Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

খেলাপি ঋণে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার নতুন রেকর্ড

গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৫ জুন ২০২২ ২২:৫৯

ঢাকা: করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে গত দুই বছর ধরে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরও ঋণ পরিশোধ করছেন না ব্যবসায়ীরা। এতে দেশে খেলাপি ঋণে নতুন রেকর্ড হয়েছে। চলতি বছরের গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময়ের হিসাব বলছে, দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকায়। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, ৩১ মার্চের আগের তিন মাসে অর্থাৎ চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা। অন্যদিকে, গত এক বছরে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৮ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চলতি ২০২২ সালের মার্চ মাস শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ২৯ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। এটি মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

এর আগে, ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। এর পরের তিন মাসে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা। অন্যদিকে ২০২১ সালের মার্চ শেষে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৫ হাজার ৮৫ কোটি টাকা। সবশেষ এক বছরে, অর্থাৎ ২০২১ সালের মার্চ থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৮ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা।

খেলাপি ঋণ পরিশোধে সরকারের দেওয়া বিভিন্ন সুযোগ কাজে লাগিয়েই ব্যবসায়ীরা খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়িয়েছেন বলেই মনে করছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে ঋণ আদায়ের পরিবর্তে ঋণ যেন দিতে না হয়, সেজন্য একের পর এক সুবিধা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে সুদ কমিয়ে পরিশোধেরে মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে প্রকৃত ঋণ পরিশোধকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আর যারা ঋণ পরিশোধ করেননি, তারা লাভবান হয়েছেন। এসব কারণে অনেক ব্যবসায়ী আগে নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করলেও পরে ঋণ পরিশোধ করেননি। ফলে তারাও খেলাপি হয়েছেন। খেলাপি ঋণের পরিমাণও বেড়েছে।

মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম আরও বলেন, করোনার কারণে গত এক-দেড় বছর ঋণগ্রহীতারা ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করেননি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও কিছু বলেনি। ক্ষেত্রবিশেষে সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। পরিণামে যা হওয়ার তাই হয়েছে। এসব কারণে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে। তবে সঠিক হিসাব করা হলে দেশের খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র আরও ভয়াবহ হতে পারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২২ সালের মার্চ শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মোট ঋণ বিতরণ করেছে ২ লাখ ৪৩ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৪৮ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা খেলাপি হয়েছে। একই সময়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ৯ লাখ ৮৮ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫৭ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

অন্যদিকে, বিদেশি ব্যাংকগুলো এই সময়ে ঋণ বিতরণ করেছে ৬৩ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা খেলাপি হয়েছে। এটি মোট ঋণের ৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে বিশেষায়িত তিনটি ব্যাংকের বিতরণ করা ৩৩ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকার মধ্যে খেলাপি ঋণ ৪ হাজার ১৫ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ০১ শতাংশ।

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

ঋণখেলাপি খেলাপি ঋণ টপ নিউজ বাংলাদেশ ব্যাংক


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর