মিলছে না আকাঙ্ক্ষার ইলিশ, ইদ আনন্দ নেই জেলেদের
৮ জুলাই ২০২২ ০৮:২২
ভোলা: চলতি বর্ষা মৌসুমেও ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে জেলেদের জালে মিলছে না আকাঙ্ক্ষিত ইলিশ। নদীতে ইলিশ না পাওয়ায় কোরবানির ইদ নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। জেলেদের দাবি, এবছর ইলিশের মৌসুমে ভালো মাছ শিকার করতে না পেয়ে তারা অনেক কষ্টে রয়েছে। ইদ উদযাপন নিয়েও তারা শঙ্কিত।
ভোলার সাত উপজেলায় বেসরকারি হিসেবে জেলের সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ। তবে সরকারি নিবন্ধন রয়েছে প্রায় দেড় লাখ জেলের। তবে সরকারি নিষেধাজ্ঞার সময় নিবন্ধিত জেলেদের অর্ধেকও সরকারি বরাদ্দের চাল পান না বলে অভিযোগ রয়েছে।
ভোলা সদর উপজেলার বিভিন্ন মৎস্য ঘাটে সরেজমিনে দেখা গেছে, আসন্ন কোরবানির ইদ সামনে রেখে অনেক জেলে তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নদীতে ইলিশ শিকার করতে নেমে পরেছেন। ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে জাল ফেলে তীরে ফিরছেন তারা হতাশা নিয়ে। তাদের জালে যে মাছ উঠে আসছে তা দিয়ে ঠিকমতো তেলের খরচ দিয়ে চাল কেনর টাকাও থাকে না।
সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের তুলাতুলি এলাকার জেলে মো. কবীর মাঝি ও একরাম মাঝি জানান, ভোর রাত থেকে বিকেল পর্যন্ত তারাসহ ৮ জন মাঝি মাছ শিকারে নদীতে নেমেছেন। কিন্তু তাদের জালে দু’টি ৭০০ গ্রাম ওজনের ও চারটি ছোট সাইজের ইলিশ উঠেছে। তা ঘাটে নিয়ে মাত্র ১৬শ’ টাকা বিক্রি করেছেন। পরে তেলের দোকানে ১২শ’ টাকা পরিশোধ করেছেন। আর বাকি ৪শ’ টাকা থেকে ৮ জন ৫০ টাকা করে নিয়েছেন।
একই এলাকার জেলে মো. এমরান মাঝি ও মান্নান মাঝি বলেন, ‘নদীতে প্রতিদিনই অনেক আশা নিয়ে যাই, কিন্তু একদিনও আশা পূরণ হয় না। রোববার কোরবানির ইদে কোরবানি দিবো কিভাবে, টাকা পাবো কই? ঘরে ছোট ছোট শিশু রয়েছে। তারা ঈদ উপলক্ষে নতুন পোশাকের বায়না ধরেছে, কিন্তু কিছুই কিনে দিতে পারছি না।’
তারা আরও বলেন, ‘ঈদের দিন সকালে যে নুডুলস, সেমাই খাবো সেই পরিস্থিতিও নাই। অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। আমাদের গরীবের জন্য ইদ নাই।’
তুলাতুলি মৎস্য ঘাটের আড়তদার মো. কামাল ব্যাপারী জানান, এবছর শুরুর থেকে এখন পর্যন্ত নদীতে জেলেরা কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পায়নি। যার কারণে জেলেরা যেমন কষ্টে আছে, তেমনি আমরা আড়তদাররাও অনেক কষ্টে আছি। ঢাকা ও বরিশালের মোকাম থেকে দাঁদন এনেছি, কিন্তু জেলেদের দিয়ে এখন মাছ পাঠাতে পারছি না।
তিনি আরও বলেন, ‘জেলেরা কোরবানির ইদ উপলক্ষে নদীতে যায়, কিন্তু মাছ পায় না। এখন আমাদের কাছে বউ ও ছোট ছোট শিশুদের নিয়ে এসে ইদ করার জন্য টাকা চায়। কিভাবে আমরা তাদের টাকা দিবো। আমাদেরও তো খারাপ অবস্থা।’
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্লাহ বলেন, ‘বর্তমানে নদীতে ইলিশ কম মিলছে। আমরা আশা করছি আগামী আগস্টের শেষের দিকে নদীতে জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পরবে। আর জেলেদের সব কষ্ট দূর হবে।’
সারাবাংলা/এমও