করোনাকালের চেয়েও এবার কম রাজস্ব আদায় রাজধানীর পশুর হাটে
২ জুলাই ২০২২ ১১:২৯
ঢাকা: রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে এবার অস্থায়ী ১৭টি পশুর হাট বসানোর টেন্ডার হয়েছে। এছাড়াও গাবতলী ও ডেমরার সারুলিয়ায় দুটি স্থায়ী হাট রয়েছে। এবার দুই সিটি করপোরেশনের হাটগুলো থেকে আয় হয়েছে ২৯ কোটি টাকা। এরমধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ২৩ কোটি টাকা ও উত্তর সিটি করপোরেশন ৬ কোটি টাকা আয় করেছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান। এর আগে ২০২১ সালে এ আয় ছিল ৩৫ কোটি টাকা এবং ২০২০ সালে ছিল ৩৬ কোটি টাকা। গত দুইবারের তুলনায় এবার করোনার প্রকোপ কম থাকলেও এ খাত থেকে আয় কমেছে সিটি করপোরেশনের।
আয় কমার কারণ হিসেবে জানা গেছে, এবার টেন্ডারে প্রতিযোগিতা ছিল না। পছন্দের ব্যক্তিকে নামমাত্র মূল্যে পশুর হাটের ইজারা দেওয়া হয়েছে। প্রতি তিন বছর পরপর ইজারার মূল্য বাড়ানোর কথা থাকলেও আইনি সীমাবদ্ধতার কারণে সিটি করপোরেশন তা করে না।
এবারের ইদে পশু বিক্রির হাসিল আদায় থেকে সবচেয়ে বেশি টাকা উত্তোলন হবে বলে আশা করছেন ইজারার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তারা জানিয়েছেন, গত দুই বছর করোনার মহামারি থাকায় কোরবানির ক্ষেত্রে অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল। কিন্তু প্রায় বছরখানিক সেই পরিবেশ নেই। এবারের ইদের পরিবেশ অনেকটাই স্বাভাবিক। এতে কোরবানির পশু কেনাবেচাও বাড়বে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৯ সালে রাজধানীতে বসেছিল ২৩টি অস্থায়ী কোরবানি পশুর হাট। হাটগুলো থেকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন রাজস্ব পেয়েছিল ২২ কোটি ২৪ লাখ ২১ হাজার টাকা। আর ইজারাদার হাসিল আদায় করেছিল প্রায় ৯০ কোটি টাকা।
এসব হাটের হাসিলের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ৩ লাখ পশু কেনাবেচা হয় ২০১৯ সালে। এরমধ্যে গরু প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার। এখান থেকে ইজারাদাররা ৮৪ কোটি ৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা হাসিল আদায় করেন। আর ছাগল বিক্রি হয় ৪৬ হাজার ৭৯১টি। ছাগল বিক্রি থেকে আয় করে ২ কোটি ৩৩ লাখ ৯৫ হাজার ৫০০ টাকা হাসিল আদায় হয়।
একইভাবে ২০১৮ সালে রাজধানীর কোরবানির হাটগুলোতে গরু-ছাগল বিক্রি হয়েছে ৩ লাখ ১১ হাজার ৪১৩টি। এরমধ্যে গরু বিক্রি হয়েছে ২ লাখ ৬৬ হাজার ৮০৫টি এবং ছাগল বিক্রি হয়েছে ৪৪ হাজার ৫৬৩টি। গরু বিক্রি করে ইজারাদার হাসিল আদায় করেছেন ৮০ কোটি ৪১ লাখ ৫০০ টাকা এবং ছাগল বিক্রি করে হাসিল আদায় করেছেন ২ কোটি ২২ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। ওই বছর রাজধানীর ২৩টি পশুর হাট থেকে ইজারাদার ৮২ কোটি ৬৩ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকার হাসিল আদায় করলেও রাজস্ব আদায় হয়েছে ২১ কোটি ৯ লাখ টাকা।
২০১৭ সালে রাজধানীর পশু বিক্রি হয়েছে ২ লাখ ৯৬ হাজার ৫৪১টি। এর মধ্যে গরু বিক্রি হয়েছে, ২ লাখ ৫৪ হাজার ১০০টি এবং ছাগল বিক্রি হয়েছে ৪২ হাজার ৪৪১টি।
গরু ও ছাগলের বিক্রি তুলনামূলকভাবে বাড়লেও একই গড়মূল্য ধরলে দেখা যায়, ওই বছরে গরু বিক্রি করে ইজারাদাররা হাসিল আদায় করেছেন ৭৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা এবং ছাগল বিক্রি করে হাসিল আদায় করেছে ২ কোটি ১২ লাখ ২০ হাজার ৫০০ টাকা। রাজধানীর ২০টি পশুর হাট থেকে ৭৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকার হাসিল আদায় হলেও দুই সিটি রাজস্ব পেয়েছে মাত্র ১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
২০১৬ সালে রাজধানীতে অস্থায়ী ভিত্তিতে ২২টি কোরবানির পশুর হাট বসানো হয়েছিল। ওই হাটগুলো থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। আর ইজারাদাররা হাসিল আদায় করে ৭৪ কোটি ৯০ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। ওইবার হাটগুলোতে গরু-ছাগল বিক্রি হয়েছিল ২ লাখ ৮৩ হাজার।
এর মধ্যে গরু বিক্রি হয়েছিল ২ লাখ ৪২ হাজার ৯৪৫টি। গরু থেকে ইজারাদাররা হাসিল আদায় করেন, ৭২ কোটি ৮৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। আর ছাগল বিক্রি হয়েছিল ৪০ হাজার ৪২০টি। ছাগল থেকে হাসিল আদায় হয়, ২ কোটি ২ লাখ ১০ হাজার টাকা।
ওই বছর ব্যবসায়ীদের বাজার বিশ্লেষণে বেরিয়ে আসে গরুর গড়মূল্য ছিল ৬০ হাজার টাকা এবং ছাগলের গড়মূল্য ছিল ১০ হাজার টাকা। ইজারাদাররা পশুর দামের ওপর শতকরা ৫ টাকা করে হাসিল আদায় করেন। সেই হিসাবে গরু প্রতি হাসিল আদায় হয়েছে ৩ হাজার টাকা এবং ছাগল প্রতি হাসিল আদায় করেছেন ৫০০ টাকা।
২০১৬ সালে স্থানীয় সরকার বিভাগের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দেয়া এক প্রতিবেদনে রাজধানীর পশু কোরবানির ব্যাপারে এমন সংখ্যা উপস্থাপন করা হয়। আর পশু ব্যবসায়ী এবং মাংস ব্যবসায়ীদের মতে, হাট কম-বেশি হলেও প্রতি বছর পশু বিক্রি প্রায় ৫ ভাগ বাড়ে। আর ২০১৬ থেকে অদ্যাবধি গরু-ছাগলের দামও প্রায় একই রকম রয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের সারাবাংলাকে বলেন, দুটি স্থায়ী হাটসহ মোট ১৯টি হাটের ইজারা সম্পন্ন হয়েছে। এরইমধ্যে কোনো কোনো হাটে পশু উঠেছে বলে জানতে পেরেছি। সম্পূর্ণ করোনার কথা মাথায় নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে হাট পরিচালনার জন্য যথাযথ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। টেন্ডারে অনেকে অংশ নিয়েছিল। সর্বোচ্চ দরদাতাকেই হাটের ইজারা দেওয়া হয়েছে। এখানে কোনোরকম ব্যত্যয় ঘটেনি।
সারাবাংলা/ইউজে/এএম