কমছে না ‘লাগেজ বিড়ম্বনা’, থার্ড টার্মিনালে মিলবে সমাধান
২৪ মে ২০২২ ১০:৩৪
ঢাকা: হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লাগেজ বিড়ম্বনার যেন শেষ নেই। যেখানে বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরে লাগেজ পেতে ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময়ও লাগে না, সেখানে দেশের সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঘণ্টা পেরোলেও লাগেজের দেখা মেলা না। ক্ষেত্র বিশেষ ২ থেকে আড়াই ঘণ্টা সময়ও অপেক্ষা করতে হয় যাত্রীদের। বিমানবন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, থার্ড টার্মিনাল চালু না হওয়া পর্যন্ত এই সমস্যার সমাধান হবে না।
বিমানবন্দরে একাধিক যাত্রীদের সঙ্গে কথা হয় সারাবাংলার, যেখানে যাত্রীদের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয় লাগেজ পেতে কত সময় লাগছে? সৌদি থেকে এসেছেন রুবেল এবং তার স্ত্রী। তারা জানান, জেদ্দাতে যখন যাওয়া হয় তখন ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে লাগেজ পেয়ে যান। কিন্তু দেশে এসে দেড় ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছেন কিন্তু লাগেজের দেখা নেই। শতশত মানুষ লাগেজের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন লাগেজ বেল্টে।
ওমরা করতে গিয়ে রফিকুল ইসলাম এবং তার সহধর্মিনী। তিনি বলেন, ‘ওমরা করতে গিয়েছিলাম। সৌদিতে কোনো ধরনের ভোগান্তি নেই। দেশে এসে লাগেজ পেতে ভোগান্তিতে পড়েছি। ৬টি লাগেজ, তার মধ্যে ৪টি পেয়েছেন। বাকি দুইটার জন্য অপেক্ষা করছেন।’ কতো সময় ধরে অপেক্ষা করছেন জানতে চাইলে বলেন, ‘ঘণ্টা ২ হবে। আর এসব সহ্য হচ্ছে না।’
হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে লাগেজ বিড়ম্বনা এখন নিত্যদিনের সঙ্গী। বিদেশে থেকে দেশে এসে কম বেশি সব যাত্রীকেই পড়তে হচ্ছে ভোগন্তিতে।
বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যাল্ডেলিংয়ের দায়িত্বে রয়েছে বিমান বাংলাদেশ। বিমানবন্দরে যাত্রীদের ভোগান্তিসহ লাগেজ বিড়ম্বনা কেন কমছে না জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল বলেন, ‘করোনার সময়ে যখন বিভিন্ন এয়ারলাইনস বন্ধ হয়ে গিয়েছে তখন আমরা গ্রাউন্ড হ্যাল্ডেলিংয়ে জন্য প্রায় ৮০ কোটি টাকা ইনভেস্ট করেছি। সম্প্রতি আমরা আরও ২২ কোটি টাকা এই সমস্যা সমাধানে বিনিয়োগ করেছি। এগুলো বিনিয়োগ করা হয়েছে শুধু গ্রাউন্ড হ্যাল্ডেলিংয়ের যন্ত্রপাতি ক্রয় করার জন্য। আমাদের বিনিয়োগের ফলটা পেতে একটু দেরি হচ্ছে এই কারণে যে, যে সমস্ত যন্ত্রপাতি লাগবে সেগুলোর কাজ অনেক দেশে করোনার সময় বন্ধ ছিলো। কিন্তু যেখানে তৈরি করা হচ্ছিলো সেগুলোর আবার পরিবহন বন্ধ ছিলো। সেই চ্যানেলগুলো এখন উন্মক্ত হয়েছে। তবে সমস্ত যন্ত্রপাতি এবং জনবল থাকলেও ভৌত অবকাঠামোগত দিক দিয়ে থার্ড টার্মিনাল না হওয়া পর্যন্ত সমস্যার সমাধান হবে না।’
তাহলে কি আরও ১ বছর যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা ভোগান্তি বলব না আমি। আমাদের কিছু কাজ চলছে। যেমন ধরে এমরিটেস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট অবতরণ করলো, এটা শেষ না হতেই সৌদি এয়ারলাইন্স অবতরণ করলো; তাহলে দেখা যাচ্ছে জটলা তৈরি হয়ে গেল। তবে যদি আমাদের লাগেজ বেল্ট আলাদা থাকতো বা ওই ধরনের পরিসর থাকতো তাহলে এই সমস্যা হতো না। কারণ একটি বিমান নামার পর অন্য আরেকটি বিমান অবতরণ করলে সেটা লাগেজ অন্য বেল্টে দেওয়া যেতো। যে বেল্টে কাজ শুরু হয় সেটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আরেকটি এয়ারলাইন্সের লাগেজ ওই বেল্টে শুরু করা যায় না। এছাড়া বিমান আসার পর বে’তে বা ব্রিজ পেতে আধা ঘণ্টা বা ৪০ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়। থার্ড টার্মিনাল না হওয়া পর্যন্ত একটু কষ্ট করতে হবে।’
বর্তমানে বিমানবন্দরে ৮টি লাগেজ বেল্ট রয়েছে। সবগুলো ফাংশনাল। গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ে প্রতি সেশনে ৩ শতাধিকের বেশি জনবল কাজ করে থাকে। প্রতিদিন ৪টি করে শিফট রয়েছে। তবে লেবার নেওয়ার জন্য একটি শিফট প্রতিদিন বিশ্রামে থাকে। ফলে ৩টি শিফট রয়েছে।
হজ ফ্লাইটের জন্য বিমান কতোটুকু প্রস্তুত জানতে চাইলে আবু সালেহ মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত। বিমানের নিজস্ব বহরে থাকা বিমান দিয়েই হজ ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। লিজে বিমান আনার প্রস্তাব বাতিল করা হয়েছে। হজ যাত্রী পরিবহনে আমরা ৬৫টি স্লট পেয়েছি। আর সেই অনুযায়ী আমাদের পরিকল্পনা প্রতি বছরের মতো আগে থেকেই নেওয়া হয়েছে। তবে তারপরও কিছু বাস্তবতা রয়েছে। যেমন কোন হজ যাত্রী যদি অবলোড হয় তাহলে সেই হজ যাত্রীকে কিন্তু আবার শেষে বিমানকেই নিতে হয় তার দায়িত্ব। তাই কিছু ফ্লাইট বাড়বে।’
হজের সময় বিমানের ভাড়া বাড়ানোর কোন সম্ভাবনা রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি আরও বলেন, ‘হজের সময় বিমানের ভাড়াসহ একটি প্যাকেজ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এবারও সেটা দেওয়া হয়েছে। এবার যে হজ ফ্লাইট ঘোষণা করা হয়েছে সেখানে একটি বিশেষত্ব রয়েছে। সৌদিতে যদি খরচ বাড়ে তাহলে এবার হজ প্যাকেজে সেটা বাড়বে। গত দেড় বছরে ১২২ শতাংশ জেড় ফুয়েলের দাম বেড়েছে। হজ ফ্লাইট ঘোষণার পরও কিন্তু লিটার প্রতি ৬ টাকা করে ফুয়েলের দাম বেড়েছে। এটা নিয়ে আমরা শঙ্কিত। এটা যদি এভাবে বাড়তে থাকে তাহলে হজ ফ্লাইটে বিমানের ভাড়া বাড়তে পারে। তবে সেটা মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত নেবে আমরা সেটা বাস্তবায়ন করবো।’
হজ ফ্লাইট পরিচালনায় বিমানের অন্য রুটে প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে আবু সালেহ আরও বলেন, ‘কিছুটা পড়বে এটা সত্যি। যে রুটগুলোতে যাত্রীর সংখ্যা কম, টিকিট কম বিক্রি হয়েছে সেগুলোতে আমরা ফ্লাইট কমাবো। আমরা বিভিন্ন বিষয়গুলো দেখে কিছু রুটে চেঞ্জ বা ফ্রিকোয়েন্সি কমাবো। এগুলো না করলে নিজস্ব ফ্লাইট দিয়ে হজ যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব নয়। সেজন্য অনেক কিছু পরিবর্তন হবে।’
সারাবাংলা/এসজে/এমও
থার্ড টার্মিনাল লাগেজ বিড়ম্বনা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর