Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দেশজুড়ে লোডশেডিং, পরিস্থিতি পর্যালোচনায় বৈঠক বৃহস্পতিবার

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৬ জুলাই ২০২২ ২৩:০৪

ঢাকা: ভয়াবহ বন্যার সময়ও এমন লোডশেডিং দেখেনি সিলেটবাসী, যা গত তিন দিন ধরে দেখছেন। দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না পেয়ে সিলেটে সড়ক অবরোধের মতো ঘটনাও ঘটছে। খুলনা শহরে বিদ্যুৎ যেতো না বললেই চলে। কিন্তু গত দুই দিন ধরে দুই ঘণ্টা পর পর বিদ্যুৎ চলে যায় আবার তিন থেকে চার ঘণ্টা পর আসে। বিদ্যুতের এমন আসা যাওয়ার মধ্যে সবচেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে রংপুরের মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদ্যুতের অভাবে বিভাগের কিছু শিল্প কারখানা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। যদিও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) দাবি গত দুই দিনের চেয়ে বুধবার (৬ জুলাই) লোডশেডিং অনেক কমেছে। এদিকে দেশজুড়ে এমন লোডশেডিং আর গ্যাস সংকটের প্রেক্ষাপটে জরুরি পর্যালোচনা বৈঠক ডেকেছেন নীতি নির্ধারকরা।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানী বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই এলাহীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সকাল ১১ টায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট উৎপাদন ও বিতরন সংস্থাগুলোর সুত্রে জানা গেছে, সরবরাহে সংকট থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রয়োজনীয় গ্যাস দেওয়া যাচ্ছেনা। অন্যদিকে বিশ্ববাজারে সব ধরনের জ্বালানির দাম বাড়তি। যে কারণে খোলা বাজার থেকে এলএনজি সরবরাহ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্যানুযায়ী, দেশে ১৪ হাজার মেগাওয়াটের বিপরীতে বুধবার (৬ জুলাই) বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১৩ হাজার ৮৭৮ মেগাওয়াট। আর সোমবার ১২ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ছিলো ১০ হাজার ৮৩১ মেগাওয়াট।

বিজ্ঞাপন

পিডিবির পরিচালক সাইফুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, গত দুই দিনের চেয়ে বিদ্যুতের উৎপাদন একটু বেড়েছে। যে কারণে লোডশেডিং এর ঘণ্টাও স্বাভাবিকভাবে কিছুটা কমেছে।

এদিকে বুধবারও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোডশেডিং এর খবর পাওয়া গেছে। বরিশাল শহরের নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা মুনিরুল ইসলাম টেলিফোনে জানান, গত কয়েক বছরে এতো বার বিদ্যুত কখনো যেতে দেখিনি। ভুলে গিয়েছিলাম লোডশেডিং বলে কোনো বিষয় ছিল। সারাদিনও ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে।

নবগ্রাম রোডের বাসিন্দা অমল ঘোষ জানান, বিদ্যুৎ না থাকায় দোকানের ফ্রিজে রাখা সব মালামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। খাবার জাতীয় কিছু জিনিস ফ্রিজ ছাড়া রাখা সম্ভব নয়। দিনে অসংখ্যবার বিদ্যুৎ চলে যায়।

এদিকে খুলনার ময়লাপোতা এলাকার বাসিন্দা অধ্যাপক তাবিবুর রহমান জানান, খুলনায় বিদ্যুৎ যেতই না বলা চলে। গত কয়েকদিন ধরে বিদ্যুৎ বার বার চলে যায়। দিনের বেলা সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিক সুষ্মিতা সরকার জানান, দিনে তিন থেকে চার বার বিদ্যুৎ যাচ্ছে। এসে দুই ঘণ্টা থাকলে তিন ঘণ্টা থাকে না।

রংপুর নগরীর ব্যবসায়ী মো. রেজাউল করীম জানান, নগরীতে তার বাল্ব তৈরির কারখানা রয়েছে। কিন্তু লোডশেডিং এর কারণে তিন দিন ধরে বন্ধ রাখতে হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সকলকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে লোডশেডিং এর ক্ষেত্রে এলাকাভিত্তিক সময় নির্ধারণ করে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

এদিকে পেট্রোবাংলা ও পিডিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই সংকট মোকাবিলায় অন্য খাত থেকে কমিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানো যায় কি না চিন্তা করা হচ্ছে। তবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে।

উল্লেখ্য, গত ১৬ এপ্রিল দিনে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছিল পিডিবি। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে ২৫ হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াট। মোট গ্রাহক সংখ্যা ৪ কোটি ২৯ লাখ। বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী ১০০ ভাগ। মাথাপিছু উৎপাদন ৫৬০ কিলোওয়াট। আর সিস্টেম লস ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

সারাবাংলা/জেআর/একে

জ্বালানি সংকট বিদ্যুতের উৎপাদন বিদ্যুৎ লোডশেডিং

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর