Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফের ‘ইউনূসনামা’র ঝাঁপি খুললেন শেখ হাসিনা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৬ জুন ২০২২ ১৬:১৪

ঢাকা: পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধে নেপথ্যের ক্রীড়ানক হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসকে দায়ী করে ক্রমাগত ঝাঁপি খুলে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আসছে ২৫ জুন বাংলাদেশের সাহস ও অদম্যতার প্রতীক বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতুর উদ্বোধন। আর এই উদ্বোধনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে পদ্মা সেতুতে ইউনূসের ভূমিকার প্রসঙ্গ তুলে ধরে আরও একবার ‘ইউনূসনামা’র ঝাঁপি খুললেন শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) সকালে ‘পল্লী জনপদ রংপুর এবং বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বাপার্ড) কোটালীপাড়া গোপালগঞ্জ’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইউনূসের নেতিবাচক ভূমিকার প্রসঙ্গ তুলে সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। এদিন তিনি গণভবন থেকে দুই জেলায় ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।

এর আগেও বিভিন্ন সময়ে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধে নেপথ্যে ভূমিকা রাখা ড. ইউনূসসহ আরও কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা। সেই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবারও প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশেরই একজন, যে আমার কাছ থেকে সব থেকে বেশি সুযোগ পেয়েছে। সব থেকে বেশি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে সে-ই বেঈমানি করেছে। তার বেঈমানির কারণে এই পদ্মা সেতুর টাকাটা বন্ধ হয়ে যায়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের তো প্রায় ৫২/৫৩টা ব্যাংক। প্রতিটি ব্যাংকেই তো একজন ম্যানেজিং ডিরেক্টর আছে। এদের কতজন পারে বিদেশে টাকা বানাতে? অথবা লাখ লাখ ডলার ডোনেশন দিতে? বা বিদেশ ঘুরে বেড়াতে? কে পারে? দুভার্গ্য হলো যে, সব থেকে বেশি আমি তাকে সুযোগ দিয়েছি। যেমন- গ্রামীণফোনের এই ব্যবসাটা আমার আমলে আমি তাকে দিয়েছিলাম। তাকে অনেক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছিল।’

১৯৯৮ সাল দেশের ভয়াবহ বন্যার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওই সময় আমাদের রিজার্ভ খুব কম ছিল। সবদিক থেকেই অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ। এশিয়াজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা, তার উপর দীর্ঘ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ দেশ। তখন গ্রামীণ ব্যাংক একেবারে বসে যাচ্ছিল। সেই অবস্থায়ও প্রথমে একশ কোটি, পরে দুইশ কোটি, তার পরে আরও একশ কোটি— সব মিলিয়ে মোট চারশ কোটি টাকা দিয়ে ব্যাংকটা চালু রাখার সুযোগ করে দিই।’

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গ্রামীণফোনের ব্যবসাটা এই জন্য দিই যে, ওই ফোনের লভ্যাংশটা গ্রামীণ ব্যাংকে যাবে। কিন্তু কোনোদিন এক পয়সা যায়নি। শ্রমিকের পাওনা টাকাটাই দেয়নি। আর কী দেবে? আমার দেশের নোবেল লরিয়েট ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের ওই এমডির পদটা ছাড়বেন না। যদিও আইনে আছে ৬০ বছর চাকরির সময়সীমা। কিন্তু তার তখন ৭০ বছর পার হয়ে গেছে। দশ বছর তিনি বেআইনিভাবে এমডি থেকেছেন। আরও থাকার ইচ্ছে ছিল। তাকে আমাদের তরফ থেকে বলা হয়েছিল, আপনি উপদেষ্টা থাকেন। আপনাকে সেই সম্মান দিয়ে রাখা হবে। সেটাও তিনি মানেন নাই। সরকারে বিরুদ্ধে মামলাও করেছিলেন। আর মামলায় হেরেও গিয়েছিলেন। কারণ, কোর্ট আর যাই পারুক বয়স তো আর দশ বছর কমাতে পারে নাই। যদি কমাতে পারত হয়তো কমিয়ে দিত।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘হিলারি ক্লিনটন তার বন্ধু ছিল। তিনি ছিলেন আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে তিনি মোটা অংকের চাঁদাও দিয়েছিলেন, অনুদান দিয়েছিলেন। জানি না, এত টাকা সে কোথা থেকে পেল। সেটাও দিয়েছিল। কাজেই সেই আমেরিকান সরকারদেরকে ধরে এই ওয়ার্ল্ড ব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করেন দেয়। আমাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দেয় কানাডা কোর্টে। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছিলাম, ওয়ার্ল্ড ব্যাংককে দুর্নীতির প্রমাণ দিতে হবে। আমি এমনিতে মেনে নেব না। প্রমাণ দিতে হবে, প্রমাণ দিতে পারে নাই। তখন আমি বলেছিলাম, টাকা লাগবে না। আমরা নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করব।’

তিনি বলেন, ‘আমি ধন্যবাদ জানাই, আমার দেশবাসীকে। আমি যখন ঘোষণা দিয়েছিলাম, দেশের টাকায় করব, তখন দেশের সাধারণ মানুষ পর্যন্ত আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল। বলেছিল, আমাদের যা যা আছে আমরা দেব। আমরা নিজের টাকায় করব। অনেকে আমাকে চেকও পাঠিয়েছে। যদিও আমি ভাঙ্গি নাই। সেগুলো রেখে দিয়েছি। এভাবে মানুষের অভূতপূর্ব সাড়া আমাকে সাহস জুগিয়েছিল, শক্তি জুগিয়েছিল। কারণ মানুষের শক্তিতেই আমি বিশ্বাস করি। এবং সেই শক্তির কারণেই আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়ে গেছে। যে দক্ষিণাঞ্চল সারাজীবন অবহেলিত ছিল, তারা আর অবহেলিত থাকবে না। আগামী ২৫ তারিখে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করতে যাচ্ছি। সেখানেও আমি সবাইকে এইটুকু অনুরোধ করব, গাড়ি চালানো নিয়ে কোনোরকম প্রতিযোগিতা না করে সবাই একটু ধৈর্য্য নিয়ে চলাচল করবেন। কোনো ধরনের কোনো দুর্ঘটনা যেন না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রেখে সবাই গাড়ি চালাবেন।’

তিনি বলেন, ‘উৎসবটা শুধু পদ্মা পাড়েই হবে না। সারাবাংলাদেশেই এই উৎসবটা করবেন। আমি চাচ্ছি বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলায় জেলায় উৎসব হোক। কারণ, এটা আমাদের জন্য একটা বিরাট চ্যালেঞ্জের ব্যাপার ছিল। বিশ্বের সব থেকে খরস্রোতা নদী আমাজন এবং তারপরে হচ্ছে পদ্মা। এই পদ্মাতে আমরা যে সেতু করতে পারি এটা অনেকেরই ধারণা ছিল না। তার উপর এই সেতুটা হচ্ছে দ্বিতল সেতু। নিচ দিয়ে ট্রেন যাবে, উপর দিয়ে গাড়ি। এটাও একটা কঠিন কাজ। পৃথিবীতে এই ধরনের কাজ বোধ হয় এটাই প্রথম।’

পদ্মা সেতুর কারিগরি কাজে ব্যবহ্যারিত যন্ত্রপাতির প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ‘এখানে যে সমস্ত মেশিনারিজ ব্যবহার করা হয়, এটা বোধহয় আর কোথাও ব্যবহার করা হয়নি। এর উপর যে বাধাটা ছিল সেটাও আপনারা জানেন। এই সেতু করতে যেয়ে আমাদের উপর একটা মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে এসেছিল, যেটা আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম। আমরা এখানে দুর্নীতি করতে বসিনি। নিজের ভাগ্য গড়তে বসিনি। দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি। দেশের উন্নয়ন করতে এসেছি।’

এদিন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে গোপালগঞ্জ প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন এলজিআরডিমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব মশিউর রহমান, বাপার্ড পরিচালনা পর্ষদের সদস্য শেখ কবির হোসেন।

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

গ্রামীণ ব্যাংক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদ্মা সেতু প্রধানমন্ত্রী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর