ভাড়া ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়, এবার কঠোর হবে ইউজিসি
২০ মে ২০২২ ১০:০১
ঢাকা: যেসব বিশ্ববিদ্যালয় এখনো নিজস্ব ক্যাম্পাসে যায়নি, তাদেরকে নিয়ে ভালোই বিপদে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে প্রতিবছর এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে কমিশনের পক্ষ থেকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। কিন্তু বছর শেষে সবকিছু আগের মতোই চলে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যবসা চলছে রমরমা।
এসব বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগের শেষ নেই। না জেনে ভর্তি হয়ে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটাই কষ্ট করতে হয় তাদের। ভর্তি থেকে শুরু করে সার্টিফিকেট গ্রহণ পর্যন্ত নাজেহাল হতে হয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলছেন, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো কম তবে ব্যবসা বেশি। তার ওপরে আবার ক্লাস কিংবা পরীক্ষায় অংশ নিতে হয় শপিং মলের মতো কোনো একটি বিল্ডিং ভবনে, সেখানেও আবার থাকতে হয় নানা নিয়মের জালে বন্দি।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, নিজস্ব ক্যাম্পাস থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তারা এমন হয়রানির শিকার হতেন না। তাছাড়া উচ্চশিক্ষায় নন-কারিকুলাম অনেক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারতেন তারা, যা তাদেরকে কর্মজীবনের জন্য দক্ষ করে তুলত। হতাশা কাটিয়ে প্রাণবন্ত শিক্ষাজীবন পেতেন তারা।
ইউজিসিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্যাম্পাসবিহীন এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে বিস্তর অভিযোগ পেয়ে থাকে কমিশন। অভিযোগ করেন সাবেক শিক্ষকরাও। তাই এই বছরেই নিজস্ব ক্যাম্পাসে না যাওয়া এমন ২২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
কমিশন বলছে, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব ক্যাম্পাসে না গেলে ২০২৩ সালের জানুয়ারি শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভবন অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া হবে। এই সিদ্ধান্তটি ইতোমধ্যেই নেওয়া হয়েছে। কমিশনের পক্ষ থেকে এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়েও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই সিদ্ধান্ত কি আসলেই নেওয়া হয়েছে নাকি এটিও প্রতিবারের মতো রুটিন হুমকি? কমিশনের প্রভাবশালী একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, এবার হুমকি-ধমকি নয়, নিজস্ব ক্যাম্পাসে না গেলে এসব বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরিভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তদারকি করেন ইউজিসির সদস্য বিশ্বজিৎ চন্দ। তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ওই সব বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে হবে। এটি যদি তারা না করে, তাহলে তাদেরকে আর কার্যক্রম পরিচালিত করতে দেওয়া হবে না। তাদের স্থায়ী ক্যাম্পাস ছাড়া অন্য কোথাওয় শিক্ষার্থী ভর্তি করতে দেওয়া হবে না।
এবছরের মধ্যে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজ ক্যাম্পাসে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো, দ্য মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, শান্ত–মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, রয়েল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ ও ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।
এছাড়াও এখনও পর্যন্ত নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে, দ্য পিপল’স ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, মানারত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রয়েছে। এবছরের মধ্যে তাদেরকেও পুরোপুরি ভাবে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে বলা হয়েছে।
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বর্তমানে বনানী ও গ্রিন রোডে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। তবে সাতারকুলে বিশ্ববিদ্যালয়টির আংশিক কার্যক্রম চলছে। নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে এক বছর বেশি সময় লাগবে বলে ইউজিসিকে জানিছে তারা।
তাদের মতো মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ও দুই আশুলিয়া ও ঢাকায় শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। নির্দেশ পাওয়া প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়েই খোঁজ নিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। এছাড়াও অননুমোদিত ক্যাম্পাসের জন্য ইউজিসির ওয়েবসাইটে ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ ও সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির নামের পাশে লাল তারকা চিহ্ন দেওয়া হয়েছে।
ইউজিসি বলেছে, এবছরের মধ্যে ভাড়া বাসায় তল্পিতল্পা গোটাতে হবে তাদেরকে।
তবে ইউজিসির নির্দেশের প্রেক্ষিতে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে স্টেট ইউনিভার্সিটি, আশা ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় আরও সময় চেয়েছে। আগে সময় চাইলে এবার ২০২২ সালের মধ্যেই নিজের ক্যাম্পাসে যাবে বলে লিখিত দিয়েছে নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি। আর চট্টগ্রামের ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগাং ইউজিসিকে কোন জবাব দেয়নি।
বিশ্বজিত চন্দ বলেন, নিজস্ব ক্যাম্পাস যাদের রয়েছে তাদেরকে কেন ভাড়া বাসায় ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে? এটা নিজের ক্যাম্পাসেই করা যায়। সব কার্যক্রম এক জায়গায় নিয়ে গেলে শিক্ষার পরিবেশও সুন্দর হয়। নিজস্ব ক্যাম্পাসের বিষয়ে এখন আর কোন ছাড় দেওয়া হবে না। আর যেসব বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের চিঠির জবাব দেয়নি, তাদের বিষয়ে কমিটি গঠন করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, দেশে ১০৮টি অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় আইনে বলা আছে, প্রতিষ্ঠার সাত বছরের মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে হবে। ঢাকা তাদের ক্যাম্পাস এক একর এবং চট্টগ্রামে দুই একর জমি থাকতে হবে। ২০১০ সালে সংশোধিত আইন হওয়ার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে তাড়া দিচ্ছে সরকার। তবে তারা কেউই সেটি শুনছে না।
/টিএস
সারাবাংলা/টিএস/এএম