Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অনেক জীবাণুর বিরুদ্ধেই অকার্যকর একাধিক অ্যান্টিবায়োটিক

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৯ মে ২০২২ ০৯:৫৭

প্রতীকী ছবি

ঢাকা: দেশে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ ও খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়া গুরুত্বপূর্ণ বেশিরভাগ জীবাণুর বিরুদ্ধেই অকার্যকর একাধিক অ্যান্টিবায়োটিক। অর্থাৎ বেশিরভাগ জীবাণু অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করেছে। ফলে অনেক অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ওষুধই আর এসব জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করছে না। গবেষণায় উঠে এসেছে, এসব জীবাণুর ৩১ থেকে ৬৭ শতাংশের বিরুদ্ধে একাধিক অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ওষুধ কার্যকারিতা হারিয়েছে। এছাড়া ১৫ থেকে ৫০ শতাংশ জীবাণুর ওপর অধিকাংশ অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ওষুধ কাজ করছে না।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত ক্ষতিকর রেজিস্ট্যান্ট জীবাণুসমূহের উপস্থিতি দেশের কিছু কিছু নমুনাতে পাওয়া গেছে। এসকল জীবাণু জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ ও খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তাই জরুরি ভিত্তিতে নজরদারি বাড়ানোর মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুবই জরুরি বলে গবেষণার ফলাফল দেখে জানানো হয়েছে। কারণ দেশের অনেক মাইক্রোবায়োলজী ল্যাবগুলোতে এএমআর ডাটা সঠিকভাবে সংরক্ষণ হয় না। এক্ষেত্রে ল্যাবগুলোর মাণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উন্নতি করা প্রয়োজন বলেও উঠে এসেছে গবেষণার ফলাফলে।

দেশের ৩২টি ল্যাব থেকে ১০ লাখের বেশি কালচার সেনসিটিভিটি রিপোর্ট নিয়ে গবেষণার পর এ তথ্য দিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও ক্যাপচুরা। এ অবস্থায় গবেষকরা বলছেন, অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার বন্ধ না হলে আগামীতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।

বাংলাদেশে চলমান অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেসিস্ট্যান্স (এএমআর) পরিস্থিতি ও এএমইউ ট্রেন্ডস শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে গবেষণা ফলাফল হিসেবে এসব তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর (ডিজিডিএ) এবং সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ, গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ (আইইডিসিআর) কয়েকটি সংস্থার বিভিন্ন গবেষণা তুলে ধরা হয়। গতকাল বুধবার (১৮ মে) রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা (সিডিসি) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

গবেষণা ফলাফল জানিয়ে অনুষ্ঠানে বলা হয়, ক্যাপচুরা গবেষণার ফলাফলগুলোর মাধ্যমে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) এবং ব্যবহার (এএমইউ) বিষয়ে পুরাতন এবং বর্তমান তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের ১১টি সরকারি ও ২৩টি বেসরকারিসহ মোট ৩৪টি ল্যাবরেটরি এবং ৫টি বেসরকারি মডেল ফার্মেসি থেকে বিগত ৪ বছরের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) এবং ব্যবহার (এএমইউ) বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় তথ্য ব্যবস্থাপনা অনুশীলন কার্যক্রমকে মানসম্মতভাবে পর্যালোচনা করা এবং জাতীয়, আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক স্তরে তথ্য ভাগাভাগি করতে উৎসাহিত করার জন্য কাঠমো তৈরি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অ্যান্টিবায়োটিক সাসেপ্টবিলিটি টেস্টটিং (এএসটি) ডাটা বিষয়ক ১০ লাখেরও বেশি রোগীর রিপোর্টে চিহ্নিত করা, ডিজিটাল তথ্যে পরিবর্তন, সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

গবেষণায় ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসসহ বিভিন্ন জীবাণু দিয়ে আক্রান্ত রোগীদের থেকে বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করে মাইক্রোবায়োলজিক্যাল পরীক্ষা করা হয়েছে। এসব পরীক্ষায় বিভিন্ন গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক গুলোর সেন্সিটিভিটি ও রেজিস্ট্যান্স প্যাটার্ন নিরীক্ষা করা হয়েছে।

গবেষণা থেকে পাওয়া ফলাফলে দেখা গেছে, বিভিন্ন জীবাণু অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ওষুধগুলোর বিরুদ্ধে রেজিস্ট্যান্স হয়ে গেছে। এই গবেষণায় প্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ জীবাণুগুলোর মধ্যে গড়ে ৩১ শতাংশ হতে ৬৭ শতাংশ জীবাণুই মাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্স অর্থাৎ অনেক অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ওষুধই এদের বিরুদ্ধে অকার্যকর। এছাড়াও অনেক জীবাণু (জীবাণু ভেদে ১৫ শতাংশ থেকে ৫০শতাংশ) প্রায় অধিকাংশ অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ওষুধের বিরুদ্ধে অকার্যকর হিসেবে পাওয়া গেছে।

গবেষণা থেকে পাওয়া ফলাফলে আরও দেখা গেছে, এশেরিকিয়া কোলাইর (E. Coli) মতো ব্যাকটেরিয়া এবং স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াসের (Staphylococcus aureus)সেন্সিটিভিটির প্রবণতা বিগত চার বছরে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায়নি। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত ক্ষতিকর রেজিস্ট্যান্ট জীবাণুসমূহের উপস্থিতি দেশের কিছু কিছু নমুনাতে পাওয়া গেছে। এ সকল জীবাণু জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ ও খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আর তাই এগুলো জরুরি ভিত্তিতে মনিটরিং জোরদারের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুবই জরুরি।

গবেষণায় আরাও দেখা গেছে, যেসকল অ্যান্টিবায়োটিক সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করা উচিত (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়াচ গ্রুপ এবং রির্জাভ গ্রুপ), সেসকল অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বাংলাদেশে অনেক বেশি ( প্রায় ৭০ শতাংশ থেকে ৮৮ শতাংশ)। অথচ এই সব ওষুধের ব্যবহার ৪০ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখা উচিত।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের নেতৃত্বে ইন্টারন্যাশনাল ভ্যাক্সিন ইন্সটিটিউটের (আইভিটি) অধীন ক্যাপচুরা কনসোর্টিয়ামের উদ্যোগে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স এবং ব্যবহার সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও গবেষণার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। আইভিআই একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা, যার লক্ষ্য বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ, কার্যকরী এবং সাশ্রয়ী মূল্যের ভ্যাক্সিন আবিষ্কার, বিকাশ এবং সরবরাহ করা। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে ক্যাপচুরার গত দুই বছরের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম পর্যালোচনা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই উদ্যোগে দ্য ফ্লেমিং ফান্ড, ইউকে এইড কর্মসূচি অর্থায়ন করেছে।

গবেষণা ফলাফল জানিয়ে অনুষ্ঠানে বলা হয়, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুতর এবং ক্রমবর্ধমান হুমকি। এই গবেষণা থেকে পাওয়া ফলাফলগুলো বাংলাদেশ সরকারকে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স সংবরণ কার্যক্রমে তথ্যপ্রমাণ ভিত্তিক নীতি এবং অনুশীলন নির্ধারণ ও এর প্রয়োগ করতে সাহায্য করবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর রোগের নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন। বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ সম্বলিত কার্যক্রম জোরদার করার মাধ্যমে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স সংবরণের লক্ষ্যে কাজ করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেন তিনি।

ক্যাপচুরা প্রজেক্ট লিড কর্মকর্তা ড. নিমেশ পাউডিয়াল বলেন, আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে তাদের অংশীদারিত্বের জন্য কৃতজ্ঞ, এই গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টার জন্য কার্যকরী এবং টেকসই কৌশলগুলোর সমন্বয়ে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বিস্তার বন্ধে প্রতিরোধের ভিত্তি তৈরিতে আমাদের অংশীদার ল্যাবরেটরি এবং ফার্মেসিতে ঘনিষ্ঠ অংশগ্রহণ করার জন্য।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এই গবেষণা জাতীয় পরীক্ষাগার এবং সারভাইল্যান্স ক্ষমতার উপর একটি কার্যকরী ভিত্তিরেখা প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। এই সক্ষমতাগুলোকে ভবিষ্যতে টিকিয়ে রাখার জন্য একটি নিয়মতান্ত্রিক এবং প্রগতিশীল পদ্ধতির বিকাশ ঘটেছে এবং সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতের মধ্যে বৃহত্তর সহযোগিতা ও বিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স সংবরণে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ব্যতীত কোনো প্রকার অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রয় বন্ধ ও গ্রহণ বন্ধ করা জরুরি। একইসঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিকের যৌক্তিক ব্যবহার সুনিশ্চিতকরণে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সচেতনতা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, আমরা খুব দ্রুতই অ্যান্টিবায়োটিক যত্রতত্র ব্যবহারের বিরুদ্ধে কাজ শুরু করছি। রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন বাদে কেউ অ্যান্টিবায়োটিক কিনতে বা বিক্রি করতে পারবে না।

অনুষ্ঠানে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, অ্যান্টিবায়োটিকসহ অন্যান্য ওষুধের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ, লাইসেন্সিং ও আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে ঔষধ প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। এই গবেষণার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহার করে সার্ভেইল্যান্স কার্যক্রমকে উন্নত করা সম্ভব।

সারাবাংলা/এসবি/এনএস

অ্যান্টিবায়োটিক টপ নিউজ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর