আইনজীবীর ১২ কোটি টাকা ফি নেওয়ার অভিযোগ তদন্তে হাইকোর্টের রুল
৭ জুলাই ২০২২ ১৮:৫১
ঢাকা: গ্রামীণ টেলিকমের চাকরিচ্যুতদের কাছ থেকে আইনজীবীর অস্বাভাবিক ফি (১২ কোটি টাকা) নেওয়ার অভিযোগ তদন্ত করতে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরী ও মো. জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. আশরাফুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা।
আদেশের বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করে আইনজীবী মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রামীণ টেলিকমের চাকরিচ্যুতদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ আইনি ফি এবং এ সম্পর্কিত অন্যান্য বিতর্কিত বিষয়ে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে আইন সচিব, বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, বার কাউন্সিল সচিব ও আইনজীবী ইউসুফ আলীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।’
গতকাল (৬ জুলাই) গ্রামীণ টেলিকমের চাকরিচ্যুতদের কাছ থেকে ১২ কোটি টাকার বেশি ফি নেওয়ার অভিযোগ তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট দায়ের করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আশরাফুল ইসলাম এ রিট দায়ের করেন।
এর আগে, গত ৩০ জুন গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার শুনানিতে রিটকারীদের আইনজীবীকে ১২ কোটি টাকার বিনিময়ে সমঝোতার প্রসঙ্গ তুলে হাইকোর্ট। পরে গ্রামীণ টেলিকমের চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের পাওনা বকেয়া টাকার মধ্যে কে কত টাকা পেয়েছেন, সে বিষয়ে আগামী ২ আগস্ট তথ্য দাখিলের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
ওইদিন বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেছেন, আমরা শুনেছি শ্রমিকদের আইনজীবীকে অর্থের বিনিময়ে হাত করে তাদের মামলায় আপস করতে বাধ্য করা হয়েছে।
হাইকোর্ট বলেন, ‘আদালতকে ব্যবহার করে অনিয়ম যেন না হয়ে থাকে। যদি সবকিছু আইন অনুযায়ী না হয় তবে বিষয়টি সিরিয়াসলি দেখা হবে। আমি চাই না কোর্ট এবং আইনজীবীর সততা নিয়ে যেনো কোনো প্রশ্ন উঠুক।’ এ সময় আদালত বিস্ময় প্রকাশ করে আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ কেন, উপমহাদেশের এমন কোনো আইনজীবী জন্ম নেয়নি যার ফি ১২ কোটি টাকা হবে।’
এক পর্যায়ে আদালত গ্রামীণ টেলিকমের আইনজীবীকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কত টাকা ফিস নিয়েছেন? তখন আইনজীবী বলেন, আমি ২০ লাখ টাকা নিয়েছি। আদালত বলেন, আপনি তো ২০ লাখ নিয়েছেন, কিন্তু চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের আইনজীবী কীভাবে ১২ কোটি টাকা নেন। এরপর শ্রমিকেরা কে কত টাকা পেয়েছেন তার তালিকা দাখিলের জন্য আগামী ২ আগস্ট দিন ধার্য করে দেন আদালত।’
আদালতে গ্রামীণ টেলিকমের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান। শ্রমিকদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী।
এর আগে, মামলা প্রত্যাহারের শর্তে গ্রামীণ টেলিকমের চাকরিচ্যুত ১৭৬ জন শ্রমিকের পাওনা বাবদ ৪৩৭ কোটি টাকায় সমঝোতা করে গ্রামীণ টেলিকম।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রাপ্য পাওনাদি আদায়ের লক্ষ্যে গ্রামীণ টেলিকমের অবসায়ন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষে এ আবেদন দায়ের করা হয়।
সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম