Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কুসিক নির্বাচনে ১৪৯ প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণে ভোটগ্রহণ শুরু

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৫ জুন ২০২২ ০৮:০৮

ফাইল ছবি

কুমিল্লা থেকে: কে হবেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) মেয়র? নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হবেন কারা? সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে জয়ী হবেন কারা? এই তিন প্রশ্নেরই উত্তর মিলতে যাচ্ছে আজ বুধবার (১৫ জুন)। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা চলবে ভোটগ্রহণ।

ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) এবারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে ভাগ্য নির্ধারণ হবে পাঁচজন মেয়র প্রার্থীসহ ১০৮ জন কাউন্সিলর ও ৩৬ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীর। নির্বাচন ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিও চোখে পড়ার মতো। পুরো কুমিল্লা নগরীই যেন নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা।

বিজ্ঞাপন

কুসিক নির্বাচনে এবারের মেয়রপ্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত (নৌকা প্রতীক), স্বতন্ত্র প্রার্থী সদ্যবিদায়ী মেয়র মনিরুল হক সাক্কু (টেবিল ঘড়ি), নিজাম উদ্দিন কায়সার (ঘোড়া), ইসলামী আন্দোলনের রাশেদুল ইসলাম (হাত পাখা) এবং নাগরিক কমিটির কামরুল আহসান বাবুল (হরিণ)। নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ১০৮ জন প্রার্থী। এছাড়াও ৩৬ জন নারী এবার সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে জয়ী হওয়ার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন।

মেয়র প্রার্থীদের মাঝে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত (নৌকা) তিনি ভোট দেবেন সকাল ৯টায় নগরীর ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল কেন্দ্রে। স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সদ্যবিদায়ী মেয়র মনিরুল হক সাক্কু (টেবিল ঘড়ি) সকাল সাড়ে ৯টায় ভোট দেবেন ১২ নম্বর ওয়ার্ডের হোচ্ছা মিয়া স্কুল কেন্দ্রে। স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার (ঘোড়া) ভোট দেবেন সকাল ১০টায় ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল কেন্দ্রে। ইসলামী আন্দোলনের রাশেদুল ইসলাম (হাত পাখা) ভোট দেবেন ২২ নম্বর ওয়ার্ডের দইয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল ১০টায়। নাগরিক কমিটির কামরুল আহসান বাবুল (হরিণ) তিনি ভোট দেবেন সকাল সাড়ে ১০টায় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বড়পুকুর পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে।

বিজ্ঞাপন

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে। এই ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১৬ হাজার ৪৭৪ জন। তবে ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা সবচাইতে কম। এই ওয়ার্ডে মাত্র তিন হাজার ৮৯৪ জন ভোটার আছে।

তবে এবারের কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীদের নজর সদর দক্ষিণের ৯টি ওয়ার্ডের দিকে। নগরীর ১৯ থেকে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় ৬০ হাজার ভোটারের বসবাস। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, এই ওয়ার্ডগুলোর ভোটেই ভাগ্যের চাকা ঘুরতে পারে প্রার্থীদের। এর মাঝে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, কোটবাড়ি, পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড, চৌয়ারা বাজার, রঘুপুর, বাখরাবাদ, ইয়াসিন মার্কেটসহ আরও কিছু এলাকার ভোট চূড়ান্ত করতে পারে মেয়র প্রার্থীর হিসেব।

এবারের কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫ টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৮৯ টিকে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রেখেছে প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে সদর দক্ষিণে ১৯ থেকে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের ৩২টি ভোট কেন্দ্র অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। এই কেন্দ্রগুলো সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বেষ্টনিতে ঢেকে রাখবে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ইতিমধ্যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নগরীতে পুলিশের ২১টি টহল টিম ও ১৫টি স্থানে চেকপোষ্ট বসানো হয়েছে।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে পুরো ভোটকেন্দ্র থাকছে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এতে ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের ৬৪০টি কক্ষে লাগানো হচ্ছে ৮৫০টি ক্যামেরা। কেউ কেন্দ্রের ভেতরে কোনো ধরনের জোর খাটানোর চেষ্টা করলে তা ক্যামেরায় ধরা পড়বে। আর ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু না হলে কোনো বুথ বা কেন্দ্রে বা গোটা নির্বাচনি এলাকায় নির্বাচন বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা আছে।

নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে একজন আঙুলের ছাপ দিয়ে তার পরিচয় নিশ্চিত করার পর অন্য কেউ তার হয়ে যেন বাটনে টিপ দিতে না পারে, সেটি নিশ্চিতের চেষ্টা করছে নির্বাচন কমিশন। ভোটকেন্দ্রের ভেতরে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মী, প্রার্থীদের এজেন্ট আর ভোটারের বাইরে যেন কেউ না থাকতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতে দূর থেকেও পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে গোপন বুথ, যেখানে ঢুকে ভোটাররা তাদের প্রার্থী বাছাই করবেন, সেটি এই ক্যামেরার আওতার বাইরে থাকবে।

কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, ভোটকে কেন্দ্র করে কোনো সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়নি। তবে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, ভোটের দিন সেসব প্রতিষ্ঠানে ছুটি থাকবে। এছাড়া নগরীর অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা থাকবে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত যারা ভোটার তারা কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন।

এর আগে, মঙ্গলবার (১৪ জুন) কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে নগরীর ১০৫টি কেন্দ্রে পৌঁছানে হয়েছে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনসহ (ইভিএম) অন্যান্য সরঞ্জামাদি। কুমিল্লা জিলা স্কুলের শহীদ আবু জাহিদ মিলনায়তন থেকে ২৭ টি ওয়ার্ডের ১০৫টি কেন্দ্রে এসব নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠানো হয়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএমসহ ভোটের নানা সরঞ্জাম পাঠানো হয়। প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা কুসিক নির্বাচনের রির্টানিং কর্মকর্তার কাছ থেকে সরঞ্জাম বুঝে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সহায়তায় ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যান। এবারের ১০৫টি কেন্দ্রে ভোটকক্ষ রয়েছে ৬৪০টি।

ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে কুসিক নির্বাচনের রিটানিং কর্মকর্তা মোঃ শাহেদুন্নবী চৌধুরী জানান, সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনের জন্য আমাদের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। প্রতিটি কেন্দ্রে প্রয়োজনী নির্বাচনী সব সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে। ভোটাররা কোন ভয় বা সংকোচন ছাড়া ভোট দিতে আসবেন। প্রতিটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরাসহ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে।

তিনি বলেন, প্রার্থীরা যেভাবে আচরণবিধি মেনে প্রচারণা চালিয়েছেন- তেমনি নির্বাচনের দিনও সে শৃঙ্খলা বজায় রাখবেন। সকলের সহযোগিতায় একটি সুন্দর নির্বাচন হবে।

এদিকে সংঘাতমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করতে মাঠে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে ভোটের দিন ২৭ ওয়ার্ডের সব কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৩ হাজার ৬০৮ জন সদস্য থাকবে। ৭৫টি চেকপোস্ট, ১০৫টি মোবাইল টিম, ১২ প্লাটুন বিজিবি, র‌্যাবের ৩০টি টিম, ১০৫ কেন্দ্রে এক হাজার ২৬০ আনসার সদস্য ও এপিবিএনের ৫০ জন সদস্য নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়জিত থাকবেন।

তিনি আরও বলেন, আশা করছি, আমরা নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পারবো। এর জন্য আপনাদের (সাংবাদিক) সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা সবাই নিরলসভাবে এ নির্বাচনে কাজ করবো।

কুমিল্লা পৌরসভা যেভাবে সিটি করপোরেশন

প্রায় ৫৩ দশমিক ০৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হয়েছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন। কুমিল্লা পৌরসভা ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ পৌরসভা নিয়ে ২০১১ সালের ১০ জুলাই এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন তৈরি করা হয়।

১৭৯০ সালে তৎকালীন ত্রিপুরা জেলা প্রশাসন গঠনের মধ্য দিয়ে আজকের কুমিল্লা পৌর প্রশাসনের ইতিহাস শুরু হয়েছিল। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের সময়ে মূল ত্রিপুরা জেলা ভারতের নব গঠিত ত্রিপুরা রাজ্যে অন্তর্ভুক্ত হয় এবং তৎকালীন পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত কুমিল্লা অংশে নতুন কুমিল্লা জেলা প্রশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। অধুনা ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর জেলা তখন কুমিল্লা জেলার অন্তর্ভুক্ত দুটি উপ প্রশাসনের আওতাধীন ছিল।

১৮৯০ দশকে মাঝামাঝি সময়ে প্রতিষ্ঠিত কুমিল্লা পৌরসভা ছিল কুমিল্লা পৌর শহরের প্রথম প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান। এটির নির্বাহী প্রধান নাগরিকদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হতেন। সিটি করপোরেশন আত্মপ্রকাশের আগে কুমিল্লা পৌর শহর প্রায় ১২৫ বছরের অধিক সময় যাবত পৌরসভার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছিল। এই সময়ে কুমিল্লার রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক গুরুত্ব এবং জনসংখ্যা উভয়ই বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অবস্থায় ২০ আগস্ট, ২০০৯ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে কুমিল্লা পৌরসভা ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তরের জন্য কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেআবেদন করা হয়।

এই আবেদনের ভিত্তিতে ৪ মার্চ, ২০১১ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক অভ্যন্তরীণ বৈঠকে বিদ্যমান পৌরসভা প্রশাসনগুলোর মাঝে গুরুত্বপূর্ণ চারটিকে সিটি কর্পোরেশনে উত্তীর্ণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

২৩ জুন, ২০১১ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মধ্য দিয়ে কুমিল্লা পৌরসভা ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ পৌরসভার অস্তিত্ব বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এই সিদ্ধান্তটি ছিল কুমিল্লা সিটি করপোরেশন গঠনের উদ্দেশ্যে চূড়ান্ত সরকারি পদক্ষেপ।

পরে ১০ জুলাই, ২০১১ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে থেকে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন গঠন ও এর কার্যক্রম আরম্ভের ঘোষণা দেয়া হয়প্রসঙ্গত, কুসিক নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পাঁচজন প্রার্থী। এছাড়াও কাউন্সিলর পদে ১০৮ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৩৬ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

উল্লেখ্য, এবার কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেওয়া হবে। এই সিটি করপোরেশনে মোট ভোটার দুই লাখ ২৯ হাজার ৯২০। এর মধ্যে নারী ভোটার এক লাখ ১৭ হাজার ৯২, পুরুষ ভোটার এক লাখ ১২ হাজার ৮২৬।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের এটি তৃতীয় নির্বাচন। এর আগে দুই নির্বাচনেই মেয়র পদে ভোটে নির্বাচিত হন মনিরুল হক সাক্কু। প্রথমবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এবং দ্বিতীয়বার ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি।

সারাবাংলা/এসবি/এএম

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন কুসিক

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর