বিপৎসীমার ওপরে ৯ নদ-নদীর পানি, বাড়বে আরও ৫ দিন
১৯ জুন ২০২২ ২২:২০
ঢাকা: উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর বন্যার পানিতে ভাসছে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের বন্যা আগের অন্তত ১২২ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। অন্যদিকে, উত্তরাঞ্চলে তিস্তার পানি বেড়ে কুড়িগ্রাম, রংপুর, গাইবান্ধা প্লাবিত হয়েছে। সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র উত্তরাঞ্চলের বন্যাকে মৌসুমি বন্যা হিসেবে উল্লেখ করেছে। সংস্থাটির তথ্যমতে, উত্তরাঞ্চলের বড়ধরনের বন্যার পূর্বাভাস নেই। তবে আগামী পাঁচ দিন দেশের প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়ার পূর্বাভাস রয়েছে। সঙ্গে থাকবে বৃষ্টি। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে বৃষ্টি হতে পারে।
পূর্বাভাস অনুযায়ী, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ স্থানে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়া সহ মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমান জানান, এ সময় রাত ও দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে। আর আগামী ৭২ ঘণ্টা বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। পাঁচ দিন পর এই প্রবণতা কমতে পারে।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ ১৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকাতে রেকর্ড করার মতো বৃষ্টিপাত না হলেও সীতাকুণ্ডে ১৩২ মিলিমিটার, রাঙামাটিতে ১২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। কুতুবদিয়া ৮৮ মিলিমিটার, টেকনাফে ৮৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে, সিলেটে বৃষ্টি হয়েছে ৬৬ মিলিমিটার। যদিও আগের দিন ২৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় এ অঞ্চলে। এছাড়া বরিশাল, তেঁতুলিয়া, ভোলা জেলায় ৬০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে।
এদিকে, সিলেট ও সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমলেও ঢলের পানি আসা অব্যাহত রয়েছে। রোববার (১৯ জুন) দেশের ৯ নদ-নদীর ১৮টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। তথ্য অনুযায়ী, সংস্থাটির পর্যবেক্ষণাধীন পানির সমতল স্টেশন ১০৯টির মধ্যে ৭৮টিতে পানি বেড়েছে, কমেছে ২৬টি পয়েন্টে, অপরিবর্তিত আছে দু’টিতে। অন্যদিকে, তিস্তার পানি বেড়ে উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলা প্লাবিত হয়েছে। সেজন্য সরকারের প্রস্তুতিও রয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, উত্তরাঞ্চলের বন্যা মৌসুমের স্বাভাবিক বন্যা। এটার ব্যপ্তি সিলেট কিংবা সুনামগঞ্জের মতো ছড়াবে না। যেটুকু পানি বেড়েছে তা চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যেই নেমে যাবে। তবে এর মধ্যে আরও কয়েকটি জেলায় পানি বাড়বে।
তিনি আরও জানান, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে কি না আপাতত তা বলা যাচ্ছে না। এমনকি এখন পর্যন্ত ঝড় কিংবা জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কাও নেই।
সিলেট অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের গড় ২৩০০ মিলিমিটার। কিন্তু ভারতের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে টানা তিন দিনে ২৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যা উজানে নেমে বাংলাদেশে প্রবেশ করে একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।’
তথ্যানুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং এর কাছাকাছি ভারতের আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশী পশ্চিমবঙ্গের স্থানগুলোতে মাঝারি থেকে ভারী এবং কোথাও কোথাও অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে। যে কারণে এই সময় ব্রক্ষ্মপুত্র, যমুনা, গঙ্গা, সুরমা, পদ্মা, কুশিয়ারা, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমারসহ দেশের প্রধান নদ-নদীগুলোতে পানি কিছুটা বাড়বে। ওইসব নদ- নদীর পানি বাড়ার কারণে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা জেলার বর্তমান বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা অবনতি হতে পারে।
অন্যদিকে, তিস্তার পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করতে পারে। যে কারণে লালমনিরহাট, নীলফামারি, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্তিতির অবনতি হতে পারে। নতুন করে টাঙ্গাইল, মুন্সিগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলার নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। আবহাওয়ার এই পরিস্থিতিতে দেশের ১৯ জেলার নৌ বন্দরগুলোকে ১ নম্বর সর্তক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম