‘ক্ষমতাসীনদের কারসাজিতে ভরা মৌসুমেও বাড়ছে চালের দাম’
১৭ মে ২০২২ ১৬:১১
ঢাকা: ক্ষমতাসীনদের কারসাজিতে ভরা মৌসুমেও চালের দাম বাড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার (১৭ মে) দুপুরে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী কৃষকদল আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
সম্প্রতি কৃষকদলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সরেজমিনে হাওর এলাকা পরির্দশনে গিয়েছিলেন। সেখানকার সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরতে কৃষকদল এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। ‘হাওরে বাঁধ নির্মাণে কোটি কোটি টাকা লুটপাট-সর্বশান্ত কৃষকের ক্ষতিপুরণ দাবি’তে সংবাদ সম্মেলনে ৪ দফা সুপারিশমালা উপস্থাপন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এই ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ার কথা না। এখন তো চালের দাম পড়ার কথা, কমার কথা। কারণ বোরো কাটা হচ্ছে, দাম কমে আসার কথা। সেই জায়গায় সব চালের দাম বেড়ে গেছে। তার মানে– দেয়ার ইজ সাম প্রবলেমস ইন প্ল্যানিং, টোটাল প্ল্যানিংয়ের মধ্যে প্রবলেম আছে।’
তিনি বলেন, ‘সমস্যা হচ্ছে যে, এমন লোককে দায়িত্ব দিয়েছে যারা ব্যবসা করেন। এখন খাদ্য ব্যবসা যারা করেন তারা খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকেন। ফলে যা হচ্ছে, ওখানে ব্যবসাটা প্রধান হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এখন কী হচ্ছে; বড় বড় কৃষকরা ধান মজুত করছে, ব্যবসায়ীরা ধান মজুত করছে। কারণ কিছুদিন পর ধানের দাম আরও বাড়বে এবং তাদের মুনাফা বাড়বে। এটাই কারসাজি ওদের।’
হাওর অঞ্চলে বাঁধ নির্মাণে সরকারের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘হাওরের সমস্যা নতুন না। এটা পুরনো সমস্যা। খেয়াল করে দেখবেন, প্রায় প্রতিবছরই উজান থেকে পানির ঢল নেমে আসে। এই সময়ে পানির ঢল গোটা এলাকাকে প্লাবিত করে দেয়। যেখান থেকে পানি আসছে সেখান যদি প্রটেকশন দেওয়া যায়, যদি বাঁধ নির্মাণ করা যায় বা রিজার্ভার নির্মাণ করা যায় তাহলে সেখানে দুইটা কাজ হতে পারে। একটা হচ্ছে- বাড়তি পানি আটকিয়ে রাখা এবং সেটাকে পরবর্তী সময়ে সেচের কাজে ব্যবহার করা। এভাবে দুই/তিনটা ফসল করা যেতে পারে। দুর্ভাগ্যক্রমে এখন পর্যন্ত সেই ধরনের কোনো কর্মসূচি বা পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি।’
‘বর্তমান সরকারের সমস্যা হলো- সরকার সেই কাজগুলোই হাতে নেয় যেখানে তাদের নিজস্ব মুনাফা হয়, দুর্নীতি হয়, কমিশন পায়, কোটি কোটি টাকা বানাতে পারে। হাওর এলাকায় বাঁধ দেওয়া হয়েছে। সেই বাঁধগুলো এত ভঙ্গুর, এত খারাপ যে, সেগুলো চব্বিশ ঘণ্টাও পানির চাপ ধরে রাখতে পারে না। অর্থাৎ সেখানে পুকুর চুরি হয়েছে। এবং এটাই হচ্ছে সারা দেশে’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘কৃষিতে সরকার প্রথম দিকে একটা কার্ডের ব্যবস্থা করেছিল। সেই কার্ডের মাধ্যমে তারা সার দেবে। সেই সারও কিন্তু কৃষকের কাছে পৌঁছায় না। আপনাদের মনে থাকার কথা, ২০০৮ সালে যখন তারা নির্বাচনি প্রচারণা করে তখন তারা (আওয়ামী লীগ) বলেছিল কৃষকদের বিনামূল্যে সার দেবে। ভোট নেওয়ার জন্য এই সমস্ত মুখরোচক কথা তারা অনেক বলেছে। সেটা তো দূরে থাক, তিনশ’ টাকার ইউরিয়া সার এখন বারোশ’ টাকায়ও পাওয়া যায় না। এটাই সমস্যা।’
তিনি আরও বলেন, ‘মেশিন বা পাওয়ার টিলারস- এগুলো শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের লোকদের বিনা পয়সায় বিলি করেছে এবং সেখানে বড় রকমের দুর্নীতি করেছে। এই বিষয়গুলো দুর্ভাগ্যক্রমে সেভাবে মিডিয়ায় আসে না। কৃষিতে যে দুর্নীতি হচ্ছে, সেটা সহজে আসে না। আমি অনুরোধ করি গণমাধ্যমে আপনারা কৃষির সমস্যা ও কৃষকদের সমস্যাগুলো তুলে আনবেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বর্তমানে কৃষিকাজ অলাভজনক হওয়ায় প্রান্তিক কৃষকরা তা ছেড়ে দিয়েছে। তারা ভিন্ন পেশায়। কেউ রিকশা চালায়, কেউ ভ্যান চালায়। এমনকি মধ্যম কৃষক যারা তারাও কৃষিকাজ ছেড়ে দিচ্ছে।’ কৃষক ও কৃষি খাতের উন্নয়নে জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার শাসনমালে নেওয়া পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন সাবেক এই কৃষি প্রতিমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দিন আলম, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মীর সরফত আলী সপু, কৃষকদলের গৌতম চক্রবর্তী, জামাল উদ্দিন খান মিলন, এসএম ফয়সাল, ভিপি ইব্রাহিম, সৈয়দ অলিউল্লা্হ সিদ্দিকী, ফেরদৌস পাটোয়ারি, মাহুমদা হাবিবা, ইউসুফ আলী মোল্লা, মেহেদি হাসান পলাশ, ইশতিয়াক আহমেদ নাসির, জাহাঙ্গীর আলম, কাদের সিদ্দিকীসহ কৃষকদলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম