বিশুদ্ধ পানি-খাদ্য সংকটে লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
২০ জুন ২০২২ ২২:৫৩
লালমনিরহাট: পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে তিস্তা, ধরলা, রত্নাই, সানিয়াজান ও স্বর্ণামতি নদীর পানিবৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে লালমনিরহাট জেলার ৫ উপজেলার অন্তত ৩০ হাজার পরিবার গত ৫ দিন থেকে পানিবন্দি হয়ে পড়ে আছে। পানিবন্দি পরিবারগুলোর মাঝে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় বন্যার্তদের জন্য ১৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে এই সাহায্য খুবই অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
সোমবার (২০ জুন) বিকেল ৩ টায় হাতিবান্ধার দোয়ানী পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি ৫২.৯১ সেন্টিমিটার যা বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর ধরলা নদীর শিমুলবাড়ি পয়েন্টে বিপদসীমার ১০ সে. মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কয়েক দিনের টানা ভারি বর্ষণ আর উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার ফলে জেলায় দেখা দিয়েছে চরম দুর্ভোগ। ফলে নদী তীরবর্তী জেলার পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালিগঞ্জ, আদিতমারী ও সদরের ৩০ হাজারেরও বেশি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় চলাচলসহ স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে না পারায় চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন এসব এলাকার মানুষ। পাশাপাশি দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন।
স্কুল-কলেজ পানিতে ডুবে যাওয়ায় জেলার ১৬টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়েছে। শুকনো খাবার ও নিরাপদ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়াও গৃহপালিত গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়েও অসহায় অবস্থায় রয়েছেন তিস্তা পারের লোকজন।
জানা গেছে, তিস্তা ও ধরলার পানি বৃদ্ধি পেয়ে জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতিবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, বাঘের চর, ফকিরপাড়া ইউপির রমনীগঞ্জ, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না ইউপির পাটিকাপাড়া,হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা,পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর, খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ প্রায় ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
হাতিবান্ধা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মাইদুল ইসলাম বলেন, ‘পানিবন্দি ৫ হাজার ৮০০ পরিবারের মাঝে শনিবার ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। আরও বরাদ্দ চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়েছে।’
আদিতমারী উপজেলার কালমাটি এলাকার আশরাফ আলী জানান, গতকাল মাত্র ১০ কেজি চাল পেয়েছি। ঘরে পানি ওঠায় রান্নার ব্যবস্থা নেই। শুকনো খাবার খেয়ে আছি। ঘরে খাবার পানি নেই, পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন পার করছি।
হাতিবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল জানান, নদীবেষ্টিত এই ইউনিয়নে প্রায় তিন হাজার মানুষ পানিবন্দি, ত্রাণ সহায়তা পাওয়া গেছে মাত্র এক হাজার। বাকি দুই হাজার পরিবার ত্রাণ সহায়তা না পেয়ে মানবতার জীবনযাপন করছে। তাই দ্রুত এসব মানুষকে ত্রাণ দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে অনুরোধ করছি।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, ‘বন্যাকবলিত জেলার পাঁচ উপজেলায় ১৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বন্যা কবলিত যেসব এলাকা আছে সেগুলোতে শুকনো খাবার বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।’
লালমনিরহাট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘তিস্তা ও ধরলার পানি বেড়ে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদী ভাঙন রোধে বিভিন্ন যায়গায় জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এছাড়াও জরুরি প্রয়োজনে যেকোনো পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’
সারাবাংলা/এমও