ঢাকা: দেশের নামকরা রানার অটোমোবাইলস লিমিটেড ৭০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা তথা ভ্যাটযোগ্য বিক্রয় মূল্য গোপন করেছে। একইসঙ্গে ২১ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।
বুধবার (১১ মে) দুপুরে সারাবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক এবং বর্তমান এনবিআর সদস্য ড. মইনুল খান।
তিনি জানান, ভ্যাট গোয়েন্দা টিম রানার অটোমোবাইলস লিমিটেডে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে প্রাথমিকভাবে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ৭০ কোটি ৪৭ লাখ টাকার ভ্যাটযোগ্য বিক্রয়মূল্য গোপন করেছে। গোপনকৃত বিক্রয়মূল্যে প্রায় ২০ কোটি ৮৬ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।
মইনুল খান আরও জানান, প্রতিষ্ঠানটি একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি। যার অধীনে ১টি কারখানা, ১টি বাণিজ্যিক আমদানিকারক এবং একাধিক গাড়ির শো-রুম রয়েছে। বাণিজ্যিক আমদানিকারক হিসেবে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানটি মোটর সাইকেল এবং থ্রি হুইলার আমদানি করে কোনোরূপ পরিবর্তন না করে গ্রাহকের কাছে সরবরাহ করে থাকে। কারখানা হিসেবে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানটি মোটর সাইকেল সিকেডি অবস্থায় আমদানি করে তা সংযোজন করে সরবরাহ করে। কারখানা হতে তিন ধরনের গ্রাহকের কাছে বিক্রয় করা হয় করর্পোরেট গ্রাহক (২) ডিলার এবং (৩) নিজস্ব শোরুম।
এদিকে ভ্যাট গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, একজন ক্রেতা ভ্যাট গোয়েন্দা দফতরে অভিযোগ দায়ের করেন। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভ্যাট গোয়েন্দার সহকারী পরিচালক মো. হারুন অর রশিদ এর নেতৃত্বে চলতি বছরের গত ৩০ মার্চ প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযানে গোয়েন্দার দল দেখতে পান, প্রতিষ্ঠানটি মাসিক দাখিলপত্রে প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।
পরিদর্শনের শুরুতে কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট সংক্রান্ত ও বাণিজ্যিক দলিলাদি প্রদর্শনের জন্য অনুরোধ করা হলে প্রতিষ্ঠানের সিএফও শনদ দত্ত ভ্যাট কর্মকর্তাগণের চাহিদা অনুসারে ভ্যাট দলিল উপস্থাপন করেন। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মূসক ফাঁকির আলামত থাকায় প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্থানে রক্ষিত কিছু বাণিজ্যিক ও মূসক সংশ্লিষ্ট দলিলাদি জব্দ করা হয়। এ সব তথ্য ভ্যাট দলিলাদির সঙ্গে ব্যাপক অসামঞ্জস্য পরিলক্ষিত হয়।
জানা গেছে প্রতিষ্ঠানটি ২০১৬ সালের জুলাই হতে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে ১ হাজার ৮৩৪ কোটি ৪৯ লাখ ৮১ হাজার ৮১৭ টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি মাসিক রিটার্নে সর্বমোট ১ হাজার ৭৬৪ কোটি ২ লাখ ৩৩ হাজার ১৫৬ টাকা বিক্রয় হিসাব প্রদর্শন করেছে। রিটার্ন ও প্রকৃত বিক্রয়ের পার্থক্য পাওয়া যায় ৭০ কোটি ৪৭ লাখ ৪৮ হাজার ৬৬১ টাকা।
তদন্ত অনুসারে এক্ষেত্রে প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করায় ১৫ কোটি ৫৯ লাখ ৫৭ হাজার ২৭৬ টাকা ভ্যাট ফাঁকি হয়েছে। এই ফাঁকির ওপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাস ভিত্তিক ২% হারে ৫ কোটি ২৬ লাখ ৯ হাজার ৩৯৫ টাকা সুদসহ সর্বমোট ২০ কোটি ৮৫ লাখ ৬৬ হাজার ৬৭১ টাকা প্রযোজ্য।