Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চল সংরক্ষণে সমন্বয়ের তাগিদ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৮ জুন ২০২২ ২৩:৪৭

ঢাকা: বর্ধিত জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে যাওয়া জুম চাষ, সড়ক ও অবকাঠামো উন্নয়ন, ফলজ উদ্ভিদ চাষসহ বনের প্রাকৃতিক প্রতিবেশে বাধা তৈরির জন্য ক্রমেই ধ্বংস হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রাকৃতিক বনাঞ্চল। এই বনাঞ্চলকে বাঁচানোর জন্য প্রয়োজন ‘ফরেস্ট ল্যান্ডস্কেপ রেস্টোরেশন’ বা স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততায় বন ও প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার।

বুধবার (৮ জুন) পরিবেশ অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা উঠে আসে। ‘প্রায়োরিটিজ অব ফরেস্ট ল্যান্ডস্কেপ রিস্টোরেশন অ্যান্ড বায়োডাইভারসিটি কনজারভেশন ইন দ্য চিটাগাং হিল ট্র্যাক্টস’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজক ছিল আরণ্যক ফাউন্ডেশন।

বিজ্ঞাপন

সেমিনারের মূল প্রবন্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা ও অবক্ষয়িত বন নিয়ে আলোচনা করা হয়। সেমিনারে বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম কয়েক দশক আগেও জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ ছিল। কিন্তু জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তাদের প্রথাগত জুম চাষাবাদ পদ্ধতির আবর্তকাল ২০ বছর থেকে ৫ বছরে নেমে এসেছে। এতে জুম চাষ আর টেকসই চাষাবাদ পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে না। অনেকে জুম চাষের জমিতে কলা, আম, আনারস, হলুদ, আদা, কাজুবাদাম, কফি ও অন্যান্য ফলের বাগান করছে। বিশেষ করে তরুণ সমাজ জুম চাষে আগ্রহী না হয়ে ফলবাগানে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছে।

 

বক্তারা বলেন, জুম চাষের আবর্তকাল কমে যাওয়ায় মাটির উর্বরা শক্তিও কমে যাচ্ছে। ফলে স্থানীয়রা জুম চাষের নতুন জমির সন্ধানে ছুটছে। এর জন্য তারা অশ্রেণিভুক্ত বনসহ বন বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ঢুকে পড়ছে।

বিজ্ঞাপন

এক জরিপের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, রাইংখ্যংছড়ি সংরক্ষিত বনের ফারুয়া এলাকায় প্রায় তিন হাজার পরিবার বসতি স্থাপন করেছে, যেখানে জনসংখ্যা ১৪ হাজারেরও বেশি। সরকার সেই স্থানকে ইউনিয়ন ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ সংরক্ষিত বনের ভেতরে এখন শুধু বসতি নয়, ইউনিয়ন পরিষদও স্থাপন হয়েছে। এভাবে বনের জমি কৃষি জমিতে রূপান্তর হতে থাকলে বনের জীববৈচিত্র্য ধ্বংসসহ বনের প্রতিবেশ সেবা সম্পূর্ণরূপে ব্যহত হবে। এটি টেকসই কোনো ভূমি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি নয়।

বক্তারা পাহাড়ের পরিবেশ-প্রতিবেশ বিপন্ন হওয়ার জন্য শুধু জুম চাষকে দায়ী করা যথার্থ নয় বলে মনে করছেন। তারা উন্নয়নের নামে সড়ক ও অন্যান্য স্থাপনা তৈরি, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন ফল ও ফসলের আবাদের জন্য উৎসাহ দেওয়া, পাহাড়ের গাছপালা কেটে দেশি-বিদেশি ফলের গাছ লাগানো, ব্যবসায়ীদের ঝিরির পাথর উত্তোলন করে পানির প্রবাহ ও পানি ভূগর্ভে যাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করা, বাঁশ ঝাড় কেটে জুম চাষের মতো বিষয়গুলোকেও তারা এ ক্ষেত্রে দায়ী করছেন।

বক্তারা বলেন, চট্টগ্রামের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি বনের প্রতিবেশ সেবা থেকে স্থানীয়রা বঞ্চিত হচ্ছে। এভাবে নানা মাত্রায় বনভূমি উজাড় চলতে থাকলে ভবিষ্যতে পার্বত্য এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকা মারাত্মক ব্যাহত হবে। তাই প্রতিবেশ সেবা পুনরুদ্ধারে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

পার্বত্য চট্টগ্রামের বনভূমি সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন ফরেস্ট ল্যান্ডস্কেপ রেস্টোরেশন বা স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততায় বন ও প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার করতে হবে বলে মত দেন বক্তারা। বলেন, এলাকার সঠিক অবস্থা নিরূপণ করে যেখানে বন বা গাছপালা খুব বেশি রকমের অবক্ষয় হয়েছে, সেখানে জনগণের জন্য উপকারী গাছপালা ও গুল্ম, লতাজাতীয় গাছ লাগিয়ে ভূমি ক্ষয়রোধ করে ভূমির উর্বরা শক্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে ভূমির ব্যবহার চিহ্নিত করে ফসলের জমি, ফল গাছের জন্য জমি এবং বন ও বন্যপ্রাণীর জন্য জমি নির্ধারণ করে সেখানে প্রত্যেক সংস্থার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হাতে নিতে হবে, যা স্থানীয়দের জীবন-জীবিকায় সহায়ক হয়।

সেমিনারে জানানো হয়, আরণ্যক ফাউন্ডেশন এরই মধ্যে একটি জরিপ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। রাইংখ্যং রিজার্ভ ফরেস্ট বা সংরক্ষিত বনের বর্তমান অবস্থা নিরূপণ করে সেখানে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী ও এর চারপাশে যারা বাস করছে তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারে কী ধরণেনের ব্যবস্থা নিলে সব অংশীজনদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, এমন পরিকল্পনা তৈরির কাজ হাতে নিয়েছে তারা। এ কাজটি করার জন্য বিশ্বব্যাংকের প্রো-গ্রিন কর্মসূচি সহায়তা দিচ্ছে। তাছাড়া, বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারের একটি পাইলট প্রকল্পও আরণ্যক বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পের শিক্ষণ নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে সেমিনারে অভিমত প্রকাশ করা হয়।

আরণ্যক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রাকিবুল হাসান মুকুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আরণ্যক ফাউন্ডেশনের ফরেস্ট ল্যান্ডস্কেপ রেস্টোরেশন স্পেশালিস্ট ড. মহা. আব্দুল কুদ্দুস। প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ইকবাল আবদুল্লাহ হারুন। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. আব্দুল হামিদ এবং প্রধান বন সংরক্ষক আমির হোসেন চৌধুরী।

সেমিনারে আলোচকদের মধ্যে ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বন সংরক্ষক ও ইনস্টিটিউশন অব ফরেস্টার্স, বাংলাদেশের সভাপতি ইশতিয়াক উদ্দিন আহমদ, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ, এফএও বাংলাদেশের এনভায়রমেন্ট ফরেস্ট অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ ইউনিটের টিম লিডার ড. ক্রিস্টেফার জনসন এবং বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সিনিয়র এনভারমেন্টাল স্পেশালিস্ট ড. ইশতিয়াক সোবহান।

সারাবাংলা/আরএফ/টিআর

'জকোভিচ বনাম মেদভেদেভ পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রাকৃতিক বনাঞ্চল বন ও প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার বনাঞ্চল সুরক্ষা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর