ফাঁকি দিয়ে মহাসড়কে ৩ চাকার গাড়ি, ইদযাত্রায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা
৬ জুলাই ২০২২ ১৪:২৪
সিরাজগঞ্জ: ইদুল আজহার বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে ইদযাত্রা। পরিবারের সঙ্গে ইদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে সবাই ফিরছেন বাড়ির পথে। উত্তরবঙ্গের সড়ক-মহাসড়কেও ইদ উৎসবে যোগ দেওয়া মানুষের ঢল নেমেছে গণপরিবহনগুলোতে। সিরাজগঞ্জের মহাসড়কেও বাড়ছে যানবাহনের চাপ। এরই মধ্যে দূরপাল্লার বাসগুলোর জন্য ভোগান্তি ও দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তিন চাকার গাড়ি।
দূরপাল্লার যানবাহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিরাজগঞ্জের মহাসড়াকে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নছিমন, করিমন, ভটভটি নামে পরিচিত ব্যাটারিচালিত বিভিন্ন ধরনের অটোরিকশা ও অটোভ্যান। মহাসড়কে নিষিদ্ধ হলেও হাইওয়ে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঠিকই চলছে এসব যানবাহন। ইদযাত্রার বাকি দিনগুলোতে গাড়ির চাপ আরও বাড়ছে এসব তিন চাকার যান দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেবে বলে মনে করছেন তারা।
মঙ্গলবার (৫ জুলাই) সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদ-নলকা ও হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকা সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মহাসড়কে দূরপাল্লার গাড়ির উপস্থিতি থাকলেও খুব বেশি চাপ নেই। বরং ফাঁকা সড়কে অনেক বেশি উপস্থিতি তিন চাকার যানবাহনের। শুধু উপস্থিতি নয়, এসব যানবাহন নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে মাঝ সড়ক দিয়ে তো বটেই, এমনকি উল্টো পথেও চলাচল করছে। ফলে সড়কের শৃঙ্খলা ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, ইদুল আজহাকে কেন্দ্র করে বগুড়া-সিরাজগঞ্জ মহাসড়কে ঘরমুখী মানুষের চাপ বাড়তে শুরু করেছে। বুধবার (৬ জুলাই) থেকে এই চাপ আরও বাড়বে, যা অব্যাহত থাকবে ইদের আগের রাত পর্যন্ত। ওই সময় পর্যন্ত মহাসড়কে নিষিদ্ধ তিন চাকার যানবাহনের চলাচল বন্ধ করতে না পারলে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বাড়বে।
ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা হানিফ পরিবহনের চালক সাইফুল শেখ বলেন, আর কয়েক দিন পরে ইদ। মহাসড়কে উন্নয়ন কাজ চলায় এখন বেহাল অবস্থা। এর মধ্যে অবৈধ তিন চাকার যানবহনে দৌরাত্ম্যে আমরা চালকরা অতীষ্ট। এসব অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সুদৃষ্টি কামনা করছি।
সাইফুল শেখের মতোই বক্তব্য অন্যান্য চালকদেরও। বাসচালকই কেবল নয়, ট্রাকের চালকরাও একই কথা বলছেন। তাদের ভাষ্য, তিন চাকার যানবাহনগুলো কোনো নিয়ম-শৃঙ্খলার ধার ধারে না। যেকোনো সময় তারা লেন পরিবর্তন করে, মহাসড়কে যেকোনো স্থানে গাড়িয়ে থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করে। এতে দ্রুতগতির ও দূরপাল্লার যানবাহনের চালকদের সমস্যায় পড়তে হয়।
এদিকে, হাটিকুমরুল গোলচত্বর মহাসড়ক এলাকায় কথা হয় নছিমন ও সিএনপি’র কয়েকজন চালকের সঙ্গে। তারা বললেন, সরকারের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি তারাও জানেন। কিন্তু জীবিকার তাগিদে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই মহাসড়কে চলাচল করেন। এভাবেই মহাসড়কে গাড়ি না চালিয়ে তাদের কোনো উপায় নেই।
জানতে চাইলে হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লুৎফর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, গত মাসেও আমরা ১৮৯টি তিন চাকার গাড়ি ধরে মামলা দিয়েছি। মড়াসড়কে তিন চাকার গাড়ি যেন না উঠতে পারে সেজন্য আমাদের টহল পুলিশ রয়েছে। তারা নিয়মিত টহলও দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, আমাদের টহল পুলিশকে তো এক জায়গায় বসে থাকলে চলে না। তাদের মড়াসড়কজুড়ে টহল দিতে হয়। তারা যখনই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা যখন চলে যায়, তখনই কিছু তিন চাকার গাড়ি মহাসড়কে উঠে পড়ে। ফলে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এজন্য তিন চাকার যানবাহনের যাত্রীদেরও সচেতন হতে হবে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ ট্রাফিক পরিদর্শক (প্রশাসন) সালেকুজ্জামান খান সালেক সারাবাংলাকে বলেন, মড়াসড়কে তিন চাকার গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ। কোনোভাবেই মড়াসড়কে তিন চাকার গাড়ি চলাচল করতে পারবে না। কামারখন্দ উপজেলার নলকা রাস্তা থেকে মাঝে মধ্যে মড়াসড়কে দুয়েকটি সিএনজি উঠে পড়তে পারে। বুধবার থেকে সেই রাস্তাও বন্ধ করে দেওয়া হবে।
সালেকুজ্জামান আরও বলেন, ইদে ঘরফেরা মানুষের যাত্রা সুন্দর ও নিরাপদ করতে জেলা ট্রাফিক বিভাগ ও জেলা পুলিশ মিলিয়ে সর্বমোট ৫৬৭ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তারা সোমবার (৪ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে মহাসড়কে দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। আমরা গত ইদের মতোই এবারও যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে ও ইদে মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ট্রাফিক বিভাগ সচেষ্ট রয়েছে।
সারাবাংলা/টিআর