চাকরির পেছনে না ছুটে যুবসমাজকে স্বাবলম্বী হতে বললেন রাষ্ট্রপতি
২৭ জুন ২০২২ ২২:৪৫
চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেদের মেধা ও উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিনিয়োগের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য দেশের যুবসমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
তিনি বলেন, এখনকার শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা পড়ালেখা শেষ করেই চাকরির পেছনে ছুটছেন। অথচ সবার জন্য চাকরির ব্যবস্থা করা একেবারেই অসম্ভব। এর একমাত্র বিকল্প হচ্ছে শিক্ষিত বেকারদের নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা। আর একজন উদ্যোক্তা শুধু নিজের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করেন না, অন্যদের জন্যও কর্মসংস্থান তৈরি করেন।
সোমবার (২৭ জুন) ‘আন্তর্জাতিক এমএসএমই দিবস ২০২২’ উপলক্ষে আগারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। রাষ্ট্রপ্রধান শিল্প মন্ত্রণালয় ও এসএমই ফাউন্ডেশনের এই আলোচনায় বঙ্গভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা দরকার, হয়তো সেসব ব্যবস্থা এখনো পুরোপুরি তৈরি হয়নি। বিশেষ করে ঋণপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে এই সুবিধা এখনো নেই। তবে এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
আবদুল হামিদ বলেন, কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে অর্থনীতির প্রাণ কৃষি হলেও দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কৃষির পাশাপাশি শিল্প খাতের উন্নয়ন অনস্বীকার্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সব বৃহৎ শিল্প-কারখানা জাতীয়করণ করে এসব শিল্প কারখানা ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শনের আলোকেই বর্তমানে বাংলাদেশের শিল্পায়নের ধারা এগিয়ে যাচ্ছে।
মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প তথা এমএসএমইকে অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, এমএসএমই খাতের উন্নয়ন ও বিকাশের মাধ্যমে শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান তৈরি, দারিদ্র্য বিমোচন ও সুষম উন্নয়ন সম্ভব। বর্তমান সরকারের শিল্পবান্ধব নীতি ও পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশে এরই মধ্যে বেসরকারি খাতে শিল্পায়নে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি জানান, গত ১৩/১৪ বছরে দেশে বৃহৎ ও ভারী শিল্পের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এতে দেশব্যাপী কর্মসংস্থান তৈরির পাশাপাশি সার্বিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে। ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে দেশের জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ছিল ১৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে এটি বেড়ে ৩৪ দশমিক ৯৯ শতাংশে উন্নীত হয়।
করোনা মহামারির মধ্যেও ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ। বর্তমান অর্থবছরে এটি ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ হয়েছে। এ বছর দেশের নাগরিকদের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮১৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। এসব তথ্য তুলে ধরে অর্থনীতির অন্যান্য সূচকেও দৃশ্যমান উন্নতি ও অগ্রগতি সাধিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন রাষ্ট্রপ্রধান। বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ পদক্ষেপ ও যুগোপযোগী সিদ্ধান্তের ফলেই সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব হয়েছে। এর ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বৃহৎ শিল্পের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশের সুযোগ তৈরি হয়েছে। দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতিতেও পদ্মা সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়া প্রসঙ্গে আবদুল হামিদ বলেন, দেশের বিপুলসংখ্যক নারী এখন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প স্থাপন করে ব্যবসায় মনোনিবেশ করছেন। এটি নারীর কর্মসংস্থান, ক্ষমতায়ন ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব রাখছে। এসব পদক্ষেপ ও কর্মসূচির কারণে ভবিষ্যতে উদ্যোক্তা সৃজন ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধিত হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
উদ্যোক্তাদের রাতারাতি ধনী হওয়ার মানসিকতা ছেড়ে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে টেকসই করে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন রাষ্ট্রপতি। বলেন, ব্যবসা একটি মহৎ পেশা। ব্যবসাকে স্থায়িত্ব দিতে হলে সততা এবং ক্রেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেই ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে। কিছু অসাধু ব্যক্তির জন্য যেন গোটা ব্যবসায়ী সমাজের সুনাম ক্ষুণ্ন না হয় সেদিকে ব্যবসায়ীদেরই সজাগ থাকতে হবে।
রাষ্ট্রপ্রধান বলে, সরকারের ব্যবসা ও শিল্পবান্ধব নীতি ও পদক্ষেপের কারণে দেশে উদ্যোক্তা উন্নয়নের একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। যুব সমাজের একটি বড় অংশকে যদি উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করা যায় এবং তাদের জন্য ব্যবসার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়, তবেই বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তর করা সম্ভব হবে।
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমানসহ অন্যরা বক্তব্য দেন। বাসস।
সারাবাংলা/টিআর