Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঈশ্বরদীতে চেয়ারম্যানের সামনে ইউপি কক্ষে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৩ মে ২০২২ ০৯:১৮

পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার সাঁড়া ইউনিয়ন পরিষদের কক্ষে চেয়ারম্যান এমদাদুল হক রানার সামনে রাব্বি হোসেন চঞ্চল (১৮) নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী চেয়ারম্যানসহ দোষীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।

রোববার (২২ মে) সকালে ঈশ্বরদী সাঁড়া ইউনিয়নের ইলশামারি গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। নিহত রাব্বি হোসেন চঞ্চল ঈশ্বরদীর মাঝদিয়া পুরাতন রেললাইন এলাকার জাহিদুল ইসলাম ঘোরতের ছেলে।

বিজ্ঞাপন

নিহত রাব্বি হোসেন চঞ্চলের বাবা জাহিদুল ইসলাম ঘোরত অভিযোগ করেন, আমার ছেলে রাব্বি হোসেন চঞ্চলকে চোর সন্দেহে গত শনিবার আনুমানিক রাত দুইটার দিকে ঈশ্বরদীর সাঁড়া ইউনিয়নের ইলশামারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন মোড়ে শিহাব, ওহাবসহ কয়েকজন আটক করে। সেখানে তারাসহ এলাকাবাসী রাব্বিকে মারপিট করে সাঁড়া ইউপি চেয়ারম্যান এমদাদুল হক রানা সরদারকে অবগত করেন। চেয়ারম্যান পরিষদের চৌকিদার আজগার আলীকে পাঠিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চঞ্চলকে সাঁড়া ইউনিয়ন পরিষদে আনেন। খবর পেয়ে আমিসহ আমার ভাই ও ভাতিজাদের নিয়ে চেয়ারম্যান এমদাদুল হক রানা সরদারের নিকট যাই। ক্ষমা চেয়ে ছেলেকে আমার নিকট দেওয়ার জন্য অনুরোধ করি। তখন চেয়ারম্যান বলেছিলেন, তোমার হাতে রাব্বিকে দেওয়া যাবে না। সকালে থানায় পাঠানো হবে। এরপর আমাদের উপস্থিতিতেই চেয়ারম্যানের নির্দেশে ইউনিয়ন পরিষদের কক্ষে রাব্বিকে বেদম মারপিট করা হয়। নিরুপায় হয়ে আমরা বাড়িতে চলে আসি।

তিনি বলেন, রোববার সকালে আমার ছেলের (রাব্বি) খোঁজে থানায় এসে জানতে পারি, তাকে থানায় দেওয়া হয়নি। এরপর চৌকিদার আজগরসহ কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তখন তারা জানায় রাব্বিকে হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ও পায়ে হেঁটে বাড়ি চলে গেছে। কিন্তু আমরা রাব্বিকে কোথায় খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এরপর দুপুর একটার দিকে শহরের রেলগেট সংলগ্ন বাস টার্মিনাল সংলগ্ন ঝোঁপের মধ্যে রাব্বি অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে বলে লোকমুখে শুনতে পাই। তখন সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে ঈশ্বরদী উপজেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

বিজ্ঞাপন

রাব্বির বাবা আরও বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ কক্ষে আটক রেখে সারারাত ধরে রাব্বিকে মারপিট করা হয়। তার অবস্থা গুরুতর হয়ে পড়লে তাকে ঈশ্বরদী হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাব্বির শরীরের বিভিন্ন জায়গায় সেলাই দেওয়া হয়। এরপর রাব্বির মৃত্যু হলে, তারা রাব্বির লাশ ঘটনাস্থলে ফেলে পালিয়ে যায়।

ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রেজিস্টার খাতা দেখে ও সেই সময়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সূত্রে জানা যায়, রোববার সকাল ৯টায় ঈশ্বরদীর ইলশামারি গ্রামের সৈয়দ মণ্ডলের ছেলে সাদেক আলী পরিচয়ে রাব্বি হোসেন চঞ্চলকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। চঞ্চলের সমস্ত শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিলো। নাখ, মুখ, কপাল, মাথা, হাত দিয়ে রক্ত ঝরতে ছিল। সেই সময় তার অবস্থা ভালো ছিল না। এমতাবস্থায় তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে সেলাই দিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তার সঙ্গে আসা লোকজন উন্নত চিকিৎসার কথা বলে ছাড়পত্র ছাড়াই রাব্বিকে নিয়ে চলে যান।

ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, চোর সন্দেহে এলাকাবাসী রাব্বি হোসেন চঞ্চলকে আটক করে গণপিটুনি দেয়। এরপর হাসপাতালে এনে চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে নেওয়ার পথে রাব্বির মৃত্যু হয়। তখন তারা রাব্বির লাশ বাস টার্মিনালের পাশে রেখে পালিয়ে যান।

ওসি আরও জানান, লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাঁড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমদাদুল হক রানা সরদার মোবাইল ফোনে বলেন, একটি পক্ষ তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। রাব্বি হোসেন চঞ্চলকে ইলশামারী এলাকাবাসী আটক করে মারপিট করে এবং আমাকে খবর দেয়। তাকে মারপিট করা হয়েছে বলে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার নির্দেশ দিই। রাব্বি হোসেন চঞ্চলকে পরিষদ কক্ষে এনে মারপিট করার কোনো প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না বলেও দাবি করেন চেয়ারম্যান রানা সরদার।

এদিকে সাঁড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমদাদুল হক রানা সরদারসহ দোষীদের শাস্তির দাবিতে মাঝদিয়া পুরাতন রেললাইন এলাকায় বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকাবাসী।

সারাবাংলা/এএম

ঈশ্বরদী

বিজ্ঞাপন

মাদকের টাকার জন্য মা'কে খুন
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৭

আরো

সম্পর্কিত খবর