মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আলবদর রজব গ্রেফতার
৩ জুলাই ২০২২ ১৬:৩২
ঢাকা: একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি কে এম আমিনুল হক ওরফে রজব আলীকে রাজধানীর কলাবাগান এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র্যাব)। ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ড সাজা দিয়েছিল। এর আগে থেকেই তিনি পলাতক ছিলেন।
শনিবার (২ জুলাই) রাতে এক অভিযানে র্যাব তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার আমিনুল হক ওরফে রজব আলী একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভৈরবে ‘আলবদর’ বাহিনী গঠন করেন এবং কিশোরগঞ্জ জেলার কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
রোববার (৩ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আমিনুল হকের বিরুদ্ধে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী সাতটি অভিযোগ আনা হয়। ২০১৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর বর্ণিত অভিযোগের তদন্ত শেষে তদন্ত সংস্থা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। পরে ২০১৬ সালের ১৮ মে ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত।
র্যাব কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আমিনুল হক ওরফের রজব আলীকে গ্রেফতারে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এর ধারাবাহিকতায় গত রাতে (শনিবার রাতে) র্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-২-এর আভিযানিক দল রাজধানীর কলাবাগান এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।
র্যাব জানিয়েছে, গ্রেফতার আমিনুল ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের বিপক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়ে কিশোরগঞ্জ, ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ এলাকায় বাংলাদেশের নিরীহ মুক্তিকামী মানুষকে হত্যাসহ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত গণহত্যা, নির্যাতনসহ মনবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেন। তিনি ভৈরবে একটি কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় পাকিস্তানি ইসলামি ছাত্রসংঘের কলেজ শাখার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
র্যাব আরও জানিয়েছে, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমিনুল ভৈরবে পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহায়তা করার জন্য এলাকায় ‘আলবদর’ বাহিনী গঠন করেন এবং কিশোরগঞ্জ জেলার কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে হবিগঞ্জ জেলার লাখাই থানার কৃষ্ণপুর, গদাইনগর ও চন্ডিপুর গ্রামে এবং কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম থানার সদানগর ও সাবিয়ানগর গ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর থানার ফান্দাউক এলাকায় গণহত্যা, লুটপাট, লুটপাট ও নির্যাতন করেন। এছাড়াও স্বাধীনতাকামী নিরীহ বাঙালিদের অপহরণ করে রাজাকার ক্যাম্পের টর্চার সেলে নির্যাতন করে হত্যা করে।
র্যাব কমান্ডার বলেন, গ্রেফতার আমিনুল ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। ১৯৭২ সালে তার বিরুদ্ধে অষ্টগ্রাম থানায় দালাল আইনে তিনটি মামলা হয়। মামলাগুলোতে তার ৪০ বছর সাজা হয়। পরে রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমায় ১৯৮১ সালে মাত্র ১০ বছর সাজা ভোগ করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান। এরপর ১৯৮২ সালে জেল থেকে বের হয়ে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে ও বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকবার পাকিস্তান যান তিনি।
‘আমি আলবদর বলছি’ ও ‘দুই পলাশী দুই মীরজাফর’ শিরোনামে দুইটি বইও রয়েছে আমিনুল ওরফে রজব আলীর। এসব বইয়ে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ১৯৭৫ সালের শোকাবহ ১৫ আগস্টের দিনসহ সামগ্রিক বিষয়গুলো অত্যন্ত নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ২০১৪ সালে ‘দুই পলাশী দুই মীরজাফর’ বইটি সরকার নিষিদ্ধ করে এবং রজব আলীর বিরুদ্ধে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় মামলা হয়।
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর