Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

খোলা বাজারে ডলার ছাড়াল ১০০ টাকা

গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৭ মে ২০২২ ২০:৪৯

ঢাকা: গত দেড় মাসে দেশে মার্কিন ডলারের দাম বেড়েছে ১ টাকা ৯০ পয়সা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবেই এখন প্রতি ডলারের দাম ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা। তবে খোলা বাজার বা কার্ব মার্কেটে ডলার যেন এখন সোনার হরিণ। প্রথমবারের মতো কার্ব মার্কেটে এর দাম ছাড়িয়েছে ১০০ টাকা।

মঙ্গলবার (১৭ মে) রাজধানীর মতিঝিল ব্যাংক পাড়া, পল্টন ও বায়তুল মোকাররমহ বিভিন্ন এলাকার মানি এক্সচেঞ্জ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এদিন প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১০২ টাকায়। এর আগের দিনই কার্ব মার্কেটে ডলার বিনিময় হয়েছে ৯৭ থেকে ৯৮ টাকায়। শুধু তাই নয়, ডলারের সংকটও রয়েছে খোলা বাজারে।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, সোমবার (১৬ মে) এক দিনে ৮০ পয়সা বাড়িয়ে ডলারের দাম ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা বেঁধে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ডলার বেচাকেনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খোলা বাজার তো বটেই, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া এই দাম মানছে না বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও। ব্যাংকে এলসি (ঋণপত্র) করতে গেলে ডলারের বিপরীতে নেওয়া হচ্ছে ৯২ থেকে ৯৬ টাকা।

আরও পড়ুন- এক দিনে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমলো ৮০ পয়সা

রেইনবো মানি এক্সচেঞ্জের পরিচালক রফিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ডলার কী বিক্রি করব, ডলারই তো পাচ্ছি না! আগে প্রতিদিন চার-পাঁচ হাজার ডলার বিক্রি করতাম। এখন দিনে দুই থেকে তিনশ ডলারও বিক্রি করতে পারছি না। কারণ ডলার নেই।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার সকালে প্রতি ডলার বিক্রি করেছি ৯৮/৯৯ টাকায়। দুপুরের পর ডলার বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১০২ টাকায়। ব্যাংকগুলো আমাদের কাছে কোনো ডলার বিক্রি করছে না। ফলে ডলারের দাম আজ ১০২ টাকা উঠে গেছে। বাজারে ডলারের সংকট থাকার কারণে আগামীকাল (বুধবার) ডলারের দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এই ব্যবসায়ী।

বিজ্ঞাপন

মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায় যুক্ত রফিকুল ইসলামের মতো আরও কয়েকজন ব্যবসায়ীও বলছেন একই কথা। তারা বলছেন, বাজারে ডলারের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সেই চাহিদা মেটানোর মতো পর্যাপ্ত ডলারের সরবরাহ নেই। কার্ব মার্কেটের চাহিদার খুব সামান্যই তারা পূরণ করতে পারছেন। শিগগিরই ডলারের সরবরাহ না বাড়লে এর দাম বাড়তেই থাকবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, রফতানির তুলনায় আমদানির ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ডলারের চাহিদা বাড়ছে। ব্যাংকগুলোর চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার সরবরাহ করছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক চা‌হিদার বিপরী‌তে ব্যাংকগুলোর কাছে পাঁচ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিক্রি করা হয়েছে। বাজারের চাহিদা মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজন অনুযায়ী ডলার সরবরাহ অব্যাহত রাখবে।

জানা গেছে, সবশেষ ২০ দিনের ব্যবধা‌নে তিন দফায় ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন হয় এক টাকা ৩০ পয়সা। সোমবার (১৬ মে) আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার কিনতে খরচ করতে হয়েছে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ডলা‌রের দাম ছিল ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা। এছাড়াও গত ১০ মে প্রতি ডলার ছিল ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা এবং ২৭ এপ্রিল এর দাম ছিল ৮৬ টাকা ২০ পয়সা।

এদিকে, গত কয়েক বছরের ডলারের দাম বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২০ সালের জুলাই থেকে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায়। এ সময় মুদ্রাবাজার অনেকটাই স্থিতিশীল ছিল। ২০২১ সালের শেষের দিকে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ডলারের চাহিদা বেড়ে যেতে থাকে। ফলে কমতে শুরু করে টাকার মান।

জানা গেছে, ২০২১ সালের ২২ আগস্ট প্রথমবারের মতো এক ডলারের দাম ৮৫ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এরপর চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি ৮৬ টাকা ও গত ২৩ মার্চ আন্তঃব্যাংকে ডলারের রেট ২০ পয়সা বেড়ে হয় ৮৬ টাকা ২০ পয়সা। গত ২৭ এপ্রিল আ‌রও ২৫ পয়সা বেড়ে ডলারের রেট দাঁড়ায় ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সায়। এরপর গত ১০ মে আরও ৫ পয়সা বাড়ে ডলারের দাম। সবশেষ গতকাল সোমবার আরও ৮০ পয়সা বেড়ে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম গিয়ে ঠেকে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সায়। কিন্তু কার্ব মার্কেটে এই দর মঙ্গলবার ১০০ টাকাও ছাড়িয়ে গেল।

রেকর্ড ডলার বিক্রি

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের গত ১২ মে পর্যন্ত ডলারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক ৫০২ কোটি ডলার বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে বিক্রি করেছে। অথচ ২০২০-২১ অর্থবছরে টাকার মান ধরে রাখতে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে উল্টো ৮ বিলিয়ন বা ৮০০ কোটি ডলার কিনেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

আমদানি ব্যয় বেড়েছে

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে রফতানি বেড়েছে ৩২ দশমিক ৯২ শতাংশ। তবে একই সময়ে আমদানি বেড়েছে ৪৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রফতানি আয় হযেছে তিন হাজার ৬৬২ কোটি ডলার। একই সময়ে আমদানির পেছনে ব্যয় করতে হয়েছে ৬ হাজার ১৫২ কোটি ডলার। এই সময়ে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দুই হাজার ৪৯০ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ

এদিকে আমদানির ব্যয় পরিশোধ করতে ডলার ওপর চাপ পড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও চাপ পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ২৪ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ রেকর্ড ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছিল। গত ১১ মে তা কমে ৪১ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

কার্ব মার্কেট খোলা বাজার ডলার ডলারের দাম মানি এক্সচেঞ্জ কোম্পানি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

দু’দিনে ভারতে ৯৯ টন ইলিশ রফতানি
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৩৪

সম্পর্কিত খবর