বিয়ের চাপ দেওয়ায় জান্নাতুলকে হত্যা করে ‘ফেসবুক’ প্রেমিক
১৯ জুন ২০২২ ১৭:২৪
নোয়াখালী: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জান্নাতুল ফেরদাউসের (৩২) সঙ্গে পরিচয় হয় শাহাদাত হোসেন জীবনের (২৪)। পরিচয় থেকে প্রেম, শারীরিক সম্পর্ক। এরপর বিয়ের চাপ দেওয়াতেই জীবন গলাকেটে জান্নাতুলকে হত্যা করে। এরপর মৃত্যু নিশ্চিত করতে হাত-পায়ের রগ কাটা হয়।
রোববার (১৯ জুন) নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল ইসলাম।
মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘ভুক্তভোগী জান্নাতুল ফেরদাউসের ২০০৮ সালে প্রথম বিয়ে হয়। সেখানে ৩ বৎসর সংসার করার পর স্বামীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়। প্রথম স্বামীর সংসারে তার একটি মেয়ে রয়েছে। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে ভিকটিমের পুনরায় অন্য ব্যক্তির সঙ্গে ২য় বিয়ে হয়। ৬ মাস পর ২য় স্বামীর সঙ্গেও বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপর এই বছরের ২৯ মে আসামি জীবনের সঙ্গে ভিকটিমের ফেসবুকের মেসেঞ্জারে পরিচয় হয়। তাদের দুইজনের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে, একবার শারীরিক সম্পর্কও হয়। আসামি জীবন বিবাহিত ছিল কিন্তু এ বিষয়ে ভিকটিম কিছুই জানতো না। পরবর্তীতে আসামি বিবাহিত জেনে ভিকটিম আসামিকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে আসামি তাকে এড়িয়ে যায়। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়।’
তিনি আরও জানান, গত ১৫ জুন (মঙ্গলবার) পরস্পর যোগাযোগ করে সোনাইমুড়ীর দেউটি ইউনিয়নের পিতাম্বরপুর গ্রামের মিনহাজি বাড়িসংলগ্ন সবজি ক্ষেতের দক্ষিণ পাশে নির্জন স্থানে যায় । সেখানে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আসামি তার কাছে থাকা ছুরি দিয়ে প্রথমে ভিকটিমের গলায় পোচ দেয় । এরপর মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য আসামি ভিকটিমের গলায় ধারালো ছোরা দিয়ে জবাই করে, হাত ও পায়ের রগ গোলাকৃতিভাবে কেটে দেয়।
রোববার (১৯ জুন) সকালে সোনাইমুড়ী থানার পুলিশ উপজেলার দেওটি ইউনিয়নের পিতাম্বরপুর গ্রামের একটি সবজি ক্ষেত থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি, মোবাইল ও ওড়না উদ্ধার করে।
এর আগে গতকাল শনিবার বিকেলে উপজেলার দেওটি ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে আসামি জীবনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সে পেশায় একজন নির্মাণ শ্রমিক।
সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হারুন অর রশীদ বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সোনাইমুড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহ আলম দেওটি ইউনিয়নের বাসিন্দা নুর নবী, স্বপন ও সেনবাগ উপজেলার মনির ও আবু সুফিয়ানকে আটক করে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পর উপজেলার দেওটি ইউনিয়নের পিতম্বপুর গ্রামের দিলসাদের ছেলে ও নিহত নারীর পরকীয়া প্রেমিক জীবনকে মোবাইল ফোন ট্রাকিংয়ের মাধ্যমে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার জবানবন্দির ভিত্তিতে আসামিকে নিয়ে ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মালামাল উদ্ধার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর দফতর) মো. মোর্তাহীন বিল্লাহ, সহকারী পুলিশ সুপার (চাটখিল সার্কেল) এএনএম সাইফুল ইসলাম খাঁন, সোনাইমুড়ী থানার পুলিশ সদস্যারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ১৫ জুন (মঙ্গলবার) সন্ধ্যা সাতটার দিকে ভিকটিম জান্নাতুল ফেরদাউসের তার বড় বোনের বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর রাত ৮টার পর থেকে তার ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে বুধবার সকাল ৮টার দিকে বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে একটি উঁচু সবজি ক্ষেত থেকে তারর গলা কাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় পাখির ভাই বাদী হয়ে সোনাইমুড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
সারাবাংলা/এমও