‘যতদিন বাংলা ভাষা, বাঙালি, ততদিন আবদুল গাফফার চৌধুরী’
৯ জুন ২০২২ ২১:৩২
ঢাকা: “কিংবদন্তি সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী জাদুর কলম নিয়ে জন্মেছিলেন। তিনি অত্যন্ত মেধাবী, প্রথিতযশা সাংবাদিক ও লেখক ছিলেন। সমাজ, দেশ, রাষ্ট্র, বাঙালির কৃষ্টি-সংস্কৃতি- এমন কোন ক্ষেত্র নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। ভাষা আন্দোলনের কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ লিখে বাঙালির হৃদয়ে তিনি অমর হয়ে আছেন। যতদিন বাঙালি, বাংলা ভাষা এবং বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন আবদুল গাফফার চৌধুরী আমাদের প্রাণের সখা হয়ে থাকবেন।”
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বিকাল সাড়ে ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) অডিটোরিয়ামে কিংবদন্তি সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরীর স্মরণসভায় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
স্মরণসভায় আয়োজন করে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গৌরব ’৭১। আয়োজনে সহযোগিতায় ছিল জাগরণ টিভি, বিবার্তা২৪.নেট ও নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত মাসিক অন্যদেশ।
স্মরণসভায় প্রধান আলোচক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার বিচার হবে আমরা কল্পনাও করতে পারেনি। তারপরেও এটা হয়েছে। আর যারা এই বিচার দাবি করেছেন তাদের মধ্যে পথিকৃৎ হলেন সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও রক্ষার কথা বলেছেন। একইসাথে বাঙালি সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর জোরালো ভূমিকা ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘গাফফার ভাই আমাদের বিভিন্নভাবে উদ্বুদ্ধ করেছেন, সাহস যুগিয়েছেন। আজকে তাঁর জীবনী মোবাইলে টোকা দিলে বের হয়ে আসে। তাঁর জীবনী থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে।’
গাফফার চৌধুরীকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘১৯৫০ সাল সাংবাদিকতা করে ধাপে ধাপে তিনি এ পর্যন্ত এসেছেন। নিজেকে অমর করে রাখা মোটেও সহজ কাজ নয়। কিন্তু তিনি সেই কাজটাই করতে পেরেছেন। আজকে শুধু বাংলাদেশে নয়, সিয়েরালিওনের লোকেরা তাঁর গান আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফ্রেবুয়ারি নিজেদের ভাষায় ও বাংলা ভাষায় গাইছে।’
নাট্যকার ও অভিনেতা মামুনুর রশীদ বলেন, ‘কিংবদন্তি সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী জাদুর কলম নিয়ে জন্মেছিলেন। তাঁর লেখার এমন টান যে শুরু করলে শেষ না করা পর্যন্ত নিস্তার নাই। প্রবল স্মৃতিশক্তিই তার অসাধারণ সম্পদ।আবদুল গাফফার চৌধুরী ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে গত হওয়ার আগ পর্যন্ত লেখনি দিয়ে বিশাল ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। তার লেখনী রক্তক্ষয়ী বাংলাদেশকে ধারণ করে আছে। বাংলাদেশ এবং বাংলা ভাষা যতদিন থাকবে ততদিন আবদুল গাফফার চৌধুরী আমাদের মাঝে অমর হয়ে থাকবেন।’
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘আবদুল গাফফার চৌধুরী অত্যন্ত স্পষ্টবাদী মানুষ ছিলেন। তিনি কখনো নিরপেক্ষ ছিলেন না। তিনি মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন। তাঁর এই গ্রহণযোগ্যতার কারণ ছিলো স্পষ্টবাদীতা। তাঁর সমালোচনা ছিলো বন্ধুর উপদেশের মতো।’
বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট স্বদেশ রায় বলেন, ‘লেখক ও সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী সম্পর্কে সবাইকে জানতে হবে। কারণ তিনি বাঙালির দীর্ঘ পথপরিক্রমায় অন্যতম ব্যক্তি। গাফফার ভাই ছিলেন দেশপ্রেমিক যোদ্ধা। দেশের ও সমাজের দুর্দিনের উপলব্ধির দূর থেকেও করতে পারতেন।’
গৌরব ‘৭১ এর সভাপতি মনিরুল ইসলাম মনির সভাপতিত্বে এবং জাগরণ টিভির প্রধান সম্পাদক ও গৌরব ‘৭১ এর সাধারণ সম্পাদক এফ এম শাহীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- বিবার্তা২৪.নেট-এর সম্পাদক বাণী ইয়াসমিন হাসি, বাংলা জার্নালের প্রকাশক হাবিবুর রহমান রোমেল, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ সহকারী গুলশাহানা ঊর্মি, গৌরব ’৭১ এর সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল ইসলাম রুপম, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বরিকুল ইসলাম বাঁধনসহ অনেকে।
উল্লেখ্য, ভাষা আন্দোলনের কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’র রচয়িতা বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাহিত্যিক আবদুল গাফফার চৌধুরী ১৯ মে যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে উত্তর লন্ডনের বার্নেট হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ থানার উলানিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন।
সারাবাংলা/এমও