গোবিন্দগঞ্জে ইক্ষু খামারে ইপিজেড, কর্মসংস্থান হবে ২ লাখ শ্রমিকের
৩০ মে ২০২২ ০৮:৩৮
গাইবান্ধা: গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের জমিতে রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে ওই এলাকার সাঁওতাল সম্প্রদায়সহ সকল জেলার প্রায় ২ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর ভায়া ঘোড়াঘাট আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশেই এই ইপিজেড স্থাপন করা হবে। এই ইপিজেড থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে হিলি স্থলবন্দর আর ৭০ কিলোমিটার দূরে সৈয়দপুর এবং ৩৪ কিলোমিটার দূরে সম্প্রসারণাধীন বগুড়া বিমানবন্দরের অবস্থান। এছাড়াও প্রস্তাবিত ইপিজেড থেকে মহিমাগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার। যে কারণে যোগাযোগ ও মালামাল সরবরাহ এবং বহনের ক্ষেত্রে এই ইপিজেড অত্যন্ত সুবিধাজনক অবস্থানে থাকায় বেপজা এই স্থান নির্বাচনে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো রংপুর চিনিকল ও উপজেলা প্রশাসনের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, চিনিকলের আওতাধীন সাহেবগঞ্জ খামারটি ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সেসময় উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নে সাঁওতালদের ২১৬ একর ৭৭ শতক, অন্যানদের ৫৬৬ একর ২ শতক, চকরহিমাপুর মৌজায় সাঁওতালদের ১০৩ শতক, অন্যান্যদের ৪৯ একর ৮৫ শতক, রামপুর মৌজায় সাঁওতালদের ৫০ একর ১৬ শতক, অন্যান্যদের ২৬০ একর ১৭ শতক, সাপমারা মৌজায় সাঁওতালদের ৫০ একর ৩ শতক, অন্যান্যদের ২১৩ একর, মাদারপুর মৌজায় সাঁওতালদের ১৫৮ একর ৪৪ শতক, অন্যান্যদের ৩৩৬ একর ১৬ শতক জমি অধিগ্রহণ এবং ডিড অব এগ্রিমেন্ট দলিল মূলে সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। যার মোট জমির পরিমাণ ১ হাজার ৮৪২ একর। খামারটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বন্ধ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত প্রতিবছর মাড়াই মৌসুমে কাঁচামাল হিসেবে খামার উৎপাদিত আখ সরবরাহ করা হতো।
বর্তমানে চিনিকলটি বন্ধ থাকায় সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। সরকার রুগ্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান সচল করার অংশ হিসেবে বন্ধ হওয়া ইক্ষু খামারের ৪৫০ একর জমিতে ইপিজেড স্থাপন করে বিকল্প ব্যবস্থায় কর্মসংস্থানের উদ্যোগের নেয়। এর অংশ হিসেবে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বেপজা গভর্নর বোর্ডের ৩৪তম সভায় গৃহীত অন্যান্য সিদ্ধান্তের মধ্যে রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের ১৮৩২ একর জমিতে ‘রংপুর রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা’ স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই মোতাবেক শিল্প মন্ত্রণালয়কে এই জমি বেপজার অনুকূলে হস্তান্তরের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
খামারটি রংপুর চিনিকলের নিয়ন্ত্রণাধীন হওয়ায় চিনিকলের নামানুসারে ইপিজেড এর নামকরণ করা হয়েছে রংপুর ইপিজেড (আরইপিজেড)। ইতোমধ্যেই স্থাপনের প্রাথমিক কাজের অংশ হিসেবে শিল্পমন্ত্রণালয়ে ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পৃথক পৃথকভাবে গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ২৫ মে আরইপিজেডের নামে গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর ভায়া ঘোড়াঘাট আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে ৩টি ব্যানার লাগানোর কারণে স্থানীয় মানুষদের মাঝে বইছে আনন্দের বন্যা।
কাইয়াগঞ্জের আমির হোসেন বলেন, কাজের জন্য আগে ছেলে-মেয়েদের ঢাকা পাঠাতাম। এখানে ইপিজেড হলে তারা এখানেই তাদের কাজ পাবে।
কাটাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জোবায়ের হাসান শফিক মাহমুদ গোলাপ বলেন, সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারে আরইপিজেড বাস্তবায়ন হলে এই এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফ হোসেন বলেন, সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারে এই ইপিজেড স্থাপনে সরকারের উচ্চপর্যায়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সেই মোতাবেক বেপজা তাদের যাবতীয় কার্যক্রম এগিয়ে নিয়েছে।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ প্রধান বলেন, আরইপিজেড স্থাপন হলে দেশের আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এখানে প্রায় ২ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
সারাবাংলা/এএম