Tuesday 12 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

২ খালাতো বোনকে অ্যাসিড নিক্ষেপের দায়ে ভাই-বোনের যাবজ্জীবন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১ জুন ২০২২ ১৭:৫১

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে দুই খালাতো বোনকে এসিড নিক্ষেপ করে মুখমণ্ডল ঝলসে দেওয়ার মামলায় আপন দুই ভাই-বোনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

বুধবার (১ জুন) চট্টগ্রামের পঞ্চম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ নারগিস আক্তার আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় দিয়েছেন। দণ্ডিতরা হলেন— ফারজানা লতিফ সাকি (৩৫) ও ইফতেখার লতিফ সাদি (৩৩)। তাদের বাসা নগরীর বাদুরতলা এলাকায়। রায় ঘোষণার পর আসামিদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মামলার নথিপত্র পর্যালোচনায় জানা গেছে, ২০১০ সালের ২ অক্টোবর ভোরে নগরীর জয়নগর আবাসিক এলাকায় এসিড নিক্ষেপের শিকার হন মুমতাহা কারিনা ও তার ছোট বোন সালনাবিল তাসনিম। তখন কারিনার বয়স ছিল ১৯ বছর ও সালনাবিলের ১৬ বছর।

এ ঘটনায় কারিনার বাবা আনোয়ারুল কবীর নগরীর পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, মুমতাহা কারিনার বিয়ে ঠিক হয়েছিল। ২০১০ সালের ১ অক্টোবর আত্মীয়দের দাওয়াত দিতে কারিনার বাবা আনোয়ারুল কবীর ও মা আনার কলি চকরিয়ায় গ্রামের বাড়িতে যান।

কারিনার খালাতো বোন সাকি ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর কারিনাদের বাসায় বেড়াতে আসেন। ২ অক্টোবর ভোরে কারিনা ও তার বোন ঘুমাচ্ছিলেন। সাকি পূর্ব পরিকল্পনামতো তাদের মুখে অ্যাসিড ছোঁড়েন। এরপর আবার বাথরুমে গিয়ে নিজের মুখেও অ্যাসিড মাখে, যেন ঘটনাটি অন্য কেউ করেছে বলে প্রমাণ করা যায়। সাকিকে অ্যাসিড সরবরাহ করেছে তার ভাই সাদি। মূলত বয়সে ছোট খালাতো বোনের বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ায় ঈর্ষান্বিত হয়ে সাকি তার ভাইয়ের সহযোগিতায় অ্যাসিড ছুঁড়ে মারে বলে অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে।

এ ঘটনায় পুলিশ সাকি ও সাদিকে গ্রেফতার করেছিল। পুলিশ অভিযোগপত্র দাখিলের পর ২০১১ সালের ২৮ এপ্রিল তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। রাষ্ট্রপক্ষে ২৫ জন সাক্ষীর মধ্যে ২২ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি অতিরিক্ত মহানগর পিপি তসলিম উদ্দিন সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পারায় আদালত দুই আসামিকে ২০০২ সালের অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ আইনের ৫(ক) ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। একই আইনের ৫ (খ) ধারায় তাদের সাত বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে উভয় সাজা একসঙ্গে চলবে বলে আদালত রায়ে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া আদালত সাকিকে ৫০ হাজার টাকা এবং সাদিকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন।

রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে কারিনা ও সালনাবিলের মা আনার কলি সারাবাংলাকে বলেন, ‘কারিনার বিয়ে ঠিক হয়েছিল ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর। সাকি আমার মেয়ের তিন বছরের বড় ছিল। ছোট খালাতো বোনের কেন বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, এটা সে সহ্য করতে পারেনি। সে কারণে এত নৃশংস একটা ঘটনা করল। আমার দুইটা মেয়ের জীবন নষ্ট করে দিলো। এক যুগ পর হলেও আমরা বিচার পেয়েছি, আমরা আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।’

বাবা আনোয়ারুল কবীর সারাবাংলাকে বলেন, ’১২ বছর ধরে আমি এই মামলা চালিয়ে আসছি। আমি রায় পেয়েছি। আমি সন্তুষ্ট। আমি চাই রায়টা কার্যকর হোক।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী স্বভু প্রসাদ বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, ‘একজন মেয়ে নিজের খালাতো বোনদের অ্যাসিড মারবে, আবার সে নিজের মুখেও অ্যাসিড মাখবে, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। রাষ্ট্রপক্ষ প্রত্যক্ষদর্শীয় কাউকে সাক্ষী হিসেবে আদালতে আনতে পারেননি। আমরা মনে করি, এ রায় গ্রহণযোগ্য হয়নি। আমরা এ রায়ে সন্তুষ্ট নই। উচ্চ আদালতে অবশ্যই আপিল করব।’

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

অ্যাসিড নিক্ষেপ খালাতো বোনকে এসিড নিক্ষেপ ভাই-বোনের যাবজ্জীবন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর