প্রথম নির্বাচনেই চ্যালেঞ্জের মুখে নতুন ইসি!
১৪ জুন ২০২২ ২১:১৩
ঢাকা: ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি) দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম ভোট হচ্ছে কুমিল্লায়। কিন্তু শুরুতেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে নতুন ইসিকে। যদিও বলতে গেলে প্রথম চ্যালেঞ্জেই হেরে গেছে ইসি। তাদের প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল ‘কৌশলে’ নির্বাচনি প্রচারে অংশ নেওয়া কুমিল্লা-৬ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনকে সরানো। কিন্তু তাকে সরাতে ব্যর্থ হয়েছে ইসি। এর পরিপ্রেক্ষিতে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বরং তাদের অসহায়ত্বের কথাই বলেছেন। এমনকি দুই নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান ও রাশেদা সুলতানা কুমিল্লায় গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, ‘আইনপ্রণেতা হয়েও আইন ভাঙলে ইজ্জত গেল কার?’ এ সময় তারা একজন সম্মানিত লোককে টেনেহিঁচড়ে নামানো কমিশনের কাজ নয় বলেও জানান।
এদিকে, কুসিকে নিজস্ব ক্ষমতা প্রয়োগ করতে না পারায় নতুন নির্বাচন কমিশন প্রথম নির্বাচনেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্টজনেরা। তাদের মতে, কুমিল্লা সিটিতে একজন সংসদ সদস্য নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করা সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে শক্ত কোনো পদক্ষেপ নিতে না পারা নির্বাচন কমিশনের বড় ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতার কারণে ইসির সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ফলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কীভাবে ৩০০ সংসদ সদস্যকে সামাল দেবে ইসি তা নিয়েও ভাবতে হবে।
এ ব্যাপারে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘নতুন নির্বাচন কমিশন কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে ক্ষমতা প্রযোগ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের নির্বাচন কমিশনের অনেক ক্ষমতা রয়েছে। বরং এই ক্ষমতা মোবারক কমিশন কিছুটা কমাতেও চেয়েছিলেন। এতে বোঝা যায়, আমাদের কমিশনের কতটা ক্ষমতা রয়েছে। কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর তাদের প্রথম বড় কোনো নির্বাচনের শুরুতে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। কারণ প্রথম রাতেই বিড়াল মারতে হয়। যাকে বলা হয়, মর্নিং শো দ্য ডে। কিন্তু নতুন ইসি একজন সংসদ সদস্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘একজন সংসদ সদস্যকে চিঠি দেওয়ার পরেও যদি তিনি কথা না শোনে তাহলে তাকে শাস্তি দিতে পারতেন। জরিমানা করতে পারতেন। শুধু তাই নয়, যেহেতু সংসদ সদস্য সরকার দলীয় একজন প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন, সেহেতু তাকে আলটিমেটাম দেওয়া যেত। আলটিমেটামে থাকতে পারতো পরবর্তী ১০/১২/২৪ ঘণ্টার মধ্যে এলাকা না ছাড়লে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হবে। প্রয়োজনে নির্বাচন স্থগিত করার ঘোষণা দিতে পারতেন। যেটা এই কমিশন ঝিনাইদহ পৌরসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রে করেছেন। নির্বাচন কমিশন তা না করে নিজের অক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে। এতে করে কমিশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। তাদের সক্ষমতা ও আইন প্রয়োগ করার সামর্থ্য নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।’
এ বিষযে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘এক জন সংসদ সদস্য আচরণবিধি লঙ্ঘন করে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনি এলাকায় অবস্থান করছেন। ইসি তাকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু তিনি এলাকা ছাড়েনি। তারপর ইসি চুপ করে গেলেন। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন আইন অমান্যকারীকে শাস্তি দিতে পারতেন। তাকে জরিমানা করতে পারতেন। প্রয়োজনে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করতে পারবেন। কিন্তু কমিশন তার ক্ষমতা প্রয়োগ করেত পারেননি। তার সক্ষমতা দেখাতে পারেননি। এক কথায় বলব ইসি একজন সংসদ সদস্যর কাছে আত্নসমর্পণ করেছেন। এটা আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থার জন্য এক অশনি সংকেত।’
জানা গেছে, চলতি বছরের ২৮ মে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নেয়। দায়িত্ব নেওয়ার তিন মাস ১৭ দিন পর অর্থাৎ ১৫ জুন কুসিক নির্বাচন হচ্ছে। কিন্তু নির্বাচনের আগে সংসদ সদস্যকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে চিঠিও পাঠালেও তা আমলে নেয়নি এমপি বাহার। এই নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল তার অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে গত রোববার (১২ জুন) সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমাদের কিছু আইনি ক্ষমতা আছে। কিছু ক্ষমতা আংশিক, কিছু ক্ষমতা পরিপূর্ণ। যেমন— কোনো কোনো নির্বাচনে আমরা প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করতে পারি। আবার কোনো নির্বাচনে তা পারি না।’
সিইসি বলেন, ‘কুমিল্লার বিষয়ে আমাদের যে আচরণবিধি আছে, সেখানে বলা হয়েছে— অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা নির্বাচনি এলাকায় থাকবেন না এবং এলাকায় থেকে কোনোভাবেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্বাচনি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবেন না বা প্রচারণা চালাবেন না। কুমিল্লার সংসদ সদস্য তেমনটিই করছিলেন বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছিল। আমরা সে অনুযায়ী আমাদের এখান থেকে তাকে চিঠি দিয়েছি। চিঠিতে তাকে স্থান (নির্বাচনি এলাকা) ত্যাগ করতে বলেছি। তিনি এলাকা ত্যাগ করেননি।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা কাউকে রিকোয়েস্ট করতে পারি। কিন্তু আমাদের এমন কোনো ক্ষমতা নেই কাউকে জোর করে… (বের করে দিতে পারি)। তিনি একজন সংসদ সদস্য। তাকে বলাটাই যথেষ্ট।’
সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম