বিএনপি জন্মলগ্ন থেকে লুটপাট-ধ্বংসের রাজনীতি করে: মতিয়া চৌধুরী
২৮ জুন ২০২২ ২২:২৫
ঢাকা: আওয়ামী লীগের উন্নয়ন-কল্যাণের রাজনীতির বিপরীতে বিএনপি জন্মলগ্ন থেকেই লুটপাট ও ধ্বংসের রাজনীতি করে আসছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।
তিনি বলেন, বিএনপি জন্মলগ্ন থেকেই লুটপাট-ধ্বংসের রাজনীতি করে। আর আওয়ামী লীগ করে উন্নয়নের রাজনীতি, কল্যাণের রাজনীতি। তারা স্কুলে আগুন দেয়, বাস-ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ায়। তারা ধর্মগ্রন্থেও আগুন দিয়েছে। তারেক রহমান বিদেশে বসে ষড়যন্ত্র করে, ক্যাসিনো রাজনীতি চালু করেছে। তারা ক্যাসিনোভিত্তিক রাজনীতি করে লুটপাট করেছে।
সোমবার (২৮ জুন) ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। এসময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছিলেন।
সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে অভিহিত করেছিলেন। এ প্রসঙ্গে মতিয়া চৌধুরী বলেন, “উনারা কী মনে করেন নিজেকে? একটা কথা বললেই হলো? তারপর বললেন ‘সরি’। সরি বললেই হলো?” হেনরি কিসিঞ্জারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা আমাদের সবাইকে অসম্মান করেছেন। ৩০ লাখ শহিদকে অসম্মান করেছেন।’ এমন মন্তব্যের কৈফিয়তও চান মতিয়া চৌধুরী।
পদ্মা সেতু নির্মাণের বিরুদ্ধে মিলিয়ন ডলার ব্যয় কর হয়েছে অভিযোগ করে আওয়ামী লীগের এই সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বলেন, পদ্মা সেতুতে মিথ্যা দুর্নীতির ধোয়া তুলে প্রধানমন্ত্রীর পুত্র-কন্যাকে যে অমানসিক নির্যাতন করা হয়েছে, তা বলার নয়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। তারা বিদেশে সম্মানের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।
পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে মতিয়া চৌধুরী বলেন, পদ্মা সেতু হয়েছে। এই কানেকটিভিটিতে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের প্রতিটি মানুষ উপকৃত হবে। কিন্তু ‘বান্দরে কী বুঝবে কর্পূরের স্বাদ!’ তারা প্রকল্পের নামে বিদেশ থেকে ঋণ আনত আর লুটপাট করত, দুর্নীতি করত। তাই সবাইকে দুর্নীতিবাজ মনে করে।
বাজেট প্রসঙ্গে মতিয়া চৌধুরী বলেন, সারাবিশ্ব যখন কোভিডের ঝড়ে বিপর্যস্ত, এরপর ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের ফলে বিশ্বজুড়ে সব পণ্যের মূল্য বাড়ছেই, তখন আমাদের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ৬ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছেন। এক ধরনের অস্বাভাবিক সময়ে এই বাজেট পাশ করছি। মূল্যস্ফীতি, জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়া, নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া, সাপ্লাই চেইনে সমস্যা— এমন বহু সমস্যার মধ্যে আমরা এ বড় অঙ্কের বাজেট পাস করছি। সারাবিশ্ব যখন কোভিডের ধাক্কায় টাল-টামাল, এ ধরনের সময়েও প্রধানমন্ত্রীর বুদ্ধিমত্তায় আমাদের অর্থনীতি ঠিক ছিল। আমরা এ বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার পথে এক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছি। এখনো আমাদের অর্থনীতির সব কর্মকাণ্ড সচল রয়েছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রশংসা করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী কোভিডের মধ্যে ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজের ব্যবস্থা করেন। এর মধ্যে মাঝারি শিল্প থেকে দরিদ্র মানুষকে নগদ সাহায্য দেওয়া হয়েছে। এ প্রণোদণায় ৭ কোটি ২৯ লাখ ৯৭ হাজার ৪৪৬ ব্যক্তি ও ৯ লাখ ৭২ হাজার প্রতিষ্ঠান উপকৃত হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে তা ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ ধরা হয়েছে।
মতিয়া চৌধুরী বলেন, আমরা ছিলাম বিশ্বের ১০টি দরিদ্র রাষ্ট্রের মধ্যে একটি। এখন বিশ্বের ৪১তম অর্থনীতির দেশ। ২০৩৫ সালের মধ্যে আমরা ২৫তম অর্থনীতির দেশ হব বলে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো জানাচ্ছে। বর্তমানে আমাদের জিডিপির আকার ৩৯ লাখ কোটি টাকা, যা ২০০৫-০৬ সালে ছিল সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকা। এখন দারিদ্র্য ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২০ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। কর দিয়ে ঘাটতি মেটানোর জন্য দেশের চার কোটি মধ্যবিত্তকে করের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
মতিয়া চৌধুরী আরও বলেন, আমরা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরসহ বহু বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল নয়। বিশ্বে সম্মানের সঙ্গে উচ্চারিত নাম। তলাবিহীন ঝুড়ি নয়, বাংলাদেশ এখন ঝুড়ি ভর্তি বাংলাদেশ। সব কৃতিত্বের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ২০২১ সালে বিশ্বের ৫০জন প্রভাবশালী নারীর তালিকাতেও তিনি ছিলেন।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর