গ্রামের তুলনায় শহরে ৬৪ শতাংশ বেশি শিশু অটিজমে ভুগছে: জরিপ
২৮ জুন ২০২২ ২৩:১১
ঢাকা: দেশের গ্রাম অঞ্চলের তুলনায় শহর এলাকায় ৬৪ শতাংশ বেশি শিশু অটিজমে ভুগছে। এক জরিপের তথ্য বলছে, গ্রামে প্রতি ১০ হাজার শিশুর মধ্যে ১৪টি শিশু অটিজমে ভুগলেও শহর অঞ্চলে প্রতি ১০ হাজারে এমন শিশুর সংখ্যা ২৫। সার্বিক হিসাবে দেশে প্রতি ১০ হাজার ১৭টি শিশু অটিজমে ভুগছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরো-ডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম (ইপনা) পরিচালিত এক জরিপে এই ফলাফল পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার (২৮ জুন) বিএসএমএমইউ’র শিশু নিউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. গোপেন কুমার কুণ্ডু প্রতিষ্ঠানটিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান। এদিন ‘সার্টিফিকেট কোর্স অন নিউরো-ডেভেলপমেন্ট ডিসঅর্ডার’ শীর্ষক কোর্সের উদ্বোধনী ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ইপনা।
অধ্যাপক ডা. গোপেন কুমার কুণ্ডু বলেন, ২০১৭ সালের মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত দেশের আটটি বিভাগের ৩০টি জেলার ৮৫টি এলাকা চিহ্নিত করে জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ১৬ থেকে ৩০ মাস বয়সী মোট ৩৮ হাজার ৪৪০ জন শিশুর ওপর পরিচালিত এই জরিপে স্ক্রিনিং টুল হিসেবে প্রথমে ‘রেড ফ্ল্যাগ’ পরে ‘এম-চ্যাট’ এবং সব শেষে ‘ডিএসএম-ফাইভ’ ব্যবহার করা হয়।
তিনি বলেন, ১০ বছরে আমাদের অনেক অর্জন এসেছে। আমার দৃষ্টিতে প্রথম অর্জন হলো ইনস্টিটিউট অব নিউরো ডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম (ইপনা) স্থাপন। দেশে ন্যাশনাল অটিজমের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। একইসঙ্গে আমাদের গবেষণা কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। আমরা সর্বাত্মক কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের অন্যতম সাফল্য হলো দু’টি আন্তর্জাতিক কনফারেন্স আমরা করতে পেরেছি। একটি দেশে, আরেকটি ভুটানে করেছি।
ডা. কুণ্ডু আরও বলেন, আমাদের যে পরিমাণ দক্ষ জনশক্তি দরকার, আমরা সেটি এখনো তৈরি করতে পারিনি। আমাদের আরও জনবল হলে আমরা আরও বিস্তৃত পরিসরে কাজ করতে পারব।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহেদ মালেক জানান, দেশে প্রায় ২৩ লাখ শিশু অটিজমে ভুগছে। অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া গেলেও গবেষণায় কিছুটা পিছিয়ে থাকার কথাও জানান তিনি।
জাহিদ মালেক বলেন, দেশে মেয়ে শিশুর চেয়ে ছেলে শিশুর সংখ্যা প্রায় আড়াই গুণ বেশি। অটিজমে আক্রান্ত এসব শিশুদের আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি। কিন্তু গবেষণায় আমরা কিছুটা পিছিয়ে আছি। এক্ষেত্রে আমাদের আরও গবেষণা বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক। যারা অটিজমে ভুগছে, তারা আগে স্কুলে যেতে পারত না, বাড়িতে মেহমান আসলে তাদের লুকিয়ে রাখা হতো। এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এক্ষেত্রে সব কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী ও তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদের।
মন্ত্রী আরও বলেন, যারা অটিস্টিক শিশু আছে, তারা আগামী দিনে আরও ভালো সেবা পাবে। তাদের চিকিৎসা সেবায় দেশে অনেক ইনস্টিটিউট হচ্ছে, তাদের জন্য আলাদা স্কুল করা হচ্ছে। এমনকি বিদ্যমান স্কুলগুলোতে তাদের শিক্ষায় আলাদা ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কাউকে পেছনে রেখে আমরা কেউই এগিয়ে যেতে চাই না।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিশু অনুষদের ডিন ও ইপনার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক শাহীন আখতার। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, উপউপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশাররফ হোসেন, উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় চেয়ারম্যান/অফিস প্রধান, পরিচালক (হাসপাতাল), ইপনার উপপরিচালক (প্রশাসন) ডা. সৈয়দা তাবাসসুম আলম ও ইপনার উপপরিচালক (একাডেমিক) ডা. কানিজ ফাতেমাসহ অন্যরা।
সারাবাংলা/এসবি/টিআর