Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বন্যাকবলিত এলাকায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সংযোগ স্থাপন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৯ জুন ২০২২ ২০:০৩

ঢাকা: বন্যাকবলিত সিলেট সুনামগঞ্জ নেত্রকোনা ও উত্তরবঙ্গে জরুরি টেলিযোগাযোগ সেবা সচল রাখতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন শুরু হয়েছে। এ লক্ষ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের নির্দেশে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড ইন্টারনেটসহ নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিত করতে ভিস্যাট যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব মো. খলিলুর রহমানের তত্ত্বাবধানে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার বন্যাকবলিত এলাকায় টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে গতকাল শনিবার ১২টি ভিস্যাট যন্ত্রপাতি হস্তান্তর করা হয়। আজও নেত্রকোনা ও উত্তরবঙ্গে ভিস্যাট হাব স্থাপন করা হয়েছে। সিলেট বিভাগের বিভাগীয় কমিশনারের দফতরকেও আরও ২৩ সেট ভিস্যাট যন্ত্রপাতি দেওয়া হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

এর ফলে আরও ২৩ টি বন্যা উপদ্রুত এলাকায় জরুরি টেলিযোগাযোগ সেবা স্থাপন করা হবে। এছাড়াও বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি বন্যাকবলিত এলাকায় নিয়োজিত সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের প্রয়োজন অনুযায়ী আরও ভিস্যাট যন্ত্রপাতি সরবরাহ করতে সক্ষম, যার মাধ্যমে বন্যাকবলিত আরও এলাকায় জরুরি টেলিযোগাযোগ সেবা স্থাপন করা যাবে। মুঠোফোন কোম্পানিগুলোর প্রয়োজন অনুযায়ী মুঠোফোন নেটওয়ার্ক সচল করার কাজেও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১ ব্যবহার করতে পারবে।

ভিস্যাট এর মাধ্যমে দুর্যোগকালীন নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিএসসিএল এরই মধ্যে একটি মনিটরিং সেল গঠন করেছে, যেটি মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে নিরবিচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করবে। বন্যা কবলিত এলাকায় বিশেষ ব্যবস্থায় টেলিযোগাযোগ সেবা চালু রাখার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোবাইল অপারেটরসমূহকে বানভাসি মানুষদের জন্য প্রত্যেকে তিনটি করে টোল ফ্রি নম্বর চালু করার নির্দেশে দিয়েছেন। নির্দেশনার আলোকে মোবাইল অপারেটরসমূহ টোল ফ্রি নাম্বার চালু করেছে। টোল ফ্রি নাম্বারগুলো হচ্ছে: গ্রামীণফোন: ০১৭৬৯১৭৭২৬৬, ০১৭৬৯১৭৭২৬৭, ০১৭৬৯১৭৭২৬৮ রবি: ০১৮৫২৭৮৮০০০, ০১৮৫২৭৯৮৮০০, ০১৮৫২৮০৪৪৭৭ বাংলালিংক: ০১৯৮৭৭৮১১৪৪, ০১৯৯৩৭৮১১৪৪, ০১৯৯৫৭৮১১৪৪ এবং টেলিটক: ০১৫১৩৯১৮০৯৬, ০১৫১৩৯১৮০৯৭, ০১৫১৩৯১৮০৯৮।

বিটিআরসিতে মনিটরিং সেল গঠন
এদিকে দেশে বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে দুর্গত এলাকাসমূহে নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসি) একটি শক্তিশালী মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদারের সরাসরি তত্ত্বাবধানে বিটিআরসি’র ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশন্স বিভাগের একজন পরিচালকের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও শাখাসমূহের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ওই সেল বন্যাদুর্গত এলাকার মোবাইল নেটওয়ার্ক, অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন ব্যবস্থা, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার ও ব্যান্ডউইথ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বর্তমানে বন্যাদুর্গত এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কার্যক্রমকে সহজতর করার লক্ষ্যে বিটিআরসির উদ্যোগে টোল ফ্রি নাম্বার চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া, এই কার্যক্রমকে অধিক সহজতর করার জন্য কমিশন থেকে ২০টি মোবাইল হ্যান্ডসেট সরবরাহ করা হয়েছে।

বিটিআরসি’র লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা বন্যাদুর্গত এলাকার সর্বশেষ অবস্থার হালনাগাদ তথ্য কমিশনকে অবহিত করছে এবং মনিটরিং সেলের নির্দেশনায় কার্যকরী টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে।

বিটিআরসি জানিয়েছে, বর্তমানে সুনামগঞ্জ, সিলেট এবং নেত্রকোনায় টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো প্রায়ই অচল হয়ে পড়েছে এবং পানির অবাধ প্রবাহের কারণে মোবাইল নেটওয়ার্ক অবকাঠামো পুনরায় সচলের কাজটি চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট মোবাইল অপারেটর, এনটিটিএন অপারেটর, আইএসপি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক সচল ও নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা প্রদানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় জেনারেটর, অপটিক্যাল ফাইবার ও পর্যাপ্ত জ্বালানি তেলের জোগান দেওয়ার ব্যবস্থা চলমান আছে।

গত ১৭ জুন শুক্রবার হতে প্রবল ভারীবর্ষণ ও অতিবৃষ্টির ফলে সুনামগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোনা এই তিন জেলা বন্যা প্লাবিত হয় এবং উক্ত জেলা সমূহের অধিবাসীগণ চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন। ওই এলাকায় ৪ টি মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের মোট ২ হাজার ৫২৮ সাইট (বিটিএস) রয়েছে। বন্যাপ্লাবিত এলাকায় অবস্থিত ১ হাজার ১৫৯ সংখ্যক সাইটসমূহ বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উক্ত সাইটভুক্ত এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। মোবাইল অপারেটরদের প্রচেষ্টায় ও অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে গত ১৮ জুন সন্ধ্যা পর্যন্ত মোট ১৫৭ টি সাইট পুনরায় সচল করা হয় এবং অবশিষ্ট সাইটসমূহ সচল করার জন্য জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

নেটওয়ার্ক চালু রাখতে মোবাইল অপারেটররা কঠোর পরিশ্রম করছে: এমটব
এদিকে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন এমটব জানিয়েছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার বেশিরভাগ এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ায় ওইসব স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। ফলে সেসব এলাকায় জেনারেটর দিয়ে নেটওয়ার্ক চালু রাখার চেষ্টা করছে মোবাইল সেবাদাতারা। তবে সড়ক যোগাযোগের পরিস্থিতি বিঘ্নিত হওয়ায় সাইটগুলোতে জেনারেটর পৌঁছানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি সাইটগুলোতে জেনারেটরের তেল পৌঁছানোও দুষ্কর হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের সহযোগিতায় মোবাইল অপারেটররা টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার প্রায় ৪৫ শতাংশ সাইট এখনও ডাউন। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে গ্রাহকেরা অনেক ক্ষেত্রে মোবাইলেও চার্জ দিতে পারছেন না।

এখানে উল্লেখ্য যে, গত শুক্রবার থেকে ওই তিন জেলার জন্য বেশকিছু টোল-ফ্রি নম্বর চালু করা হয়েছে যেসব নম্বরে কথা বলতে গ্রাহকদের কোনো অর্থ খরচ করতে হবে না।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে

টেলিযোগাযোগ বন্যা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর