দুয়ার খোলার গান মাওয়ায়, নীরবতা শিমুলিয়ায়
২৬ জুন ২০২২ ২২:২৯
মুন্সীগঞ্জ: পাল্টে গেছে শিমুলিয়া ঘাটের দৃশ্যপট। মাত্র একদিনের ব্যবধানেই লোকারণ্য ঘাট আজ শূন্য। রোববার (২৬ জুন) সকাল ৬টা থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। এতে মাওয়া তথা শিমুলিয়া ফেরিঘাট থেকে কোনো ফেরি ছেড়ে যায়নি। ফলে যাত্রীদের পারাপারে একসময়ের মুখর ফেরিঘাটে আজ শুধু পদ্মার বাতাসের যাওয়া-আসা। অন্যদিকে পদ্মাসেতু এলাকায় আজ নতুন পথের দুয়ার খোলার ধ্বনি। রোববার দুপুর ২টা পর্যন্ত বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কারসহ ১৫ হাজার ২২০টি যানবাহন পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচল করেছে।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও শিমুলিয়া-মাঝিকান্দি নৌরুটে কার্যত ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল করতে দেখা গেছে, তবে তাও খুবই সীমিত। ঘাটে যাত্রী সমাগম নেই বললেই চলে।
গতকাল শিমুলিয়া ফেরিঘাটে শেষ ফেরি বেগম সুফিয়া কামাল এসে ভেরে সন্ধ্যা ৬টা ২৩ মিনিটে। গতকাল শিমুলিয়া ফেরিঘাট থেকে কোন ফেরি ছেড়ে যায়নি। এ সব তথ্য জানিয়েছে শিমুলিয়া ফেরিঘাট কর্তৃপক্ষ।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ফেরিঘাটে যানবাহন নেই ফেরির অপেক্ষায় পদ্মা নদী পারাপারের জন্য। যাত্রী সমাগম নেই বললেই চলে শিমুলিয়া ঘাটে। এতে ঘাটের দোকানিদের বিক্রি মারাত্মকভাবে কমে গেছে। ঘাটে কমপক্ষে আড়াইশ’ পান সিগারেট, চা-বিস্কুট বিক্রির দোকান, রেস্টুরেন্ট রয়েছে। যার অধিকাংশই বন্ধ হওয়ার উপক্রম।
১৯৮৬ সালে মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে ফেরি চলাচল শুরু হয়েছিল। এই নৌরুটে আগে ফেরি চলাচল করতে ১৮টি, লঞ্চ চলতো ৮৭টি, স্পিডবোট ২০০-২৫০টি। এখন লঞ্চ ও স্পিডবোটের চলাচল এক তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে।
পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা
ফেরিঘাটের চা বিক্রেতা জহির উদ্দিন বলেন, ‘সেতু চালু হওয়ায় ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে, পারাপারের জন ঘাটে গাড়ি আসছে না, যাত্রী নাই। রোজগার অনেক কমে গেছে। সরকার আমাদের দিকে যেন দৃষ্টি দেয় সে দাবি করছি।’
সেভেন স্টার-৪ লঞ্চের মালিক আব্দুল কাদির বলেন, ‘যাত্রী কমে গেছে অনেক। আগের চেয়ে এক তৃতীয়াংশ কম লঞ্চ চলাচল করেছে। আগে একটি লঞ্চে যাত্রী হত ২০০-২৫০ জন। এখন ১০০ জনের কম যাত্রী নিয়ে লঞ্চ ছাড়তে হচ্ছে।’
স্পিডবোটের মালিক সমিতির এক কর্মচারী বলেন, ‘যাত্রী অনেক কমে গেছে। ঘাটে ইজারার সময় শেষ হতে বাকি আছে। এত কম যাত্রী নিয়ে স্পিডবোট চলাচলে লোকসান গুনতে হবে।’
শিমুলিয়া ফেরিঘাটের বিআইডব্লিউটিসির সহকারী মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ২১টি জেলার সংগে পদ্মা সেতুর মধ্য দিয়ে সড়কপথে সংযোগ স্থাপিত হয়েছে। পদ্মা সেতু দিয়ে প্রায় সব ধরনের যানবাহন চলাচল করার কারণে ফেরি ঘাট পারাপারের জন্য যানবাহন শূন্য। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা ২৩ মিনিটে শেষ ফেরি বেগম সুফিয়া কামাল এসে ভিড়ে। গতকাল থেকে কোনো ফেরি এ ঘাট থেকে ছেড়ে যায়নি। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার দু’দিন আগেও ৫টি ফেরি চলাচল করেছে শিমুলিয়া-মাঝিকান্দি নৌরুটে। পর্যাপ্ত যানবাহন এলে ফেরি ছাড়া হবে। আজ কয়েকটি গাড়ি ঘাটে এসে ফিরে গেছে, পদ্মা সেতু দিয়ে পার হওয়ার জন্য।’
সারাবাংলা/এমও