নারীদের মঞ্চে অভিনয়ের পথ খুলে দিয়েছিলেন শর্মিলী আহমেদ
৮ জুলাই ২০২২ ২৩:১৫
রাজশাহী: একসময় মঞ্চে অভিনয়ের জন্য কোনো নারী পাওয়া যেত না। ছেলেদেরই পোশাক আর মেকআপের মাধ্যমে নারী সাজিয়ে নাটকে অভিনয় করানো হতো। সেই সময়ে মঞ্চে অভিনয় করেছেন শর্মিলী আহমেদ। তিনিই নারীদের মঞ্চ অভিনয়ের পথ খুলে দিয়েছিলেন।
রাজশাহীর সাংস্কৃতিক কর্মীরা এমন কথাই বলছেন কিংবদন্তি অভিনেত্রী শর্মিলী আহমেদ সম্পর্কে। এই শহরেই মাত্র চার বছর বয়সে বাবার হাত ধরে অভিনয় শুরু করেছিলেন শর্মিলী। ১৯৮৫ সালের দিকেও তাঁর রাজশাহী থিয়েটারে যাতায়াত ছিল, পরে স্থায়ী হন ঢাকায়।
শর্মিলী আহমেদকে পথপ্রদর্শক হিসেবেই মনে করেন রাজশাহীর সাংস্কৃতিক কর্মীরা। তাই তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে এখানকার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। ১৯৪৭ সালের ৮ মে শর্মিলী আহমেদের জন্ম হয়েছিল মুর্শিদাবাদের বেলুর চাক গ্রামে। দেশভাগের পর তাঁর পরিবার রাজশাহীতেই থাকেন। শর্মিলীর বেড়ে ওঠা রাজশাহীর মেহেরচন্ডী এবং সাগরপাড়ায়। পড়াশোনা করেছেন রাজশাহীর প্রমথনাথ সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে।
শর্মিলী আহমেদের বাবা তোফাজ্জল হোসেন রাজশাহীর থিয়েটারের মানুষদের কাছে তোফাজ্জল মাস্টার নামে পরিচিত ছিলেন। রাজশাহী সাংস্কৃতিক সংঘে মঞ্চ নাটকের নির্দেশনা দিতেন। এছাড়া অন্যান্য সংগঠনেও তার যাতায়াত ছিল। ভালো একজন নির্দেশক হিসেবে তাঁর সুখ্যাতি এখনও। বাবার কাছেই অভিনয়ের হাতেখড়ি হয়েছিল শর্মিলী আহমেদের।
শর্মিলী আহমেদ আর নেই
রাজশাহী থিয়েটারের সাবেক সভাপতি কামারউল্লাহ সরকার বলেন, ‘শর্মিলী আহমেদ যে সময় মঞ্চ নাটকে অভিনয় শুরু করেছিলেন, সে সময় নারীদের মঞ্চে পাওয়া ছিল কল্পনাতীত। পুরুষদেরই নারী হয়ে অভিনয় করতে হতো। শর্মিলী আহমেদই মূলত রাজশাহীতে এই বন্ধ্যাত্ব কাটিয়েছিলেন। তাঁর জন্য এ অঞ্চলে নারীদের অভিনয়ের বিপ্লব সাধিত হয়েছিল। এ জন্য রাজশাহীর সাংস্কৃতিক কর্মীদের কাছে তিনি আজীবন শ্রদ্ধাপদ হয়ে থাকবেন।’
রাজশাহী ফিল্ম সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক জাবীদ অপু বলেন, ‘১৯৮৫ সালের দিকেও শর্মিলী আহমেদ রাজশাহী থিয়েটারে যাতায়াত করতেন। রাজশাহীর সাংস্কৃতিক অঙ্গনের একটা ঐতিহ্য আছে। এখান থেকে অনেকে জাতীয় পর্যায়ে গিয়ে উচ্চপর্যায়ে পৌঁছেছেন। শর্মিলী আহমেদ তাদের একজন। তিনি ছিলেন আমাদের তারকা। আমাদের আইডল এবং উদ্দীপনা। তার মৃত্যুতে একটা নক্ষত্রের পতন হলো। আমরা ভীষণ শোকাহত।’
উল্লেখ্য, অভিনেত্রী শর্মিলী আহমেদ শুক্রবার (৮ জুলাই) রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি ক্যান্সার আক্রান্ত ছিলেন।
সারাবাংলা/এমও