বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে আলোকসজ্জা না করার নির্দেশনা
৭ জুলাই ২০২২ ১৮:২৯
ঢাকা: গ্যাস সরবরাহে ঘাটতির কারণে বিদ্যুৎ সংকটে ভুগছে সারাদেশ। গ্রাম থেকে শুরু করে রাজধানী ঢাকাতেও লোডশেডিংয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সবাইকে। এ পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনের পর এবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকেও বিভিন্ন উপলক্ষে আলোকসজ্জা না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন সংযোগ অধিশাখা থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সারাদেশে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টার, শপিং মল, দোকানপাট, অফিস ও বাসাবাড়িতে আলোকসজ্জা না করতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
গত ক’দিন ধরেই সারাদেশে লোডশেডিংয়ে অতীষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। গ্রাম এলাকায় কোথাও কোথাও সারাদিনে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত চলছে লোডশেডিং। তীব্র গরমের মধ্যে বিদ্যুতের ঘাটতি হয়ে এসেছে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা।
আরও পড়ুন-
- ‘বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু রাখাটাই কষ্টকর হয়ে গেছে’
- বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে বৈঠকে বসেছেন কর্মকর্তারা
- লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণে অফিস টাইম কমাতে চায় সরকার
- আলোকসজ্জা না করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
- গ্যাস সংকটে দেশজুড়ে লোডশেডিং, মুক্তি মিলছে না সহজেই
- দেশজুড়ে লোডশেডিং, পরিস্থিতি পর্যালোচনায় বৈঠক বৃহস্পতিবার
- দৈনিক ঘাটতি ২ হাজার মেগাওয়াট, মিতব্যয়ী হতে বলছেন প্রতিমন্ত্রী
বিদ্যুৎ বিভাগের গত সোমবারের তথ্য বলছে, ওই দিন দুপুরে ১২ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুতের উৎপাদন ছিল ১০ হাজার ৮৩১ মেগাওয়াট। ওই দিন পিক আওয়ার সন্ধ্যায় সর্বোচ্চ ১৪ হাজার মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন ছিল ১২ হাজার ২৩৬ মেগাওয়াট। সে হিসাবে দিনে বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, বর্তমানে প্রতিদিনই এরকম প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি থাকছে। আর পেছনে মূল কারণ গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়া। আন্তর্জাতিক বাজারে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসসহ (এলএনজি) সব ধরনের জ্বালানির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণে সরকার গ্যাস আমদানিও করতে পারছে না। ২০২০ সালে সরকার ৪ থেকে ৬ মার্কিন ডলার প্রতি ইউনিট দরে গ্যাস বিশ্ববাজার থেকে আমদানি করেছে। সেই একই গ্যাসের প্রতি ইউনিটের দাম বেড়েছে ৩৮ ডলার। আর স্পট মার্কেট থেকে বাংলাদেশ কিনছে ২৫ ডলারে। ফলে বিশাল এক ভর্তুকি দিতে হচ্ছে সরকারকে। এই হারে ভর্তুকি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা অসম্ভব বলে মনে করছে সরকার।
এই বাস্তবতাতেই চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। ফলে জনজীবন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি বিদ্যুৎ সংকটে শিল্প কারখানায় উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। এর মধ্যেই বুধবার (৬ জুলাই) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য সামাজিক অনুষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টার, বিপণী বিতান, দোকানপাট, অফিস-আদালত ও বাড়িঘরে আলোকসজ্জা না করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরীর উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠক থেকে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকারি কার্যালয়গুলোতে কর্মঘণ্টা কমানোর বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে ৫টার পরিবর্তে সকাল ৯টা থেকে ৩টা পর্যন্ত সরকারি অফিস চালু রাখার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানান তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী।
সারাবাংলা/একে/টিআর