‘খাদ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়বে অক্টোবর-নভেম্বরে’
১৯ জুন ২০২২ ২০:৩৮ | আপডেট: ১৯ জুন ২০২২ ২৩:৩৩
ঢাকা: কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে, যুদ্ধের কারণে খাদ্য সংকট হয়। ইউক্রেনের কৃষকরা মাঠে যেতে পারছে না। এই সময় ওই দেশে বিভিন্ন ফসল ফলে। এর নেগেটিভ প্রভাব পড়বে আগামি অক্টোবর নভেম্বরের দিকে। আমরাও বুঝতে পারবো না বিশ্বে খাদ্যের দাম কিভাবে বেড়ে যাবে। ইতোমধ্যেই খাদ্যপণ্যের দাম কিছুটা বেড়েছে।
রোববার (১৯ জুন) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশে (কেআইবি) কৃষি তথ্য সার্ভিসের আয়োজনে ‘বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে খাদ্য নিরাপত্তায় কৃষি ও গণমাধ্যম’ বিষয়ক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, গমের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেশি। গমের দাম অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ার কারণে গম বাদ দিয়ে মানুষ ভাত খাওয়ার দিকে ঝুঁকছে। ফলে চালের দাম বাড়ছে।
সারের অতিরিক্ত দামের কথা উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ছোট দেশ হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা (স্যাংশন) মোকাবিলা করে সরকার সার কিনতে পারছে না। রাশিয়া, কানাডা ও বেলারুশ পটাশিয়াম সার বিক্রি করে। যার মধ্যে রাশিয়া ও বেলারুশের উপর স্যাংশন থাকায় আমাদের মত ছোট দেশ, অর্থনৈতিকভাবে ভালনারেবল, এই স্যাংশন মোকাবিলা করে সার কিনতে পারছে না। যে কারণে এখন কানাডা থেকে ৩শ ডলারের সার ১২শ ডলারে কিনতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, ভারত বড় দেশ, অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশ। লিটারেলি তারা এসব কেয়ার করে না। তারা কিন্তু ঠিকই রাশিয়া থেকে, বেলারুশ থেকে তেল ইমপোর্ট করছে, পটাশিয়াম ইমপোর্ট করছে। কিন্তু আমাদের মত ছোট দেশ, অর্থনৈতিকভাবে ভালনারেবল দেশ এই স্যাংশন মোকাবিলা করে সার কিনতে পারছি না।’
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ফুড সিকিউরিটি অবশ্যই একটা গ্লোবাল ইস্যু, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি আমরা দেখেছি নানা কারণে খাদ্য সংকটের সৃষ্টি হয়। বিশেষ গরীব দেশের মানুষ অনেক কষ্ট করে। তারা খাদ্য সংকটে পড়ে, অনেক সময় দুর্ভিক্ষও হয়। খাদ্য সংকটের কারণে অনেক জায়গায় যুদ্ধ হয়, আবার যুদ্ধের জন্যও খাদ্য সংকট তৈরি হয়। কারণ ফুড উইপেন ইজ মাচ মোর ডেডলিয়ার ফ্রম ট্রেডিশনাল উইপেন। এটাকে অনেকে যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে।
বন্যার তীব্রতা বাড়লে এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হলে সিলেট ও সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আমন মৌসুমের ধান লাগানো ঝুঁকির মধ্যে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। ইতোমধ্যেই বন্যার কারণে ২২ হাজার হেক্টর আউশ ধানের ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমনের বীজতলা কিছু নষ্ট হবে। তবে এখনও যেহেতু সেভাবে বীজতলা তৈরি করা হয়নি, তাই ভয় কম। কিন্তু বন্যা ছড়িয়ে পড়লে এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হলে আমন চাষই ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
তিনি বলেন, আমরা আউশের জন্য ১৩ লাখ হেক্টরের টার্গেট করেছিলাম, সেখানে ১১ লাখ হেক্টর লাগানো হয়েছে। এর মধ্যে ২২ হাজার হেক্টর এখন পর্যন্ত ক্ষতি হয়েছে। ৩ লাখ ৮৭ হাজার হেক্টরের বিভিন্ন শাকসবজি আছে সারাদেশে। এখানেও ৫-৭ হাজার হেক্টরের ক্ষতি হয়েছে। যেভাবে বৃষ্টি ও বন্যা তেড়ে আসছে, কি হবে জানিনা।
তবে দ্রুত বন্যা নেমে গেলে পরবর্তীতে বীজতলা তৈরি মত পর্যাপ্ত বীজ সংরক্ষণ করা আছে বলেও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে গ্লোবাল ক্রাইসিস মোকাবেলার জন্য বেশ কিছু পরামর্শ তুলে ধরেন কৃষি অর্থনীতিবিদ ও মন্ত্রণালয়ের সদস্য (এপিএ পুল) ড. এম এ সাত্তার মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘এই মুহুর্তে আমাদের চালের উৎপাদন বাড়াতে হবে। গমের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য স্মার্ট ভ্যারাইটির পাশাপাশি চর, লবনাক্ত এলাকাগুলোকে কাজে লাগাতে হবে।’ আমদানি বিকল্প হিসেবে ওয়েলসিডের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যও উপদেশ দেন তিনি।
সারাবাংলা/ইএইচটি/এসএসএ