গৃহবধুর রহস্যজনক মৃত্যু, স্বামী পলাতক
১৩ জুলাই ২০২২ ২৩:০১
বরিশাল: বরিশালের উজিরপুরে রুবি আক্তার (৩০) নামে এক গৃহবধুর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (১৩ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার বড়াকোঠা ইউনিয়নে বড়াকোঠা গ্রাম থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে উজিরপুর থানা পুলিশ।
নিহত রুবি উপজেলার বরাকোঠা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর বরাকোঠা গ্রামের মো. স্বপন বেপারীর স্ত্রী। একই উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের হস্তিসন্ড গ্রামের ব্যবসায়ীর বজলু হাওলাদারের মেয়ে। ঘটনার পর থেকেই রুবি আক্তারের স্বামী স্বপন বেপারী পলাতক রয়েছেন।
নিহতের স্বজনদের দাবি, স্বামীর পরকীয়া সম্পর্কে বাধা দেওয়ায় রুবি আক্তারকে হত্যা করা হয়েছে।
স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১২ বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর থেকে তাদের সংসারে দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়। বিয়ের ২ বছর পর রাহাত নামে তাদের একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। ১১ মাস আগে তাদের দ্বিতীয় পুত্র সন্তান রেদয়ানের জন্ম হয়।
রুবি আক্তারের ভাই মো. রাসেল জানান, তার দুলাভাই স্বপন বেপারীর সঙ্গে আরেক মেয়ের পরকীয়া সম্পর্ক চলে আসছিল। বিষয়টি জানার পর স্বামীর পরকীয়া সম্পর্কে বাধা দেন তার বোন রুবি। এ নিয়ে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ চলছিল। উভয় পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়। স্বপন বেপারীকে অন্য মেয়ের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক ত্যাগ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি।
বুধবার (১৩ জুলাই) রাতে স্বামী স্বপনের মোবাইলে এক মেয়ের অশ্লীল ছবি দেখতে পান রুবি। এ নিয়ে স্বামীর সঙ্গে রুবির বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে স্ত্রীকে পিটিয়ে এবং শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন স্বপন বেপারী।
রাসেল বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে রুবি ফোন দিয়ে ছবির বিষয়টি জানিয়েছিল। বাবা-মায়ের সঙ্গেও কথা বলতে চেয়েছিল। বাবা-মা ঘুমিয়ে পড়ায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। আজ (বুধবার) ভোরে ভাগ্নে রাহাত ফোন দিয়ে জানায় মারধর করে তার মাকে বাবা মেরে ফেলেছে। এরপর স্থানীয় লোকজন নিয়ে ওই বাড়িতে গেলে বোন রুবির মৃতদেহ দেখতে পাই। দুলাভাই স্বপন বেপারী লোকজন দেখে পালিয়ে যান।’
নিহতের মা নেহেরুন বেগম জানান, বিয়ের পর থেকে স্বপন তার মেয়েকে বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য বিভিন্নভাবে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছিল।
নিহতের বাবা বজলু হাওলাদার বলেন, ‘ঘটনার কয়েকদিন আগে মেয়ের স্বামী সরাসরি তার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা দাবি করেন। সাধ্যমতো কিছু টাকাও দিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার মেয়েকে স্বপন হত্যা করেছে। এরপর ঘরের আড়ার সঙ্গে মৃতদেহ ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা করেছে বলে নাটক সাজিয়েছে। আমি এ ঘটনায় স্বপনের গ্রেফতার ও বিচার দাবি করছি।’
তবে স্বপন বেপারীর বাবা আকবর বেপারী জানান, স্বপনের সঙ্গে রাতে রুবির ঝগড়া হয়েছিল। এ কারণে হয়ত অভিমান করে রুবি ঘরের আঁড়ার সঙ্গে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তাকে কেউ হত্যা করেনি। ভয়ে স্বপন বাড়ি থেকে পালিয়েছে।
উজিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মমিন উদ্দিন জানান, নিহতের গলা ও পায়ের গোড়ালিতে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সারাবাংলা/একে