Tuesday 10 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভুল বিচারের শিকার ব্যক্তিরা ক্ষতিপূরণ চাইতে পারবেন: হাইকোর্ট

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৩০ মে ২০২২ ০৯:২৫
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকা: ভুল বিচারে ক্ষতিগ্রস্তরা চাইলে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ বা পুর্নবাসন চাইতে পারেন।

এক শিশুকে হত্যার দায়ে দুই আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন বিচারিক আদালত। কিন্তু ওই বিচারকে ভুল (মিসকারেজ অব জাস্টিস) আখ্যা দিয়ে আসামিদের খালাস দেন হাইকোর্ট। ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেছেন, এই মামলায় খালাস পাওয়া ব্যক্তিরা চাইলে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ বা পুর্নবাসন চাইতে পারেন।

মো. আনোয়ার হোসেন ওরফে মো. রাজিব ওরফে গোলাম রব্বানি ওরফে শংকর চন্দ্র দেবনাথ এবং অন্যান্য মামলার রায়ে হাইকোর্ট এমন অভিমত দিয়েছেন।

গত ৬ জানুয়ারি বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের হাইকোর্ট বেঞ্চের দেওয়া এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সম্প্রতি প্রকাশ হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আদালতে দুই আসামির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম মাহবুবুল ইসলাম ও মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন আহমেদ খান।

কেন ভুল বিচার সে বিষয়ে আইনজীবী শিশির মনির জানান, হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া শিশুর মাথা পাওয়া গেছে কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকায়। অথচ শরীর পাওয়া গেছে গাজীপুরের শালবনের ভেতরে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকায় পাওয়া যাওয়া মাথাটি ৮ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুর। অন্যদিকে শালবনের ভেতরে পাওয়া শরীরের অংশটি ১৪ বছর বয়সী একজনের। তাই শিরচ্ছেদ হওয়া মাথা (শালবনে পাওয়া) ওই শরীরের অংশ, সেটা প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।

এ ছাড়া আসামিদের গ্রেফতারের পর নির্ধারিত সময়ে (২৪ ঘণ্টার মধ্যে) আদালতে হাজির না করে দুই/তিন পরে তাদের উপস্থাপন করা হয়েছে। এটা আইন না মেনেই করা হয়েছে।

শিশির মনির আরও জানান, আদালত বলেছেন- আসামিরা ১৬ বছর ধরে কারাবন্দি। এর মধ্যে ৬ বছর কনডেম সেলে আছেন। সন্দেহ নেই যে, এই দুইজন ভুল বিচারের (মিসকারেজ অব জাস্টিস) শিকার এবং আদালতের অভিমত হচ্ছে- আসামি দুইজন এর জন্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ বা পুর্নবাসন চাইতে পারেন।

মামলার বিবরণ দিয়ে আইনজীবী শিশির মনির জানান, ২০০৫ সালে কমলাপুর রেলস্টেশনের ৭ নম্বর প্লাটফর্মের কাছে মো. আনোয়ার হোসেন ওরফে মো. রাজিব ওরফে গোলাম রব্বানি ওরফে শংকর চন্দ্র দেবনাথকে একটি দ্বিখণ্ডিত মাথাসহ পুলিশ গ্রেফতার করে। মাথাটি তার হাতে ব্যাগের ভেতরে পাওয়া যায়। সাথে কিছু ঘাসও ছিল। এরপর তাকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার করে শাহজাহানপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ দুইদিন পর তাকে ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট দেলোয়ারা বেগমের সামনে হাজির করে। ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে শংকর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী জাকির নামে আরেকজনকে চাঁদপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর শংকরকে নিয়ে যাওয়া হয় গাজীপুরের শালবনে। সেখান থেকে লাশের বাকি অংশ উদ্ধার করা হয়। এই মর্মে তারা দুজনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়।

অতঃপর ছয় জন সাক্ষীর জবানবন্দি নিয়ে ২০১৬ সালের মার্চে ঢাকার আদালত দুই আসামি মো. আনোয়ার হোসেন ওরফে মো. রাজিব ওরফে গোলাম রব্বানি ওরফে শংকর চন্দ্র দেবনাথ এবং মো. জাকির হোসেনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন।

পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পাঠানো হয়। পাশাপাশি আসামিরা খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন। পরবর্তীতে বিচারিক আদালতের রায়ের প্রায় ৭ বছর পর ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন) শুনানির জন্য হাইকোর্টে কার্যতালিকায় আসে।

গত ৬ ফেব্রুয়ারি ডেথ রেফারেন্স খারিজ করেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি আসামিদের জেল আপিল মঞ্জুর করে তাদের খালাস দেন আদালত।

সারাবাংলা/কেআইএফ/এএম

হাইকোর্ট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর