Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সংবাদ সম্মেলনে অধ্যক্ষ বললেন ‘এমপি আমাকে মারেননি’

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৪ জুলাই ২০২২ ২২:৪৮

রাজশাহী: গোদাগাড়ী উপজেলার কলেজ অধ্যক্ষকে হকিস্টিক দিয়ে পেটানোর অভিযোগ উঠেছিল রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে। এবার সেই অভিযোগ অস্বীকার করেরেছেন কলেজ অধ্যক্ষ। এমপির সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি জানান, এমপি সাহেব মারেননি। অন্য কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কিতে তিনি আহত হয়েছিলেন।

অভিযোগ ওঠে, গত ৭ জুলাই সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে চড়-থাপ্পড়, কিল-ঘুষি মেরেছেন এবং হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়েছেন। সেলিম রেজা গোদাগাড়ীর রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ। বিষয়টি জানাজানি হয় বুধবারে (১৩ জুলাই)। এরপর তিনি লাপাত্তা থেকে বৃহস্পতিবার দুপুরে (১৪ জুলাই) এমপির ডাকা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হন।

বিজ্ঞাপন

অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে মারধরের ঘটনায় সারাদেশে নিন্দা আর প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এরপর গতকাল বুধবার একটি তদন্ত কমিটি করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবাদ সম্মেলনে সংসদ সদস্যের পাশে বসে লিখিত বক্তব্যে অধ্যক্ষ সেলিম রেজা বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে আমরা কয়েকজন অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ ইদ উপলক্ষে এমপি সাহেবের অফিসে দেখা করতে গিয়েছিলাম। এ সময় আমাদের অধ্যক্ষ ফোরামের কমিটি গঠন এবং অভ্যন্তরীণ অন্য বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। একপর্যায়ে এমপি মহোদয় আমাদের নিবৃত্ত করেন। এছাড়া আর কোনো ঘটনা ঘটেনি।’

তর্কবিতর্ক ছাড়া অন্য কোনো ঘটনা যদি নাই ঘটে, তাহলে চোখের নিচে কালশিরা, শরীরের বিভিন্ন যায়গায় আঘাতের চিহ্ন, ঘটনার রাতে চিকিৎসকের কাছেই বা কেন গেলেন- অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে সাংবাদিকেরা এমন প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, ‘নিজেদের মধ্যে একটু ধাক্কাধাক্কি হয়েছিল।’

বিজ্ঞাপন

সাংবাদিকেরা বারবার অধ্যক্ষের কাছে জানতে চান, কী এমন ঘটনা নিয়ে সংসদ সদস্যের সামনে অধ্যক্ষরা নিজেরা মারামারিতে লিপ্ত হলেন? কিন্তু সেলিম রেজা কোনো সদুত্তর দিতে পারছিলেন না। সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী তখন পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করছিলেন।

আপনার হাতেও আঘাতের চিহ্ন আছে। সে চিহ্ন আপনি দেখাচ্ছেন না কেন? অধ্যক্ষকে এমন প্রশ্ন করলে তিনি একেবারে চুপ হয়ে যান।

পরে মাটিকাটা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল আউয়াল রাজু বললেন, ‘ইদ উপলক্ষে অধ্যক্ষ ফোরামের পক্ষ থেকে সংসদ সদস্যের সঙ্গে দেখা করার জন্য তিনিই সব অধ্যক্ষকে ফোন করে ডাকেন। সেখানে ফোরামের কমিটি গঠন এবং আয়-ব্যয়ের হিসাব নিয়ে তর্কবিতর্ক হয়। একপর্যায়ে তিনিই অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে ধাক্কা দেন। এসময় সেখানে থাকা আলমারি ও চেয়ারে ধাক্কা খেয়ে সেলিম রেজা আহত হন।’

সংবাদ সম্মেলনে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী দাবি করেন, তাকে ঘিরে বারবার চক্রান্ত হয়। আর এর পেছনে থাকেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। ওমর ফারুক চৌধুরী যখন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন, তখন সম্পাদক ছিলেন আসাদ। তিনি বলেন, ‘আসাদ আমাকে রাজাকারের ছেলে বলেছে। আমি তিনবারের এমপি হয়েও নাকি নৌকায় ভোট দেই না। এসব বলে।’

আসাদই অধ্যক্ষকে মারধরের অপপ্রচার করেছেন বলে অভিযোগ করেন ওমর ফারুক চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এই অপপ্রচারের কারণে তিনি সামাজিক, রাজনৈতিক এবং পারিবারিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়েছেন। তার মানহানি ঘটেছে। তিনি এর বিচার দেন সাংবাদিকদের কাছেই।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘সাংবাদিকেরা তো শুধু অধ্যক্ষের চোখের নিচের কাল দাগ দেখেছেন। হাত আর কোমর তো দেখেননি। অধ্যক্ষ আমাকে দেখিয়েছেন। আমাকে ইদের দিন রাত সাড়ে ১০টায় ফোন করেছেন। কল রেকর্ড দেখলেই সেটা পাওয়া যাবে। ফোন করে বলেন, এমপি তাকে মারধর করেছেন। আমি বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি শফিকুর রহমান বাদশাকে জানালাম। তিনি বললেন, দেখি কী করতে পারি। পরে আমি কয়েকজন মিলে অধ্যক্ষের বাসায় গেলাম। বউ-বাচ্চার সামনে তার চোখে পানি এল। তখন অধ্যক্ষ আমার সহযোগিতা চান। আমি বলি, আমিও তো আওয়ামী লীগ করি। তবে আপনি আইনগত সহায়তা চাইলে থানায় কথা বলব।’

আসাদ বলেন, ‘আমি চলে আসার পরে ফোন করে অধ্যক্ষ আবার বলেন, সোহেল চেয়ারম্যান (গোদাগাড়ীর দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল) এসেছিলেন। হোয়াটসঅ্যাপে এমপিকে ফোন দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছেন। এমপি তাকে বলেন যে, রাগের মাথায় একটা ঘটনা ঘটে গেছে। কোনো একসময় এসো, ক্ষমা চেয়ে নেই। তখন আমি সেলিম রেজাকে বলি, তাহলে ঠিক আছে। এটা আপনার বিষয়।’

আসাদ বলেন, ‘এমপি সংবাদ সম্মেলন করলেন। আমি নিউজগুলো আগে দেখি। তারপর শনিবার আমিও সংবাদ সম্মেলন করব। সে কোন কোন দল করেছে, সে তিনবার নৌকায় ভোট দেয়নি, তার ডকুমেন্ট দিয়ে দিব। সে তো শহরের ভোটার। কোনো সাংবাদিক তো তাকে ভোট দিতে দেখেনি। তাহলে ভোট কোথায় দিল? আমি তার মিথ্যাচারের জবাব দিব।’

উল্লেখ্য, সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে মারধর করেছেন বলে গত বুধবার খবর ছড়িয়ে পড়ে। এতে বলা হচ্ছে, গোদাগাড়ীর একটি কলেজের অধ্যক্ষের স্ত্রীকে নিয়ে রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের কয়েকজন শিক্ষক আপত্তিকর মন্তব্য করেন। এর বিচার করেননি অধ্যক্ষ সেলিম রেজা। ওমর ফারুক চৌধুরী ওই আপত্তিকর কথাবার্তার অডিও শুনিয়েই অধ্যক্ষকে পেটাতে থাকেন। তবে ওমর ফারুক চৌধুরী, অধ্যক্ষ সেমিম রেজা এবং সেদিন উপস্থিত থাকা অন্য অধ্যক্ষরা সংবাদ সম্মেলনে তা অস্বীকার করলেন। অডিও রেকর্ডটি ওমর ফারুক চৌধুরী শোনেননি বলেও সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি রাজশাহীতে
শিক্ষককে মারধরের ঘটনা তদন্তে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার কমিটির সদস্যরা রাজশাহী এসে পৌঁছেন।

কমিটির প্রধান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা কাজ শুরু করেছি। বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলছি। তদন্ত কাজ শেষে আমরা আপনাদের জানাব।’

সারাবাংলা/এমও

অধ্যক্ষ এমপি টপ নিউজ মারেননি সংবাদ সম্মেলন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর