যৌবন ফিরে পেতে লোমহর্ষক খুন, উপড়ানো চোখ-লিঙ্গসহ ধরা পড়লো খুনি
২ জুন ২০২২ ২১:৫৯
যশোর: বাঘারপাড়ায় কৃষক নকিম হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছ গোয়েন্দা পুলিশ। নৃশংসভাবে হত্যার ক্লু লেস এ মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করে বৃহস্পতিবার (২ জুন) সংবাদ সম্মেলন করা হয় গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে।
পুলিশ জানায়, যৌবন ফিরে পেতে শ্রমিক হিসেবে কাজ নিয়ে যশোরের বাঘারপাড়ায় কৃষি শ্রমিক নকিম উদ্দীনকে হত্যা করে লিটন মালিতা। কবিরাজ বারিকের কথামতো নিরীহ শ্রমিককে হত্যা করে তার পুরুষাঙ্গ, অন্ডকোষ ও একটি চোখ নিয়ে যায় তারা।
হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ওই দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দুই দিন অভিযান চালিয়ে ওই দুই ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ।
যশোর ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুপন কুমার সরকার, ইন্সপেক্টর শহিদুল ইসলাম ও এসআই মফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি চৌকস দল গত মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা থেকে আব্দুল বারেক (৬২) ও বুধবার মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার পয়লা ইউনিয়নের চড় বাইলজুরী এলাকা থেকে লিটন মালিতাকে (৪০) গ্রেফতার করা হয়।
এ সময় গ্রেফতার লিটন মালিতার কাছ থেকে একটি পুরুষাঙ্গ, অণ্ডকোষ ও একটি উপড়ানো চোখ উদ্ধার করা হয়েছে।
যশোরের বাঘারপাড়ায় উপজেলার ছাতিয়ানতলা গ্রামে গত ২৬ মে ধান কাটার জন্য কৃষাণ হিসেবে নকিম উদ্দীনসহ তিনজনকে বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন পাইকপাড়া গ্রামের মৃত ইবাদ মোল্লার ছেলে বেনজির আহমেদ (৪২)। এর মধ্যে গত রোববার (২৯ মে) বিকালে পারিশ্রমিকের টাকা বুঝে নিয়ে একজন চলে যান।
লিটন মালিতা ও নকিম উদ্দীন রাতে খাবার খেয়ে এক ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন। পরে বাড়ির মালিক বেনজির আহমেদ সোমবার সকাল ৬টায় কৃষাণদের ডাক দিলে বাইরে থেকে দরজা খোলা দেখতে পান। দরজা খোলা দেখে তিনি ভেতরে গিয়ে দেখেন জখম অবস্থায় কৃষাণ নকিম উদ্দীনের লাশ খাটের উপর পড়ে আছে।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, গ্রেফতার কবিরাজ আব্দুল বারেক চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার মোজাম্মেল হকের ছেলে। তিনি পেশায় কবিরাজ। অপর ব্যক্তি লিটন মালিতা চুয়াডাঙ্গা সদর থানার মোহাম্মদ জুমা গ্রামের মো. হানিফ মালিতার ছেলে। লিটন মালিতা দীর্ঘদিন যৌনরোগে ভুগছিলেন।
পরে স্থানীয় কবিরাজ আব্দুল বারেকের শরণাপন্ন হয় লিটন। কবিরাজ লিটনকে বলেন, যেকোনো একটি পুরুষাঙ্গ, অণ্ডকোষ ও একটি চোখ উপড়ে নিয়ে আসতে পারলে সে হারানো যৌবন ফিরে পাবে। সেই থেকে লিটন বিভিন্ন জায়গায় সুযোগ খুঁজতে থাকে।
এরই ধারাবাহিকতায় ধান কাটার শ্রমিক সেজে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার দরাজহাট ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামে কাজ নেয় সে। সুযোগ বুঝে কবিরাজের দেয়া মহাওষুধের উপকরণ যোগাড় করতে নকিম উদ্দীন নামের এই শ্রমিককে খুন করে সে। পরে সে পালিয়ে চলে যায় মানিকগঞ্জে।
বিষয়টি নিয়ে বাঘারপাড়া থানায় ৩১ মে মঙ্গলবার একটি মামলা হয়। যার নম্বর ১৮/ ধারা ৩০২ ও ২০১/ ৩৪ দণ্ডবিধি। আলোচিত এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদারের নির্দেশে মাঠে নামে যশোর ডিবি পুলিশ।
লিটন মালিতা গত মঙ্গলবার মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে ধান কাটার শ্রমিক সেজে আসেন। সেই শ্রমিকের হাট থেকে ঘিওর উপজেলার পয়লা ইউনিয়নের চড় বাইলজুরী গ্রামের কৃষক জিতু তাকে ধান কাটার কাজে বাড়িতে নিয়ে আসেন।
অবস্থান শনাক্ত করে বুধবার দুপুরে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার পয়লা ইউনিয়নের চড় বাইলজুরি এলাকা থেকে ডিবি পুলিশের একজন সদস্য ধান কাটার শ্রমিক সেজে ধান কাটার কাজরত অবস্থায় ঘিওর থানা পুলিশের সহায়তায় তাকে আটক করে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার দিবাগত রাতে যশোরের বাঘারপাড়ায় উপজেলার দরাজহাট ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামে কৃষি শ্রমিক নকিম উদ্দীন হত্যা হয়। ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ ও আলামত হিসেবে হত্যায় ব্যবহৃত একটি চাকু উদ্ধার করে বাঘারপাড়া থানা পুলিশ।
নিহত নকিম উদ্দীন বাঘারপাড়া উপজেলার ধুপখালী গ্রামের মৃত দলিলুদ্দিন মোল্লার ছেলে।
সারাবাংলা/এমও
