সারাদেশে ৯৯ লাখ ৫০ হাজার পশু কোরবানি
১১ জুলাই ২০২২ ১৬:২৭
ঢাকা: পবিত্র ঈদুল আজহায় এবার সারাদেশে ৯৯ লাখ ৫০ হাজার ৭৬৩টি পশু কোরবানি করা হয়েছে। এটি চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৫২৮টি বেশি। চলতি বছরের কোরবানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৭ লাখ ৭৫ হাজার ২৩৫টি।
অন্যদিকে এবার গত বছরের চেয়ে ৮ লাখ ৫৭ হাজার ৫২৩টি বেশি কোরবানি হয়েছে। গত বছর ২০২১ সালে সারাদেশে কোরবানি হওয়া পশুর পরিমাণ ছিল ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. ইফতেখার হোসেন সারাবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, এ বছর শতভাগ দেশীয় পশু দিয়ে কোরবানি সম্পন্ন করা হয়েছে। এ বছর কোরবানির জন্য সারাদেশের খামারি ও গৃহস্থদের কাছে ১ কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত ছিল। এর মধ্যে কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা নির্ধারণ করা হযেছিল ৯৭ লাখ ৭৫ হাজার ২৩৫টি। সম্ভাব্য চাহিদার চেয়ে এবার পৌনে দুই লাখ পশু বেশি কোরবানি হয়েছে। দেশে এখন ২১ লাখ ৭৩ হাজার ৬২৪টি কোরবানিযোগ্য পশু অবিক্রিত অবস্থায় রয়ে গেছে।
মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলতি বছর ঈদুল আজহার জন্য দেশের ৮ বিভাগে কোরবানিযোগ্য মোট পশু প্রস্তুত ছিল ১ কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি। গত বছর দেশে কোরবানিযোগ্য পশু ছিল ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি।
দেশের আট বিভাগের মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে পশুর ঘাটতি ছিল ১৭ লাখ ৫৫ হাজার ৫৬৩টি। বাকি সাত বিভাগে চাহিদার তুলনায় তুলনায় অতিরিক্ত পশু ছিল ৪১ লাখ ৪ হাজার ৬৪২টি।
দেশের আট বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে কোরবানির পশু সবচেয়ে বেশি ঘাটতি ছিল ঢাকা বিভাগে। এ বিভাগে এই বছর ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৩৭ হাজার ৬৪৬টি। অন্যদিকে রাজশাহী বিভাগে সবচেয়ে বেশি ২৪ লাখ ৯৯ হাজার ১৪৩টি পশু উদ্বৃত্ত ছিল। সারাদেশ থেকে ঢাকায় কোরবানি পশু আসার কারণে দেশের এই বিভাগে কোরবানি পশুর কোনো সংকট হয় না।
বিভাগভিত্তিক পশু কোরবানি : চলতি বছর ঢাকা বিভাগে ১১ লাখ ৬৭ হাজার ৮১০ টি গরু-মহিষ, ১৩ লাখ ২৩ হাজার ৭১১টি ছাগল-ভেড়া ও অন্যান্য ২৪৭ টিসহ মোট ২৪ লাখ ৯১ হাজার ৭৬৮ টি গবাদিপশু কোরবানি হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগে ১৩ লাখ ১৩ হাজার ৬৭৮ টি গরু-মহিষ, ৮ লাখ ১৪ হাজার ৬৮৫ টি ছাগল-ভেড়া ও অন্যান্য ৯৬ টিসহ মোট ২১ লাখ ২৮ হাজার ৪৫৯ টি গবাদিপশু কোরবানি হয়েছে। রাজশাহী বিভাগে ৭ লাখ ৯ হাজার ২৪৩টি গরু-মহিষ ও ১ লাখ ২৮ হাজার ৮৮৫ টি ছাগল-ভেড়াসহ মোট ১৯ লাখ ৯৮ হাজার ১২৮ টি গবাদিপশু কোরবানি হয়েছে।
অন্যদিকে খুলনা বিভাগে ২ লাখ ৫৮ হাজার ২৬৪ টি গরু-মহিষ, ৬ লাখ ৬৭ হাজার ৯৩০ টি ছাগল-ভেড়া ও অন্যান্য ১৫ টিসহ মোট ৯ লাখ ২৬ হাজার ২০৯ টি গবাদিপশু কোরবানি হয়েছে। বরিশাল বিভাগে ২ লাখ ৬৭ হাজার ৬১৪ টি গরু-মহিষ ও ২ লাখ ৩১ হাজার ৩২৩ টি ছাগল-ভেড়াসহ মোট ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৯৩৭ টি গবাদিপশু কোরবানি দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়াও ২০১২ সালে সিলেট বিভাগে ২ লাখ ১ হাজার ১৮৬ টি গরু-মহিষ ও ১ লাখ ৯১ হাজার ৩৯৭টি ছাগল-ভেড়াসহ মোট ৩ লাখ ৯২ হাজার ৫৮৩ টি গবাদিপশু কোরবানি করা হয়েছে। রংপুর বিভাগে ৫ লাখ ৩১ হাজার ৯৩ টি গরু-মহিষ ও ৬ লাখ ৭ হাজার ৮০৩টি ছাগল-ভেড়াসহ মোট ১১ লাখ ৩৮ হাজার ৮৯৬ টি গবাদিপশু কোরবানি করা হয়েছে। ময়মনসিংহ বিভাগে ১ লাখ ৮০ হাজার ৫৪৮ টি গরু-মহিষ, ১ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৬ টি ছাগল-ভেড়া, ও অন্যান্য ৪৯ টিসহ মোট ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৭৮৩ টি গবাদিপশু কোরবানি করা হয়েছে।
করোনায় ২০২০ ও ২০২১ সালে পশুর চাহিদা কমেছে: করোনাভাইরাস মহামারিনর কারণে দেশের অর্থনীতি মন্দার কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে দেশে কোরবানির চাহিদা কমে গেছে। ২০১৭ সালে দেশে মোট কোরবানি হয়েছে ১ কোটি ৪ লাখ ২১ হাজার ৯৫৬টি, ২০১৮ সালে তা বেড়ে হয় ১ কোটি ৫ লাখ ৬৯ হাজার হাজার ৭০টি। ২০১৯ সালে তা আরও বেড়ে হয় ১ কোটি ৬ লাখ ১৪ হাজার ২৮১টি।
করোনা অর্থনীতি মন্দার কারণে ২০২০ সাল থেকে কোরবানি দেওয়ার পরিমাণ কমতে শুরু করে। ২০২০ সালে দেশে কোরবানি হয় মাত্র ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ২৬৩টি পশু। এটি ২০১৯ সালের কোরবানির তুলনায় ১১ লাখ ৬৪ হাজার ১৮টি পশু কম কোরবানি হয়েছে।
২০২১ সালে তা আরও কমে কোরবানি হওয়া পশুর সংখ্যা কমে ৯০ লাখ ৯২ হাজার ২৪২টি নেমে আসে। তবে চলতি ২০২২ সালে কোরবানির হওয়া পশুর সংখ্যা আগের দুই বছরের তুলনায় চাহিদা বেড়েছে ৮ লাখ ৫৭ হাজার ৫২৩টি। এটি করোনার পূর্ববর্তী তিন বছর ২০১৭. ২০১৮ ও ২০১৯ সালের তুলনায় কম। ফলে বলা যায় এখনও দেশে কোরবানির চাহিদা করোনা পূর্ববর্তী বছরের মতো স্বাভাবিক হয়নি।
সারাবাংলা/জিএস/একে