও ৩ নম্বর ইউনিট চালু রাখা হয়েছে। যার জন্য প্রতিদিন প্রয়োজন হয় ২ হাজার টন কয়লা। পিডিবি বলছে, তিনটি ইউনিট চালু রাখতে হলে প্রয়োজন ৯ হাজার টন কয়লা। কয়লা সংকটের কারণে যা কখনোই সম্ভব হয়নি। এবার সাড়ে তিন মাস কয়লা উত্তোলন বন্ধ থাকলে এই পরিমান কয়লার যোগান দেওয়া কঠিন হবে বলে জানিয়েছে খনি কর্তৃপক্ষ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পিডিবি কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, যে পরিমান কয়লা খনিতে এখন মজুত রয়েছে তা দিয়ে বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী চলতে থাকলে তিনমাসের বেশি পরিচালনা করা সম্ভব না। যদি এর থেকে বেশি সময় লাগে তাহলে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হতে পারে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে জ্বালানি বিভাগ থেকে খনির কূপ পরিবর্তনের সময় সীমা কমিয়ে আনার অনুরোধ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে খনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যন্ত্রাংশের এলসি খোলার জন্য দেরি হওয়ায় এবার একটু সময় বেশি দরকার হবে।
জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, কূপ পরিবর্তন করার জন্য সাধারণত দুই থেকে আড়াই মাসের বেশি সময়ের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু এবার যন্ত্রাংশের জন্য এলসি খোলার বিষয়টি সামনে আসায় সময় বেশি লাগবে।
বিদ্যুৎ সরবরাহে শতভাগে পৌঁছেছে সরকার। কোনো কোনো অঞ্চলে প্রয়োজনের চেয়ে উদ্বৃতও থাকছে বিদ্যুৎ। কিন্তু উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহে এখনও অনেক ঘাটতি রয়েছে। পিডিবি বলছে, এই সমস্যার কারণে অন্য এলাকা থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে গেলেও লো ভোল্টেজের সৃষ্টি হয়। উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যাও অনেক কম। বড়পুকুরিয়া খনিকে কেন্দ্র করেই নির্মাণ করা হয়েছিলো বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র।
বিদ্যুৎ খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জ্বালানি পরিবহনে জটিলতা হওয়ায় উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বিনিয়োগ করতে উদ্যোক্তাদের অনীহা রয়েছে।
এর আগে, ২০১৮ সালের জুনে কূপ পরিবর্তন করার সময় বড়পুকুরিয়া খনি থেকে কয়লা চুরির ঘটনা সামনে আসে। তখন কয়লা সংকটের কারণে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি দীর্ঘ সময় বন্ধ রাখতে হয়েছিলো।
সারাবাংলা/জেআর/এমও