৫ জেলার অবৈধ ইটভাটার বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ
১৭ মে ২০২২ ১৮:৪৯
ঢাকা: ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর জেলায় বন্ধ করা কিংবা গুঁড়িয়ে দেওয়া অবৈধ ইটভাটার তালিকা প্রতিবেদন আকারে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এসব জেলার অবৈধ ইটভাটা সম্পর্কেও তথ্য জানাতে বলেছেন আদালত।
আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে পাঁচ জেলার জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালককে (ডিজি) এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। তবে আদালত পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ পাঁচ জেলা প্রশাসককে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৭ মে) বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আদেশ দেন। একই বিষয়ে আজ (মঙ্গলবার) আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন মহাপরিচালকসহ পাঁচ জেলা প্রশাসক।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাইনুল হাসান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নাসিম ইসলাম রাজু। আর পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আমাতুল করিম।
এর আগে, গত ২০ এপ্রিল বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করায় পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ পাঁচ জেলার জেলা প্রশাসককে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। তাদের সশরীরে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য আজকের দিন (১৭ মে) নির্ধারণ করা ছিল।
বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছিলেন।
ডিসিদের ব্যাখার বিষয়ে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, অবৈধ ইটভাটা বন্ধে ঢাকাসহ পাঁচ জেলা প্রশাসক আজ (মঙ্গলবার) আদালতে উপস্থিত হয়েছিলেন। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী ঢাকার বাইরের চার জেলায় অবৈধ ইটভাটার ৯৫ শতাংশ বন্ধ হয়ে গেছে। আর ঢাকার মধ্যে বন্ধ হয়েছে ৬৫ শতাংশ। কিন্তু সরেজমিনে তদন্ত করে তাদের ব্যাখ্যার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মনজিল মোরসেদ আরও জানান, সাংবাদিকরা অনুসন্ধান করে দেখেছেন— পরিবেশ অধিদফতরের প্রতিবেদনে গড়মিল রয়েছে। পরে আদালত এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছেন। একইসঙ্গে আদালতের দেওয়া সময়ের মধ্যে কতগুলো ইটভাটা বন্ধ হয়েছে, তার সঠিক হিসাব দাখিল করতে বলা হয়েছে।
মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে আদালত অবমাননার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেওয়া দেন আদালত। আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ঢাকার বায়ু দূষণ রোধে হাইকোর্ট একাধিক আদেশ দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, আদালত অবৈধ ইটভাটার তালিকা চেয়েছিলেন। পরে ৩১৮টি অবৈধ ইটভাটার তালিকা আদালতে জমা দেওয়া হয়। সেগুলো বন্ধ করার জন্য আমরা নির্দেশনা চেয়েছিলাম। এরপর জেলা প্রশাসকরা প্রতিবেদন দিয়ে জানান, তারা অনেকগুলো ইটভাটা বন্ধ করেছেন। কিন্তু সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে আসে— এখনো অনেক অবৈধ ইটভাটা চালু রয়েছে, যেগুলো বন্ধ করেছিলেন বলে দাবি করেছিলেন জেলা প্রশাসকরা।
মনজিল মোরশেদ বলেন, অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি আমরা হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে হাইকোর্টের নজরে আনলে পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক ও পাঁচ জেলা প্রশাসককে আজ (মঙ্গলবার) হাইকোর্টে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যখ্যা দিতে নির্দেশ দেন আদালত। এরই ধারাবাহিকতায় আজ জেলা প্রশাসকরা আদালতে উপস্থিত হয়ে তাদের ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
ঢাকা শহর ও আশেপাশের এলাকায় বায়ু দূষণ বন্ধে ২০১৯ সালে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছিল এইচআরপিবি। রিটে পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক ও সচিব, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও প্রধান নির্বাহী এবং পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালকসহ মোট ১১ জনকে বিবাদী করা হয়।
ওই রিটের শুনানি শেষে ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি ৯ দফা নির্দেশনা জারি করে তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, ওইসব নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হলে বায়ুদূষণ কিছুটা কমতে থাকে। কিন্তু এরপর ঢাকা শহর আবার সর্বোচ্চ বায়ুদূষণের শহর হিসেবে চিহ্নিত হয়। এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে এইচআরপিবির পক্ষে সম্পূরক একটি আবেদন দাখিল করে অবৈধ ইটভাটা বন্ধের নির্দেশনা চাওয়া হয়।
সারাবাংলা/কেআইএফ/টিআর