Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সম্রাটের চিকিৎসা কোথায়— সিদ্ধান্ত নেবে পরিবার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১২ মে ২০২২ ১৮:১৬

ঢাকা: ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের করা মামলা থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন বুধবার (১১ মে)। বিদেশ না যাওয়ার শর্তে জামিনে মুক্তি পান তিনি। তবে হার্টে গুরুতর সমস্যা থাকায় বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন ইসমাইল হোসেন সম্রাটের পরবর্তী চিকিৎসা কোথায় হবে সেটা নিয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলেননি চিকিৎসকরা। পরিবারের পক্ষ থেকে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান চিকিৎসকরা। তবে দেশেই তার চিকিৎসা সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তরও পাওয়া যায়নি বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১২ মে) বিএসএমএমইউয়ে আয়োজিত একটি সংবাদ সম্মেলনে ইসমাইল হোসেন সম্রাটের শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানান প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ও চিকিৎসকরা।

বিএসএমএমইউ’র হাসপাতাল বিভাগের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সোমবার (১৬ মে) আমরা একটি মেডিকেল বোর্ড করব। তার অবস্থা বিবেচনা করে পরিবারের সঙ্গে আলাপ করব। অভিভাবকরা না নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত তিনি এখানেই থাকবেন। এর মধ্যে কোনো অসুবিধা দেখা দিলে তাকে হয়তো আবারও লম্বা সময়ের জন্য এখানে থাকতে হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের হার্টের ক্যাপাসিটি ৬০-৬২ ভাগ থাকা দরকার, সেখানে ইসমাইল  চৌধুরী সম্রাটের হার্টের ক্যাপাসিটি ৩১-৩৩ ভাগ বা কখনও কখনও ৩৪ ভাগ ছিল। এখানে ভর্তি হওয়ার আগে তার ভাল্ব রিপ্লেসমেন্ট করা ছিল। এ পরিস্থিতিতে তিনি আমাদের কাছে এসেছেন। আমরা তাকে কয়েদি নয়, রোগী হিসেবে দেখেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সম্রাট হাসপাতালে থাকা অবস্থায়ও স্বাভাবিক কার্যক্রম করতে পারতেন না। আমরা শঙ্কিত ছিলাম, এখানে না তার কিছু হয়ে যায়। আজ সকালে আইজি প্রিজনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি জানালেন, আমাদের কাছে অফিশিয়াল কাগজ পাঠাবেন। তবে তাদের দিক থেকে সম্রাট মুক্ত।’

বিএসএমএমইউ পরিচালক বলেন, ‘আমরা একটা বোর্ড গঠন করব। তার শারীরিক অবস্থা দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এতদিন অন্য কোথাও চিকিৎসা নেওয়ার ব্যাপারে তারও কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। এখন আর সে বাধা নেই। তিনি বা তার পরিবার চাইলে এখানে বা অন্য কোথাও কিংবা দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে পারবেন।’

বিএসএমএমইউয়ের কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রায়হান মাসুম মণ্ডল বলেন, ‘ইসমাঈল চৌধুরী সম্রাটের হার্টের অবস্থা স্বাভাবিক আছে। তবে ওনার রোগের গতিবিধিটা এমন যে, ওষুধ চলা অবস্থায়ও যেকোনো সময় অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। গত তিন সপ্তাহে চেক করে দেখেছি তার জীবনের ঝুঁকি নেই। যে কারণে আমরা মোটামুটি সেইফ সাইডে ছিলাম যে, তিনি হাসপাতাল থেকে যেতে পারবেন।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘যতদিন তিনি আমাদের কাছে ছিলেন, তার অভিভাবক ছিল জেল কর্তৃপক্ষ। এখন তারা যদি এই দায়িত্ব পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে, তাহলে আমরা পরিবারের কন্ডিশন অনুযায়ী কী চিকিৎসা দরকার, সেটা জানাব। এরপর সিদ্ধান্ত তারা নেবেন, দেশে চিকিৎসা করাবেন নাকি বাইরে।’

ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, ফাইল ছবি

কার্ডিওলজি বিভাগের এই চিকিৎসক আরও বলেন, ‘তিনি (সম্রাট) কিছু সময় স্থিতিশীল থাকেন, আবার কিছু সময় অস্থিতিশীল। তার সাডেন কার্ডিয়াক ডেথ সিনড্রোম আছে। এর সঙ্গে ভাল্ব রিপ্লেসমেন্ট আছে। যখন প্রথম এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন, তার হৃদস্পন্দন এলোমেলো ছিল। সব মিলিয়ে অবস্থা এমন যে, দূর থেকে দেখলে মনে হবে একজন সুস্থ মানুষ বসে আছে। কিন্তু একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে যখন দেখবেন, তখন দেখা যাবে যে, তিনি তার হার্টের ভেতরে একটি অ্যাটম বোম নিয়ে বসে আছেন। যেটি স্বাভাবিকই থাকে, কিন্তু একটু এলোমেলো হলে মৃত্যু নিশ্চিত। যতক্ষণ তার জটিলতাগুলো ঠিক না হচ্ছে, তার এমন জায়গায় থাকতে হবে যে, দ্রুত সিসিইউ কিংবা কার্ডিওলজিস্টের শরণাপন্ন হওয়া যায়।’

সম্রাটের চিকিৎসা কি বাংলাদেশে করা সম্ভব, দেশের বাইরে কি নেওয়া হতে পারে— এমন প্রশ্নের উত্তরে বিএসএমএমইউয়ের কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রায়হান মাসুম মণ্ডল বলেন, ‘আমাদের চিকিৎসার সক্ষমতা আছে। কিন্তু এ বিষয়ে অভিভাবকরা সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি ভাল্বটা লাগিয়েছেন ১৯৯৮ সালে, সিঙ্গাপুরে। তার জন্য হাইলি ইকুইপ জায়গাতেই যাওয়া ভালো। এরকম জায়গা ঢাকা শহরে কম বা ততটা উন্নত নয়। যে কারণে সিঙ্গাপুর তার জন্য ভালো জায়গা। এর চেয়ে আরও ভালো জায়গায় চাইলেও তিনি যেতে পারেন।’

কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হারিসুল হক বলেন, ‘দেড় বছর আগে আমরা যখন তার এনজিওগ্রাম করলাম, তারপর বেডে নেওয়ার পর তিনি শকে চলে গেলেন। আমরা ইনজেকশন দিয়ে তার প্রেসার ওঠানোর ব্যবস্থা করলাম। তার হার্টে মেটালিক ভাল্ব আছে। তাকে তিনটি দামি ইনজেকশন দেওয়ার পর, আমাদের মাঝে আবার ফিরে এলেন। এরপর আবার তার অ্যানিমিয়া ফিরে এলো। তার মেটালিক ভাল্বের পরিস্থিতি কী সেটি জানতে হবে। এর জন্য ইলেকট্রফিজিওলজি স্টাডি দরকার। তার শরীরে একটি ধাতব বস্তু আছে সেখানে কারেন্ট দিয়ে দিয়ে ইলেকট্রফিজিও স্টাডি করবো। এতে আরেকটা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ জন্য হাইলি ইক্যুপমেন্ট আছে এমন জায়গায় যাওয়া ভালো। ঢাকায় আমরা এমন জায়গা এখনও ডেভেলপড করতে পারিনি। তিনি সিঙ্গাপুরের কথা বলেছেন, সেটা অবশ্যই ভালো জায়গা। তিনি চাইলে তার চেয়েও ভালো জায়গায় যেতে পারেন। আমরা আসলে ইলেকট্রফিজিওলজি স্টাডিতে অতটা সক্ষম না।’

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. আরিফুল ইসলাম জোয়ারদার টিটো, সহকারী পরিচালক ডা. এহসানুল কবির, ডা. এনায়েত তুষার, ডা. মোহাম্মদ কুতুব উদ্দিনসহ অন্যরা।

উল্লেখ্য, ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর সম্রাটকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। পরে তাকে নিয়ে দুপুর দেড়টার দিকে তার কাকরাইলের কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। এসময় ভেতর থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ, ইয়াবা, পিস্তল ও বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণীর চামড়া উদ্ধার করা হয়। বন্যপ্রাণীর চামড়া রাখার দায়ে তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

পরদিন র‍্যাব বাদী হয়ে সম্রাটের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করে। সেই সব মামলা তদন্ত করতে গিয়ে সম্রাটের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। পরে সিআইডি অর্থ পাচারের অভিযোগে এবং দুদক জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আরও দু’টি মামলা করে।

সারাবাংলা/এসবি/এমও

ইসমাইল হোসেন চৌধুরী টপ নিউজ যুবলীগ সম্রাটের চিকিৎসা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর